December 27, 2012

..‘এবং আমি মৃত্যুকেও করবো আলিঙ্গন’..

..‘এবং আমি মৃত্যুকেও করবো আলিঙ্গন’..

“..এবং আমি মৃত্যুকেও করবো আলিঙ্গন
কথা দাও – ভীষণ প্রাণবন্ত এই আমার কিছু শর্ত
তুমি করবে পূরণ;
প্রতিশ্রুত নই, আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ
সব অধিকার ছেড়ে মৃত্যুকেও করবো আলিঙ্গন!

যদি চাও বিষপানে হোক মৃত্যু আমার
তবে তাই হোক – কথা দাও
ধারণ করবে হেমলক অধর তোমার
আমি আকণ্ঠ পান করবো সেই পেয়ালা
তোমার অধরে রাখা আমার ওষ্ঠের প্রতিটি ক্ষণ
আমি করবো উদযাপন –
স্বপ্নের মতো, তোমার অস্তিত্তের মতো
ধমনি-শিরায় বিষ ছড়াবে তখন, অতঃপর
মৃত্যুকে আমি করবো আলিঙ্গন!

যদি চাও তুলে নেয়া দুচোখের রক্তপাতে মৃত্যু আমার
তবে তাই হোক – কথা দাও
মেলে ধরবে প্রতিটি পাপড়ি তোমার
যেন বর্ষায় স্নাত কদম, যেন আঁজলায় ধরা রঙ্গন
দু’চোখ আমার তুলে নিও তুমি
রক্ত না হয় প্রাপ্তি হয়ে ঝরবে
অঝোর ধারায় তখন, অতঃপর
মৃত্যুকে আমি করবো আলিঙ্গন!

যদি চাও ছোঁড়া পাথরে হোক মৃত্যু আমার
তবে তাই হোক – কথা দাও
আমার আপাদমস্তক লক্ষ্য করে
উড়ে আসা প্রতিটি পাথরে
স্পর্শ থাকবে তোমার, গন্ধ থাকবে তোমার
আমি পলকফেলা চোখে
ছুঁড়ে দেয়া পাথররাজিকে জানাবো স্বাগতম
যেন তারা তোমার খোঁপা থেকে খসে পড়া
কাঁঠালচাঁপার বর্ষণ, অতঃপর
মৃত্যুকে আমি করবো আলিঙ্গন!

যদি চাও শ্বাসরোধ করে হোক মৃত্যু আমার
তবে তাই হোক – কথা দাও
অসংখ্য মানুষের করুণায় বেড়ে উঠা আমার এ কায়া
আন্তর ভালোবাসায় জড়াবে শরীরে তোমার
ছড়ানো চুল ঢেলে দেবে আঁধার দু’চোখে
উদ্ধত বুক বিদ্ধ করে হৃদয়
বাড়াবে রক্ত সঞ্চালন
তোমার ঠোঁটে উচ্চারিত আমার নাম অস্ফুট
দখল করবে বিস্মিত শ্রবণ
উষ্ণ শিশির তোমার বুকের ত্বকে
বেয়ে পড়বে যখন; বাঁধনহীন বাঁধন হবে
তোমার জড়ানো বাহু তখন
মুখ লুকানো তোমার বুকে দারুন তৃপ্ত আমার
হবে না নিঃশ্বাসের প্রয়োজন
অতঃপর,
মৃত্যুকে আমি করবো আলিঙ্গন

বিশ্বাস করো গুনগুন –
প্রতিশ্রুত নই, আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ
তোমাকে দিয়ে যদি হয় আয়োজন
ভীষণ অযাচিত মৃত্যুকেও আমি করবো আলিঙ্গন!..’’

December 25, 2012

..‘এলোমেলো ১-৫’..



..‘এলোমেলো ১-৫’..
 
..‘এলোমেলো-১’..
 
“..বাংলার শীত পূর্ণতা পায়
কুয়াশা ভিজিয়ে আঁচলে
আমার যেমন রাত আসে
মুখ লুকিয়ে তোর বুক তলে!..’’
 
..‘এলোমেলো-২’..

“..তোমার সলজ্জ সাধ
পূরণে আমি অপারগ
মুখ ঢেকেছে চুলের আঁধারে
ঠোঁটেতে তোমার আঙুলের নখ!..’’
 
..‘এলোমেলো-৩’..
 
“..তারপরেও অপেক্ষায় আছি,
জমে থাকা নোংরা উপচে পড়ে যদি হয় নদী;
তারপরেও অপেক্ষায় আছি,
পথ ভুলে আমার এ ভাঙা কুটিরে
তুমি আসো যদি!..’’
 
..‘এলোমেলো-৪’..

“..কোথাও আমি হারাইনি তো
আছি, ঠিক যেখানে ছিলাম;
বন্ধ যদিও ঘড়ির কাটা
তবু দুলছে পেন্ডুলাম!..’’
 
..‘এলোমেলো-৫’..
 
“..তবুও দৃষ্টি আমার তোমাকে ঠিকই খুঁজে নেবে
হয়তোবা ভেসে ভেসে, হয়তোবা ডুবে
হয়তোবা খুঁজে পাবে ঠোঁট তোমার অথবা স্তন;
হয়তোবা অনিমেষকাল, হয়তোবা কিছুক্ষণ!..’’

December 23, 2012

..‘আমি বিশ্বাস করিনা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে ২১শে ডিসেম্বর’..

..‘আমি বিশ্বাস করিনা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে ২১শে ডিসেম্বর’..

“..আমি বিশ্বাস করিনা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে ২১শে ডিসেম্বর
যা ইচ্ছে লিখা থাকুক মায়া সভ্যতার ইতিহাসের পাতায়
এখনও কম্পিত আঙুল স্পর্শ করেনি লাজুক আমার প্রিয়ার অধর
এখনও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আশায় ভিজছে কুয়াশায় বাংলার মাঠ প্রান্তর

এখনও নির্ভীক, নিঃসঙ্গ চড়ুই পাল্লা দেয় দাঁড়কাকের পিছু
ছিনিয়ে আনতে তার সন্তান দারুণ ঐক্যবদ্ধ গোষ্ঠীর দলনেতার ঠোঁট থেকে
এখনও বস্ত্রহীন টোকাই শিশু মাঘের সকালে সূর্যকে ভেংচি কাটে
এখনও এদেশের বিভিন্ন টাকার নোটে জাতীয় অন্য নেতাদের মুখায়ব আসা বাকি
আমি বিশ্বাস করিনা ২১শে ডিসেম্বর ধ্বংস হয়ে যাবে এ পৃথিবী

এখনও বাংলার ঘরে ঘরে নবজাতকের নামে
শোভা পাচ্ছে আরবি, হিন্দি, ইংরেজি অক্ষর
এখনও দুর্নীতির কালো টাকায় কেনা রং ফর্সাকারী ক্রিমে
অচেনা রয়ে গেছে দেশদ্রোহীদের ঘরদোর
আমি বিশ্বাস করিনা, কখনোই না
এতো শীঘ্রই আর যাই হোক
পৃথিবী ধ্বংস হতে পারেনা!

এখনও জ্বলে ওঠেনি সেসকল বাতি
দীর্ঘ ৪১ বছরের ইতিহাস একটু একটু করে
যাদের করে আসছে লালন
এখনও রয়েছে বাকি পৃথিবীকে দেখানোর
দুর্যোগপ্রবণ দেশে আলোর প্লাবন

এখনও রয়েছে বাকি অনেক জমানো দেনা
দায়বদ্ধতার জোয়াল কাঁধ থেকে নামিয়ে
রয়েছে বাকি চোখ মেলে দেখা একটি সুন্দর ভোর
এখনও কম্পিত আঙুল স্পর্শ করেনি লাজুক আমার প্রিয়ার অধর
এখনও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আশায় ভিজছে কুয়াশায় বাংলার মাঠ প্রান্তর
আমি বিশ্বাস করিনা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে ২১শে ডিসেম্বর!..’’

..‘এ শহরে আমাদের রাত কেটে যায় আধেক ঘুমে’..

..‘এ শহরে আমাদের রাত কেটে যায় আধেক ঘুমে’..

“..এ শহরে আমাদের রাত কেটে যায় আধেক ঘুমে
সবুজ পায়রার বুক চিরে আনবো বলে
নীল রক্ত; ছুটে চলা সম্মুখে
ভেজা মাটি, উষ্ণ জল ছুঁয়ে যাওয়া বাতাসে
সুরভিত কাঁপন ভুলে রাত কেটে যায় আধেক ঘুমে!

বড়ো অসুখী, অপূর্ণ ব্যক্তিগত এবং দাম্পত্য জীবন
পারিবারিক জীবনের পাপোষতলে পিষ্ট অপ্রাপ্তির সূর্যমুখী
সৌন্দর্যের খোঁজ করে পথচলা নরনারীর দেহে চোখ তুলে
স্বপ্ন দেখার পর্যাপ্ত সময় অনুপস্থিত দেয়াল ঘড়ির কাঁটায়
দৃষ্টি থেকে বৃষ্টি শুকিয়ে গেলে পরে অনেক দাম দিয়ে
কেনা হয় স্বপ্ন; স্বাপ্নিক চোখ; স্বপ্নের বসন্ত – আড়ালে
থেকে থেকে গুমরে কাঁদে স্বপ্নের প্রিয়তমা
তারা নয়; এখানে দারুণ মূল্যবান স্বপ্নদের দাইমা
বংশানুক্রমিকভাবে নিদ্রাহীনতার যথার্থ উদাহরণ
এ শহরে আমাদের রাত কেটে যায় আধেক ঘুমে
পূর্ব নির্ধারিত এখানে আমাদের পথ, পথে হাঁটা, পথের সঙ্গী
নীরব সংগীতের মতো মৃত, দুর্লভ স্বার্থহীন চোখ
নেই মূর্ছনা, নেই আছড়ে পড়া, নেই থরোথরো কাঁপা ঠোঁট
নেই নিটোল উচ্ছ্বাস, নেই আন্তর হাহাকার, নেই স্বপ্নে গর্ভবতী দুচোখ
স্বপ্নহীন রাত এ শহরে আমাদের কেটে যায় আধেক ঘুমে
স্বপ্নহীন দিন এ শহরে আমাদের শুরু হয় আধেক ঘুমে
স্বপ্নহীন জীবন ছুটে চলে অবিরাম স্বপ্নহীন সম্মুখে
স্বপ্নহীন প্রিয়ার বন্ধ্যা দু’ঠোঁট পড়ে রয় স্বপ্নহীন আমার অধরে!..’’

December 14, 2012

..‘আমার দুচোখে গাঁথা স্বপ্ন’..

..‘আমার দুচোখে গাঁথা স্বপ্ন’..

“..আমার দুচোখে গাঁথা স্বপ্ন, স্বপ্নে দুচোখ আছে ভরে
নিদ্রাহীন আমার দুচোখ শুধু স্বপ্ন জমা করে

আমি স্বপ্ন দেখছি এ শহরের অলিতে-গলিতে
গজিয়ে ওঠা অজস্র ধর্ম ব্যবসায়ীদের আশ্রম ভেঙে পড়ছে
অদৃশ্য হচ্ছে, মিশে যাচ্ছে মাটির ভেতরে
সেখানে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে ছায়াঘেরা সাজানো বাগান
প্রবেশ পথে সাতরঙা ফুলের দোকান
প্রতিনিয়ত সেখানে সুরভিত বসন্ত, গুঞ্জরিত প্রেমপূর্ণ জুটি
স্বপ্ন দেখছি কবিতার মতো ঝরে ঝরে পড়ছে
নিটোল, অমল, স্বপ্নিল শব্দগুচ্ছ সংসদ অধিবেশনে
লক্ষ লক্ষ সূর্য মাথায় নিয়ে আলো ছড়াচ্ছে শিক্ষক
প্লাবিত হচ্ছে আঁধার; দীপ্তি স্রোতে প্রতিটি শিক্ষা ভবনে

স্বপ্ন দেখছি সুশিক্ষিত রাজনীতিক গোষ্ঠী ছুঁড়ে ফেলে নামের প্রথম
অথবা শেষাংশ যোগ্যতা হিসেবে বাছাই করছে মেধা
গড়ে তুলছে সমাজ নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ
ঝেড়ে ফেলছে অন্যের উপর দোষ চাপানোর প্রবণতা
নিজ শরীরের মতো ভালোবেসে অনুকরণীয় করছে ভবিষ্যৎ

স্বপ্ন দেখছি প্রতিটি উৎসব-পার্বণে ঘরে ঘরে বাজছে
দেশীয় গান জারি, ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালি
গায়ে হলুদ – বিয়ে – জন্মদিনে তরুন-তরুণীদল নাচছে
কুয়াশার মতো ঘিরে মুখরিত কাকলী
প্রাণ খুলে একে অপরের সাথে আনন্দ ভাগ করছে সবাই
ভালবাসছে নিঃস্বার্থভাবে; কেউ নয় শুধু পুরুষ অথবা নারী

স্বপ্ন দেখছি এ শহরে কেউ প্রত্যাখ্যাত নয়
আর যদিওবা থাকে –
নিকষ কালো আঁধার আনা হঠাৎ গভীর রাতে
ফুল ছুঁড়ে সে পালিয়ে যাবে তার ঐ স্নিগ্ধ মুখে!

আমার দুচোখে গাঁথা স্বপ্ন, স্বপ্নে দুচোখ যাচ্ছে ভরে
প্রিয়া,
পারো যদি দুচোখ ছেড়ে নেমে আসো কম্পিত অধরে
ধারণ করতে দাও আরও কিছু স্বপ্ন
তোমার জলে স্নাত আমার অথৈ সায়রে!..’’

..‘এলোমেলো: ১ - ৫’..

..‘এলোমেলো: ১ - ৫’..

..‘এলোমেলো-১’..

“..বারে বারে যাই ফিরে
চেনা সেই নদী তীরে
শূন্য করেছি আঁজলা ভরে
আমি যেই তটিনীরে!..’’

..‘এলোমেলো-২’..

“..ফিরিয়ে দিও,
ইচ্ছে হলে ফিরিয়ে দিও;
ফিরিয়ে দেয়া আমার গোলাপে
না হয় তোমার স্পর্শ দিও!..’’

..‘এলোমেলো-৩’..

“..’সাজলে তোমায় বেদেনীর মতো লাগে’ –
আমি বলবো লক্ষ বার;
রাগলে তোমায় কি সুন্দর যে লাগে!
আমি রাগাবো লক্ষ বার!..’’

..‘এলোমেলো-৪’..

“..প্রচারক নই কোন ধর্মের
তবু পেয়েছি প্রত্যাদেশ –
তোর ঠোঁটেই অমরত্বের আরক
তোর বুকেই স্বদেশ!..’’

..‘এলোমেলো-৫’..

“..অন্ধ করে দিও আমার দুচোখ
তোমার চুলের আঁধারে, আজ রাতে;
স্তব্ধ করে দিও আমার শ্রবণ
তোমার সিক্ত ঠোঁটের বাজনাতে!..’’