July 20, 2011

“..না বলা কথা..”

“..না বলা কথা..”


“..প্রথম প্রেমের প্রথম অভিমানে
জল টলমল করা দু’চোখের মতো
সারিবদ্ধ মেঘ গর্ভবতী যখন আকাশে
রাতের আঁধারের নিমন্ত্রনে সাড়া দিয়ে
হেঁটে যায় তরুণ কবি এক উদ্ভ্রান্ত
আলো-ছায়ায় শহরের নগ্ন পিঠ মাড়িয়ে

ভেতরে তার নিদারুণ আকুতি
রক্তকণায় ফোটে এক একটি সম্পূর্ণ শব্দ
কখনও পাখি হয়ে উড়ে যাচ্ছে
কখনও গন্ধ হয়ে ভেসে যাচ্ছে
অসহায় কবি জানে জন্ম নেবে
আজ একটি কবিতা
যেখানেই দৃষ্টি প্রসারিত করা হয়
শব্দ দেখা যায়, বর্ণ দেখা যায় সেখানেই
রাজপথে বর্ণ, ল্যাম্পপোস্টের শরীর বেয়ে
গলে গলে পড়ছে অক্ষর;
ডাস্টবিনের ঢাকনার উপরে ছন্দ
দেওয়ালের পোস্টারগুলোতে শব্দ
নারকেল গাছ, আম, কাঁঠাল,
পাথরকুচি, ক্যাক্টাস -
নার্সারীর ঐ চারাগাছগুলোতে;
ঝাঁপি ফেলা সবজির দোকানগুলোতে
বাঁ হাতের ঘড়ির কাঁটায়
শার্টের বুক পকেটে, মানিব্যাগে
চারপাশে শুধু বর্ণ, শব্দ, ছন্দ
তার ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে উঠে
আসছে নানা রংয়ের শব্দ, বর্ণ

সে অসহায়ের মতো তাকিয়ে
দেখে সংবাদ শিরোনামের মতো
লাইন ধরে দ্রুত চলে যাচ্ছে শব্দ
একের পরে এক
নির্জনতা, শূন্যতা, কাতরতা
দলা পাকিয়ে ভেতর থেকে তার
জন্ম দিচ্ছে শব্দ, বর্ণ, ছন্দ
হঠাৎ হঠাৎ দু’একটি লাইন দেখা যায় -

‘মানুষ আমি
আমার ভুল থাকবেই’

আবার সরে যায় খণ্ডিত শব্দ
পেঁচানো সাপ হয়ে, ছিটকে পড়া বাদুড় হয়ে
কখনো ঘরের কোণার মতো চতুর্ভুজ শব্দ
কখনো রঙ্গীন বেলুনের মতো প্রায় গোল
আবার শব্দের লেজে শব্দ
যেন এক শব্দের ধূমকেতু
হঠাৎ হঠাৎ দু’একটি লাইন দেখা যায়
দূর বারান্দায় জ্বলা বাতির মতো -

‘আমি পুরুষ
আমার চরিত্রে ত্রুটি থাকবেই’

নিজ শরীর বড়ো অচেনা লাগে
অনুভূতিহীন, রূঢ় এবং
বড়ো বেশী ধীরগতির যেন সবকিছু;
হৃদপিণ্ড কাঁপছে অচেনা তালে
মাথার ভেতরে লক্ষ লক্ষ ঘড়ির সম্মিলিত টিকটিক
উপচে আসছে, দলবেঁধে আসছে
ভেতর-বাহিরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছিঁড়ে
গৃহীত-বর্জিত সব কিছু চাপা পড়ছে
ভেতর থেকে শব্দ আসছে
গহীন থেকে বর্ণ আসছে

আলো-আঁধারি চোখের পর্দা জুড়ে
বিবশ আঙুল, স্পর্ধিত রক্তে
উঠে আসছে শব্দ, বর্ণ, ছন্দ
প্রবল ব্যাথা, কাতরতা,
অশান্ত উচ্ছ্বাস, স্পর্ধা
ভেতর থেকে ঠেলে এক একটি লাইন
তুলে তুলে দিচ্ছে উপরে, আরও উপরে..

অচেনা শরীরে, অপার্থিব অনুভূতির
উদ্ভ্রান্ত তরুণ কবি এক
হেঁটে যায় আঁধারে, পথে
প্রসব-বেদনা কতো যে ভয়ংকর তীব্র
নারী ও কবি ছাড়া
কে আর জেনেছে কবে?..”