July 22, 2013

..‘তোমাকে বলছি’..

..‘তোমাকে বলছি’..

“..তোমাকে বলছি –
যে তুমি কাজলে ঢাকো চোখ বেদনায়-কামনায়
যে তুমি গুঞ্জরিত মূর্ছনা অশ্রুত আঙিনায়
যে তুমি জিজ্ঞাসাবাদে ভীষণ অগোছালো
যে তুমি গোপন সুখে স্পন্দিত টলোমলো

যে তোমার জোড়া রমণীফুল – অপঠিত বই খুলে ধরা
যে তুমি ভোর আমার – কাঙ্ক্ষিত পাখিদের অপেরা
যে তোমার নগ্ন শরীর – অনন্য ভাস্কর্য
যে তুমি আরাধ্য আমার – অবারিত সৌন্দর্য

যে তুমি কখনো আমাকে ভেবে
বঙ্গোপসাগর এক ধরেছো অশ্রুবিন্দুতে –
মিছেমিছি;
যে তুমি কখনো আমাকে ভেবে
ওষ্ঠে তোমার ছুঁয়েছো অধরে
তোমাকে বলছি!

সকল সন্ন্যাসীর আছে এক লুকানো অতীত
এবং
সকল পাপীর আছে এক ভবিষ্যৎ নিশ্চিত

আমি নাহয় পাপী হবো
অজানা ভবিষ্যতের আঁধারে হেঁটে হেঁটে হবো গাঢ়;
এখন হতে দাও জেগে ওঠা শিশির
তোমার নাকে, তোমার বুকে – কম্পিত থরোথরো!..”

July 15, 2013

..‘এ শহরে সবচেয়ে বড় অপরাধ’..

..‘এ শহরে সবচেয়ে বড় অপরাধ’..

“..দুই কোটিরও উপরে এ শহরে মানুষের বসবাস
রয়েছে অযুত-নিযুত দালানকোঠা, মসজিদ-মন্দির, ব্যাংক
অফিস-আদালত, বিবিধ আশ্রম এবং অজস্র অপরাধ

এখানে আছে ২৭টি বিনোদনমূলক, ৪টি সংবাদ নির্ভর
১১টি এফ এম স্টেশন এবং ১৬টি কমিউনিটি রেডিও চ্যানেল
যেগুলোতে প্রচারিত হয় জীর্ণ শ্লোগান, বন্ধ্যা স্তাবকতা
এক মুঠো কথা – দুই গ্লাস বাজনা – এক চিমটি সুরের আদলে
গানের নামে যন্ত্রণা;
এখানে পাওয়া যায় বিস্বাদ
একই ভাঁড়ের একাধিক ভাঁড়ামি
‘হৃদয়ছোঁয়া’ নামে হাস্যকর কাহিনী;
চারপাশ স্তব্ধ করে দেয়া কণ্ঠ
জোস্নাকে হিংসুটে করে দেয়া অবয়ব
শিশিরে স্নাত টুপটাপ শিল্প – এখানে অপরাধ!

এ শহরে ব্যাংকগুলোতে টাকা রাখা যায়
ভালোবাসা জমা করা যায় না
তাঁরা গচ্ছিত রাখে রূপকথার রাজহাঁস
অপ্রচলিত মুদ্রা – জমা রাখে না
নিটোল ভালোবাসার নিখাদ সঞ্চয় – এখানে অপরাধ!

এ শহরের মসজিদ-মন্দির-অফিস-আদালতে
শুধুই দেনা-পাওনার হিসেব
বুকপকেটে লুকানো জোনাকি
কেউ অবাক চোখে দেখে না;
লক্ষাধিক দালানকোঠায় বসবাস করে মানুষ
এখানে কেউ মনের ঘরে বাস করে না
মনে ও মননে একত্রে বসবাস – এখানে অপরাধ!

এখানে হৃদস্পন্দনকে ভাষায় রূপান্তর করা অপরাধ
সচ্ছল প্রেয়সীর অধরে অসচ্ছল ওষ্ঠে আল্পনা আঁকা
ধর্মান্ধের দু’চোখে সূর্যের প্রতিস্থাপন করা
ঝুম বৃষ্টিতে ঘরের কোনায় বসে অশ্রুতে ভেজা অপরাধ!

সামর্থ্য আছে, এ শহরে নেই শুধু ইচ্ছে পূরণের সাধ
দুই কোটিরও উপরে এখানে মানুষের অজস্র অপরাধ
মিথ্যা, কুৎসিত, লিপ্সা এখানে রাজত্ব গড়েছে যদিও
দু’চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে বড় হওয়া –
এ শহরে সবচেয়ে বড় অপরাধ!..’’

July 09, 2013

..‘অদ্ভুত কেটে গেল সারাদিন আজ’..

..‘অদ্ভুত কেটে গেল সারাদিন আজ’..

“..অদ্ভুত কেটে গেল সারাদিন আজ
যদিও শিশিরের মতো অনিবার্য সকাল
সরোদের বুক চিরে কণ্ঠ তোমার
স্পন্দিত হয়েছিল খুব ভোরে – আমার
মুঠোফোনে বৃষ্টির ঝুম
ঘুম ভাঙ্গিয়ে ছিলে – বহুদূর যাবে বলে
আমার নোটবুক – দু’ঠোঁট তোমার
আমার অ্যালার্ম ঘড়ি – কণ্ঠ তোমার
যা বলার তা না বলে
অসমাপ্ত যদিও স্তব্ধ হঠাৎ
ইথারের অপারগতা তোমাকে পাবার
একবার, দু’বার এবং প্রচেষ্টা শেষবার।

খাবারের টেবিলে কোন কথা বলেনি সেই নারী –
যার উষ্ণ বুক ছিল প্রথম বিছানা আমার
পরিচিত রিকশাওয়ালাগুলো কেন যেন আজ
ফিরেও তাকায়নি আমার দিকে – আর
অপরিচিতদের ছিল সহজাত তাড়া
হেঁটেই পৌঁছলাম – আমার স্বপ্ন, আমার উদ্যান
মেঘ-সেঁচা জল নিয়ে দেখি গোলাপ বাগান
ফুটে আছে পৃথিবী কাঁপিয়ে –
একটি গোলাপও ফিরে দেখলো না
আমি প্রতিটি গোলাপের সামনে অপলক
দাঁড়ালাম; তাঁরা ফিরেও দেখলো না!

আমি একে একে ঘুরে এলাম
কাঁঠালচাঁপা – কৃষ্ণচূড়া – হাসনাহেনার দল
ঘাসফুল আমার, আমার বাঁশফুল;
অপলক দাঁড়ালাম; তাঁরা ফিরেও দেখলো না!

আমি ছুঁয়ে দিলাম সূর্যমুখীদের পাপড়ি
তাঁরা ফিরেও দেখলো না;
আমি নাড়িয়ে দিলাম লজ্জাবতীদের তরল
তাঁরা আঁচলে ঢাকলো না!
আমার মেঘ-সেঁচা জল, বিরল-অনল
তাঁরা ফিরেও দেখলো না!

তবুও অপসৃয় সূর্যালোক ছুটন্ত অবিরত
তুই – তুমি – আপনি এবং অনাহুত
উঠতি রাজনীতিবিদ, উদীয়মান ব্যাংকার, তরুণ বুদ্ধিজীবী
ছিঁচকে চোর, স্বাপ্নিক নির্মাতা, নারীদেহলোভী
সবার ভিড়ে শ্রোতা হয়ে আবারো
অবহেলিত ছিলাম, মুখরিত তাঁরা, আমি অবাঞ্ছিত

নিদাঘ কামনার মতো রাত্রি যখন
আঁটসাঁট জামা ফুঁড়ে স্তনের মতন
বাহিরে নিয়ে এলো – রাজপথে
ফিরে তাকালোনা কেউ আমার দিকে
আগুন এগিয়ে দিল না মোড়ের দোকানদার
হেঁটেই আবারো তাই রাস্তা পারাপার
জনকের সামনে দিয়েই রুমে ঢুকলাম
দেখেনি – যেন ঠিক চেনেনি আমায়

অদ্ভুত কেটে গেল সারাদিন আজ
এমন হয়নি কখনো আগে
হঠাৎ সরোদ ওঠে মুঠোফোনে বেজে
বৃষ্টির মতো ঝরে ঝরে যেন বলে গেলে –
কোথায় ছিলে-কেন ফোন কেটে গিয়েছিল সকালে-
কেন সারাদিনে একবারও পারোনি ফোন দিতে-
এবং অবশেষে অসমাপ্ত কথাটি বললে বেশ ধীরে – ‘ভালোবাসি’
শ্রবণে অঞ্জলি ঢেলে আরও বললে – ‘ভালোবাসি, খুব বেশী’

ঠিক তখনি পেছন থেকে বাবা বললেন –
‘কি আশ্চর্য! কখন এসেছ তুমি?’
আমি নির্বাক – বিলম্বিত শব্দগুচ্ছে দারুণ বিলীন
বুঝলাম – সারাদিন কেন ছিলাম অস্তিত্বহীন!..’’

July 04, 2013

..‘সরল বলে কিছু নেই; যেমন নেই সহজ’..

..‘সরল বলে কিছু নেই; যেমন নেই সহজ’..

“..সরল বলে কিছু নেই; যেমন নেই সহজ -
কাকে বলে সন্ধ্যা, কাকে বলে রাত্রি?
দৃষ্টিগ্রাহ্য তারা পাই খাঁজকাটা
হৃদয়ের নিচে এক টলটলে হ্রদ! তাতে এক মাঝি
হাঁক দেয়, অহর্নিশ এপার-ওপার করি যাত্রী।

সন্ধ্যা ঘরে ফেরে জলে ধুয়ে পা
সব কটা খিল এঁটে রাত্রি ঘুমায়
উত্থান অতঃপর দ্রুততায় বহুমাত্রিক পতন
বাঘ চোখ গায়ে এঁকে কিশোরী জোসনায়।

মৃদু কড়া নাড়া থেকে বজ্র নিনাদ
জেগে উঠে বসে নিষ্ঠুর ঘুমাই
আমার পরিচয় জানে বাতাস -
সে কে? তাঁর পরিচয় চাই!

কখনও চেতনা, বুদ্ধি, মন ও মুখোশের দেবী
কখনও মধুগৃহে আর্ত রাণী মৌমাছি
ভেজা আর স্নানের পার্থক্য জানা হলে -
পরিচয় ভুলে যাই - চেনা হলেই বাঁচি।

সুবর্ণা সে বসন্ত আমার, আমার যৌবন
তাকে বলি রাত্রির শিশিরে সাজানো সুন্দর সবুজ
সম্মুখে হাঁটুগেড়ে অনুনয় করি,
আধখানা দিয়েছে পরিচয়, আধখানার নাই খোঁজ।

বাজপাখি সমাজ মাটিতে চোখ
কোথাও নেই একজোড়া ছেঁড়া স্যান্ডেল
তাঁর নগ্ন পায়ে শুধু শোক!..’’

..‘প্রিয়, একটা গল্প বলি শোনো’..

..‘প্রিয়, একটা গল্প বলি শোনো’..

“..প্রিয়, একটা গল্প বলি শোনো –
ছোট্ট বেলায় ঘরহারা কেউ
বনের মাঝে বসত করে
নাম করেছে ‘বুনো’!

ঘোলা জলে তৃষ্ণা মেটে
প্রাণ কি ভরে কভু?
ঝর্না জলের স্বাদ পেতে সে
পথ হারাবে তবু!

পথের কোনও দিক নেই
যেমন নেই সমুদ্রের কোনও বন্দর

ভয় কি প্রিয়,

যদি উঠে আসো –

পথ হারিয়ে পথের উপর?..’’

..‘এলোমেলো ১ - ৫’..

..‘এলোমেলো ১ - ৫’..

..‘এলোমেলো-১’..

“..যে আয়নায় নিজেকে দেখতাম
প্রতি সকালে আমি;
কাল তা ভেঙ্গে হলো অজস্র খণ্ড
দেখি – ভাঙ্গা টুকরায় শুধু তুমি!..’’

..‘এলোমেলো-২’..

“..সে ধরতে বলে তার দুটি হাত
আমায় শক্ত করে;
হাত যে আমার প্রচণ্ড ঘামে
রাখবো ধরে কি করে?..’’

..‘এলোমেলো-৩’..

“..লিখে দিলাম আমার দু’চোখ
যারা দেখতো শুধু তোমাকে;
দেখে যেন কোন অন্য ‘আমি’
আমারি মতো তার ‘তোমাকে’!..’’

..‘এলোমেলো-৪’..

“..বৃষ্টির সাথে আসবে তুমি
অপেক্ষায় ছিলাম বহুদিন;
অবশেষে হলো প্রতীক্ষাবসান –
এলো বৃষ্টি, তুমিহীন!..’’

..‘এলোমেলো-৫’..

“..হয়তো খুঁজিনা তোমায়
যদিও সময় কাটে বিষণ্ণ একা;
অপরিচিতার বুকে যাই ঘুম
অপরাজিতা তোমার – যদি পাই দেখা!..’’