October 28, 2012

..‘এলোমেলো ১ - ৬’..

..‘এলোমেলো-১’..

“..আমার কাছে উৎসব মানে
ঠোঁটে ছোঁওয়া তোর ঠোঁট
আমার কাছে উৎসব মানে
হাতের মুঠোয় তোর বুক
আমার কাছে উৎসবের মানে
জানে অন্তর্যামী
আমার কাছে উৎসবের মানে -
তোর ভেতরে আমি!..’’

..‘এলোমেলো-২’..

“..মাঝরাতে ভাঙ্গে ঘুম
চেয়ে দেখি আমি;
পাশে শুয়ে – সব হারিয়ে
পাওয়া আমার ‘তুমি’!..’’

..‘এলোমেলো-৩’..

“..এভাবে যেও না ছুঁয়ে
একটু একটু করে;
কায়াতে রয় না ছায়া
নীল জমে গভীরে!..’’

..‘এলোমেলো-৪’..

“..ধরো, একদিন ইচ্ছে হল
দুজনে মিলে চা খেতে,
তোমার ঠোঁট কি পেয়ালা হবে
উষ্ণ বাষ্পে – আমার চুমুকে?..’’

..‘এলোমেলো-৫’.. 

“..আসবি যেদিন ফিরে তুই
দেখবি আমি আর শূন্য নই;
তোর ঠোঁটে ঠোঁট রেখে বলবো –
চল একসাথে বুড়ো হই!..’’

..‘এলোমেলো-৬’..

“..নাইবা হলাম হাতের মুঠোয়
দুহাত দিয়ে ধরা;
হবো ঠিকই চেনা অধরে
অচেনা জলধারা !..’’

October 17, 2012

..‘এলোমেলো ১ - ৫’..

..‘এলোমেলো ১ - ৫’..

..‘এলোমেলো-১’..

“..আমার বন্ধ চোখের পাতায়
তোকে ছুঁয়ে যেতাম অহর্নিশ; নিটোল
আজকাল আমি ভীষণ নিদ্রাহীন –
তোকে ছোঁবো কিভাবে, বল?..’’

..‘এলোমেলো-২’..

“..কৃষ্ণ রাত আর রাধা জোছনা
পাইনি খুঁজে
কোনও নারীর চোখে
তাই ভালোবাসা হলো না !..’’

..‘এলোমেলো-৩’..

“..ডাক্তার কি জানে – তোমার ঘুমন্ত মুখ
আমার কতো প্রিয়?
আমি জানি আমার অনিদ্রার কারণ;
ঘুমের ঔষধ দিতে তাকে মানা করে দিও !..’’

..‘এলোমেলো-৪’..

“..একটু একটু শীত পড়েছে
রাস্তায় জমছে কুয়াশা;
চাদর কেনার টাকা তো নেই
তোমার আলিঙ্গন-ই শেষ ভরসা !..’’

..‘এলোমেলো-৫’..

“..কতদিন হয়ে গেল প্রিয়তমা
মুঠোফোনে কেউ জানতে চায় না –
আজ দুপুরে আমি
কিছু খেয়েছি কি না !..’’

October 11, 2012

..‘যেখানেই ছুঁড়ে দিই দৃষ্টি আমার পিপাসার্ত, বন্য’..

..‘যেখানেই ছুঁড়ে দিই দৃষ্টি আমার পিপাসার্ত, বন্য’..

“..যেখানেই ছুঁড়ে দিই দৃষ্টি আমার পিপাসার্ত, বন্য
আসে ফিরে পোষা পাখির মতো সাঁঝের আগেই কম্পিত, সন্ত্রস্ত!

দৃষ্টি আমার সূর্যালোকে খুঁজে পেতে আলোক ধ্রুব
ডানা মেলে দেয় দিগন্ত জুড়ে নাড়িছেঁড়া কোটর জড়সড়
অন্ধকার গলিপথ অথবা রাজপথ তার দুপাখার ছায়ায়
ডালিমের মতো পাঁজর ফাটিয়ে আন্তর দৃশ্যাবলী দেখায়

অজস্র প্রার্থনালয় অলিতে-গলিতে বিলাসবহুল তাদের সজ্জা
সবকিছুই রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে;
অপর্যাপ্ত শুধু
প্রার্থনারত দুহাতের সংখ্যা!

কেন এতো বিলাসবহুল; এতো বহুতল; এতো সংখ্যক প্রার্থনালয়?
কেন এতো শূন্যতা; এতো পদশব্দহীনতা; এতো নির্জনতার আশ্রয়?

বাংলার মানুষতো এতো ধনী নয়
দান করার মতো এতো বিপুল টাকা
কখনওই ছিলনা তাদের;
শুধু শারীরিক শ্রমই যদি দেবার মতো থাকে
কোথা থেকে আসে এতো বিপুল টাকা
রাজকীয় এসব প্রার্থনালয় স্থাপনের?

দৃষ্টি আমার খুঁজে বেড়ায়
উড়ে বেড়ায় অক্লান্ত পাখায় অবিরাম
দ্বিধান্বিত হয়ে কাঁপে থরথর, পাওয়া
উৎসে রয়েছে খুব কমই সততার শ্রম
সিংহভাগে কালোটাকার নাম!

ওদের চেনে দৃষ্টি আমার; চেনে পলকহীন
এবং পলকফেলা প্রতিটি চোখ
ওরা ছড়িয়ে আছে অসীম চোরাবালি
গ্রাস করছে ছোট্ট সবুজ পোকা,
হলুদ ফুলের গুচ্ছ; সতেজ ভাঙা ডাল
ছায়াঘেরা বাগান, কর্মব্যাস্ত শহর
সম্ভাবনাময় দেশ, আকাঙ্ক্ষিত বাংলার মহাকাল!

ওরা বর্ণান্ধ বলে ওদের কালোটাকাকে
সাদা করতে চায় প্রার্থনালয়ে ঢেলে
ওরা জন্মান্ধ বলে ওদের কালোটাকায়
নির্জীব রংধনু বসায় প্রার্থনালয়ের দেয়ালে!

অজস্র প্রার্থনালয় অলিতে-গলিতে
এ তো নয় আমাদের অপরাধবোধের প্রকাশ
অসংখ্য বিলাসবহুল প্রার্থনালয় গলিপথে-রাজপথে
এ তো শুধুই স্বার্থবাজ কালোটাকা উপার্জনকারীদের বিকাশ!

ছুঁড়ে দেয়া দৃষ্টি আমার পিপাসার্ত, বন্য
ফিরে আসা সাঁঝের আগেই কম্পিত, সন্ত্রস্ত
আড়চোখে তাকায় আমার পিতামহের হাতে গড়া
অজপাড়াগাঁয়ের জীর্ণ প্রার্থনালয়ের দিকে;
প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়, ইতস্তত এগিয়ে যায়
থমকে যায় সুললিত পবিত্র কোরাসে
চমকে যায় অগণিত প্রার্থনারত
চোখের জলে ভেজা হাতের জোড়া দেখে

আলপথে খুব কমই রয়েছে দামি জুতার ছাপ
এখানে এখনও কম – লালাঝরা লোভাতুর জিভ
এখানে এখনও কম – কালোটাকার পাপ!..’’

October 04, 2012

..‘কথোপকথন এবং’..

..‘কথোপকথন এবং’..

“..: হ্যালো
: কেমন আছেন?
: আগের মতোই।
: আগে কেমন ছিলেন?
: এখন যেমন।
: এখন কেমন?
: আগের মতোই।
: এই উত্তরগুলো কি কখনই বদলাবে না?
: বদলাচ্ছে ঠিকই, শুধু তুমি বুঝতে পারছ না।
: শুরু হয়ে গেল আধ্যাত্মিকতা!
: ঠিক আছে, থামিয়ে দিলাম।
কেমন আছে মা, বাবা আর তোমার ছোট্ট বাগান?
: ভালো।
: কেমন আছে সে, শুনেই এসেছি শুধু কখনও দেখিনি যাকে?
: ভালো।
: শুধু ভালো নাকি বেশ ভালো?
: বেশ ভালো।
: কি করছে সে এখন?
: একটি প্রাইভেট ফার্মে আছে।
: তো, কবে নিচ্ছ সামাজিক বন্ধনের চুক্তি সনদপত্র দুই জোড়া হাতে?
: শীঘ্রই।
: তুমি কি আমায় নিমন্ত্রন জানাবে, তোমার বিয়েতে?
: আমি আপনাকে অসংখ্যবার বলেছি আমি বিয়ে করবো পালিয়ে;
সুতরাং নিমন্ত্রন পাবেন না।
: আমি যতদূর জানি তুমি ভীষণ সামাজিক।
: তো?
: তো মানে তোমাকে দিয়ে ওটা কখনই হবে না।
: কেন?
: তুমি চাও ‘বিয়ে’, যা আমাদের সমাজে ‘বৈধ সামাজিক অনুমোদন –
জোড়া বেঁধে থাকার; একই ছাদের নিচে’।
: সবাই তাই চায়।
: সবাই তাই চায়? কতজনের ভেতরে প্রবেশ করেছ তুমি?
: কি আশ্চর্য! প্রবেশ করতে হবে কেন? আমি তাদের মুখে শুনেছি।
: মানুষ বলে এক; চায় আর এক।
: যেমন?
: যেমন – কখনও কি তুমি ভেবে দেখেছ, যদি সাধ্য থাকতো
কতবার আমাদের মায়েরা সংসার ছেড়ে পালাতো?
: পালিয়ে তারা কোথায় যাবে?
: এইতো বুঝতে পেরেছ! যাবার জায়গা নেই বলেইতো
বাংলার নারীদের চোখ এতোটা অশ্রুসিক্ত।
: বাদ দেন এসব। ভালো লাগছে না শুনতে।
আচ্ছা, ধরুন – আমার বিয়ে, কি পাব উপহার আপনার পক্ষ থেকে?
: ১৫০ টা দীপ্ত জোনাকি।
: মিথ্যা।
: একটা দুই পা ওয়ালা খাট।
: ডাহা মিথ্যা।
একটা অষ্টমী চাঁদের ফটোকপি।
: আবারো মিথ্যা।
: এগুলো যে মিথ্যা তা তুমি বুঝলে কিভাবে?
: বুঝি। কল্পনা নেই আপনার বাহিরের কথায়
যেমনটা থাকে ভেতরের কথাতে।
: হুমম। আচ্ছা, যেদিন তোমার বিয়ে সেদিন নিশ্চয়ই তুমি অনেক সাজুগুজু করবে?
: অবশ্যই।
: সেদিন নিশ্চয়ই অনেক মানুষ আসবে?
: অবশ্যই।
: তুমি নিশ্চয়ই অনেক সুখী থাকবে?
: অবশ্যই।
: বাবা-মা নিশ্চয়ই অনেক আনন্দিত থাকবে?
: অবশ্যই।
: তুমি কি জানো, তখন হয়তো একজন অচেনা লোক এসে তোমার নাম খোঁজ করবে?
: কেন?
: কারন – তোমাকে একটি পার্সেল নিতে হবে।
: কিসের পার্সেল?
: তোমার বাবা হয়তো লোকটিকে বিদায় করে দিতে চাইবে।
: তারপর?
: তারপর কেউ একজন তোমাকে এই পার্সেলের কথা জানাবে।
: তারপর?
: তারপর তুমি লোকটিকে কাছে ডাকবে।
: তারপর?
: তারপর লোকটি তোমাকে পার্সেল গ্রহনের রসিদে সিগনেচার করতে বলবে।
: তারপর?
: তারপর তুমি পার্সেলটি দেখতে চাইবে।
: তারপর?
: লোকটি তোমাকে অডিটোরিয়ামের বাইরে যেতে বলবে।
: (নীরবতা)
: তোমার বাবা-মা তোমাকে মানা করবে।
: (নীরবতা)
: অডিটোরিয়াম ভর্তি লোকজন অবাক হয়ে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকবে।
: (নীরবতা)
: তবুও তুমি বাইরে বের হয়ে আসবে এবং দেখবে –
: কি?
: একটি বিশাল ট্রাকের উপর শেকড়শুদ্ধ একটি বিশাল কৃষ্ণচূড়া গাছ!
উষ্ণ রক্তে ধোওয়া লাল লাল অজস্র ফুলে
ছেয়ে আছে তরুণ একটি শেকড়শুদ্ধ বিশাল কৃষ্ণচূড়া গাছ!
: (নীরবতা)
: হয়তো তখন তোমার হবু বর তোমাকে ফিরিয়ে নিতে আসবে।
: (নীরবতা)
: হয়তো অভিমানের অভিনয় করতে গিয়েও
তোমার জলভরা দু চোখ দেখে থামবে।
: (নীরবতা)
: হয়তো তুমি,
তুমি হয়তো দু হাতে মুখ ঢাকবে।
: আপনি কি চান, বাকি জীবনও কাটুক আমার শুধুই কেঁদে কেঁদে?
: নাতো!
: আমি চাই উঠুক বেড়ে
নিঃসঙ্গ একটি কৃষ্ণচূড়া –
বৃষ্টি নয়;
পান করে শুধু
তোমার অশ্রুধারা !
: (সম্পূর্ণ নীরবতা)..’’