March 29, 2014

..‘আমি সব পেয়েছি’..

..‘আমি সব পেয়েছি’..

“..কি পাইনি তাঁর কাছে!

মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে তাঁর হাতে পানি খাওয়া ছাড়া
ছুটির দিনে একসাথে সাপ্তাহিক বাজারে যাওয়া ছাড়া
তাঁর অসুস্থতার সময় হটব্যাগ ও আমার গাল
তাঁর পেটে রাখা ছাড়া এবং কারনে-অকারনে
সময়ে-অসময়ে তাঁর কানের কাছে ‘ভালোবাসি’
বলে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরা ছাড়া;
আমার মনে হয় আমি সব পেয়েছি!


যখনই কোথাও গিয়েছি খুব যত্ন করে রিকশায়
তাঁর জন্য রেখে দিয়েছি সিটের বামপাশ
যখনই কথা বলেছি কারো সাথে
ব্যবহার করেছি সেইসব শব্দগুচ্ছ
যাদের দ্যোতনা পছন্দ তাঁর
প্রিয় সুগন্ধে এবং তাঁর গায়ের সৌরভে
সুরভিত রেখেছি শরীর আমার
দু’চোখের স্বপ্নে গর্ভবতী করেছি
তাঁর কাজল দু’চোখ প্রতিদিন-প্রতিরাত;
আমার মনে হয় আমি সব দিয়েছি!

তবু মাঝে মাঝে মনে হয় –
রিকশা নয়; সে চেয়েছিল বুকের বামপাশ
কথায় নয়; শ্রবণে তাঁর আছড়ে পড়ুক
প্রিয় বাক্যের অনুরণন
সুগন্ধ নয়; আমার নাম জড়িয়ে থাকুক
নামের পাশে তাঁর
একজোড়া নয়; সে চেয়েছিল দুই জোড়া চোখ
স্বপ্নে হোক গর্ভবান-গর্ভবতী
মাঝে মাঝে মনে হয় –
দেইনি তাঁকে অনেক কিছুই,
আমি সব পেয়েছি!..”

March 23, 2014

..‘শুধু তোমার কাছে গেলেই’..

..‘শুধু তোমার কাছে গেলেই’..

“..শুধু তোমার কাছে গেলেই
ভীষণ প্রতিভাবান হয়ে যাই আমি – পূর্ণতায়!

তোমাকে কিছু লিখতে গেলেই কালবোশেখির মতো
ভেঙ্গে-চুরে ভেতর থেকে বের হয়ে আসতে থাকে
বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন-মধ্য-আধুনিক যুগ ছাপিয়ে
দ্বিধা থরথর কম্পিত শব্দগুচ্ছ –
আমার ক্ষুদেবার্তাগুলোও রুপান্তরিত হয়
শুদ্ধতম কবিতায়!

তোমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলেই নির্জন পাখির কূজনের মতো
মন্ত্রমুগ্ধ সুরে ঝর্ণার তালে বইতে থাকে
বিলুপ্তপ্রায় ধুয়া-ধুমরী-ধ্রুবা-ধুন গান
ম্লান হয়ে যায় প্রখ্যাত সুরকারদের নাম
আমার চুম্বনগুলো প্রশংসিত হয়
সাংগীতিক সমালোচনায়!

তোমার বুক-পেট উন্মুক্ত হওয়া মাত্রই
একাগ্র-দক্ষ-স্বাপ্নিক তুলির মতো ছুটতে থাকে
মুখায়ব আমার; অদ্বিতীয় রঙে এঁকে যায়
হামিদুর-কামরুল-জয়নুলের অপ্রকাশিত ছবি সম্ভার
আমার দাঁত-নাক-গালের স্পর্শে তোমার
অনাবৃতারা হয়ে ওঠে শিল্পকলার প্রদর্শিত দেয়াল!

তোমার ভেতরে প্রবেশের সাথে সাথে
আকাঙ্ক্ষিত-দুর্লভ-প্রার্থিত একনায়কের মতো
অনর্গল বাগ্মী হয় আমার অনুসরণ ক্ষমতা
কথার বর্ষা স্নাত করে; ভিজিয়ে দেয় চারপাশ
দারুণ নির্বাচক আমি ছড়িয়ে পড়ি
ছোট্ট শিশুর মতো প্রগলভতায়!

নিতান্ত নির্গুণ আমি তোমার কাছে গেলেই
কবি-সুরকার-শিল্পী-বাগ্মী হয়ে উঠি
ভীষণ প্রতিভাবান হয়ে যাই – পূর্ণতায়;

বহুমাত্রিক এই আমি তুমি কাছে না থাকলেই
পুরাতন-অর্থহীন-অসামাজিক হয়ে উঠি
ভীষণ অসহায় হয়ে যাই – শূন্যতায়!..”

March 18, 2014

..‘এলোমেলো ১ - ২’..


..‘এলোমেলো - ১’..   
 
“..তবুও ঘুমের বালিশ আমার
খুঁজবে তোমার চোখের নালিশ
মধ্যাহ্নের নীরব দুপুর
চাইবে পেতে কথার নূপুর
পায়েল হয়ে যাক
রাতের পরে রাত!..”


..‘এলোমেলো - ২’..   
 
"..আজ সারাদিন পিপাসায় লীন
তোমার দু'ঠোঁট চাইছি;
'সত্যুক' তুমি শুনতে কি পাও?
- আমি 'মিথ্যুক' বলছি!.."

..‘আমি অনুরোধ করেছি’..

..‘আমি অনুরোধ করেছি’..

“..বিশাল একটি জানালা আছে আমারও
বিছানার পাশে বিস্তৃত অমল সবুজ
প্রতিনিয়ত সেখানে বসে পাখিদের অপেরা
পারিবারিক সভা-বিচারিক সম্মেলন
স্বার্থহীন সুরে তাঁরা গান গায়, ভালোবাসে
সংসার সাজায়, প্রিয়দের কাছে ডাকে
আমি তাঁদের অনুরোধ করেছি –

সারি সারি করে সাজানো আমার ঘরে
বইয়ের তাকে এলোমেলো অজস্র বই
তাঁরা স্বপ্ন শোনায় আমাকে নির্বাচিত ভাষায়
বামদিক থেকে প্রবাহিত হয় কবিতার বেহাগ
ডানদিক থেকে শিল্প-মানবতা-ইতিহাস
সামনে-পেছনে-উপরে-নিচে অগণিত নক্ষত্র
তাঁরা সবাই বাচিক শিল্পীর মতো
আবৃত্তি করে যায় পুরাতন-নতুন স্বপ্নগুচ্ছ
আমি তাঁদের অনুরোধ করেছি –

আদর্শ বাগানের মতো পরিবার আমার
ঝুঁকে থাকা বটগাছ স্নিগ্ধ ছায়ায়
নিয়ত কাঙ্ক্ষিত জলের ধারায়
ফুটে থাকা বর্ণিল ফুলে বিবিধ সুবাস
বাবা-মা-ভাই-বোন সবাই তাঁরা
অনায়াসে কাটিয়ে দেবে নির্ঘুম রাত
আমি তাঁদের অনুরোধ করেছি –

মেঘদল-লতাপাতা-ঝর্ণা-পাহাড়
অথবা গ্রহ এক পৃথিবী আমার
নিঃসঙ্কোচে প্রস্তুত ঋণ শোধবে বলে
ফেরাবে না হাত আমার প্রসারিত হলে
আমি তাঁদের অনুরোধ করেছি –

আমি অনুরোধ করেছি
বান্ধব-প্রতিবেশী-আত্মীয়স্বজনকে
অ্যালার্ম ক্লক-কাজের লোক-কেয়ারটেকারকে
আমি অনুরোধ করেছি -
তাঁরা যেন কোন শব্দ না করে,
খুব ভোরে;
আমি অনুরোধ করেছি তোমাকে –
ভাঙ্গে যেন ঘুম আমার
তোমার কণ্ঠস্বরে!..”

March 10, 2014

..‘যে পথে গিয়েছ হেঁটে’..



..‘যে পথে গিয়েছ হেঁটে’..

“..যে পথে গিয়েছ হেঁটে কোন এক রাতে
নক্ষত্রের আলোতে
ছায়ার মতো পিছু পিছু দুচোখ আমার
অনুসরণ করে; তুমি দেখো নাই তারে
তোমার পায়ের পাতা এঁকেছিল যে
আল্পনা সহজ সুহৃদ
তোমার পায়ের পাতা
তুলির মতো তাঁদের বিভ্রান্ত করে
এগিয়ে ছিল খুব জোসনাবিহারে
এখনও তাঁরা পলাতক
ফেরারি তোমারই মতোন
আলো-আঁধারির ফুটে উঠা মুখে
তোমার মুখ; তাঁরা আজো খুঁজে ফেরে!..

..‘যোগফল’..

..‘যোগফল’..

“..কেন যে এভাবে প্রবাহিত হও অনলে-তরলে শরীরে আমার
কি লাভ তোমার বলো; যখন বাতাসও দারুণ হিসেবী
শুষ্ক ভীষণ – পলাতক বৃষ্টি, শরীরে আমার
কেন সুগন্ধি তোমার ঢালো?
পালকি ছন্দে নিঃশ্বাসের গান
জমে থাকা ধূলোয় ভেজা পায়ের ছাপ
ফিরে ফিরে কেন রাখো?
আঁচলেই যদি জড়াবে আমায়
কেন তবে আড়ালেই তা রাখো?

নাকি জেনে গিয়েছ তুমি –
নিঃস্বার্থ হেসে, লজ্জিত ভালোবেসে
জীবন্মৃত পড়ে রয় যে হৃদয়ে কম্পিত ক্রন্দন
সেই যে সাধু, সেই যে পাপী – আনন্দ?
সে তো তোমারই দেয়া! অস্ফুট ব্যাথা?
কে আর কি দেবে তাঁকে – তুমি ছাড়া!
জেনে কি গিয়েছ তুমি –
এইযে এতো পরিচয়; এইতো তোমার ‘আমি’!

নাকি জেনে গিয়েছ তুমি –
আমারই মতোন সূত্র আরেক সরল
গণিতে নয়; তুমি-এক, আমি-এক
একত্রিত হলে কামনায়,
এক-ই হবে তার যোগফল!..”