October 04, 2012

..‘কথোপকথন এবং’..

..‘কথোপকথন এবং’..

“..: হ্যালো
: কেমন আছেন?
: আগের মতোই।
: আগে কেমন ছিলেন?
: এখন যেমন।
: এখন কেমন?
: আগের মতোই।
: এই উত্তরগুলো কি কখনই বদলাবে না?
: বদলাচ্ছে ঠিকই, শুধু তুমি বুঝতে পারছ না।
: শুরু হয়ে গেল আধ্যাত্মিকতা!
: ঠিক আছে, থামিয়ে দিলাম।
কেমন আছে মা, বাবা আর তোমার ছোট্ট বাগান?
: ভালো।
: কেমন আছে সে, শুনেই এসেছি শুধু কখনও দেখিনি যাকে?
: ভালো।
: শুধু ভালো নাকি বেশ ভালো?
: বেশ ভালো।
: কি করছে সে এখন?
: একটি প্রাইভেট ফার্মে আছে।
: তো, কবে নিচ্ছ সামাজিক বন্ধনের চুক্তি সনদপত্র দুই জোড়া হাতে?
: শীঘ্রই।
: তুমি কি আমায় নিমন্ত্রন জানাবে, তোমার বিয়েতে?
: আমি আপনাকে অসংখ্যবার বলেছি আমি বিয়ে করবো পালিয়ে;
সুতরাং নিমন্ত্রন পাবেন না।
: আমি যতদূর জানি তুমি ভীষণ সামাজিক।
: তো?
: তো মানে তোমাকে দিয়ে ওটা কখনই হবে না।
: কেন?
: তুমি চাও ‘বিয়ে’, যা আমাদের সমাজে ‘বৈধ সামাজিক অনুমোদন –
জোড়া বেঁধে থাকার; একই ছাদের নিচে’।
: সবাই তাই চায়।
: সবাই তাই চায়? কতজনের ভেতরে প্রবেশ করেছ তুমি?
: কি আশ্চর্য! প্রবেশ করতে হবে কেন? আমি তাদের মুখে শুনেছি।
: মানুষ বলে এক; চায় আর এক।
: যেমন?
: যেমন – কখনও কি তুমি ভেবে দেখেছ, যদি সাধ্য থাকতো
কতবার আমাদের মায়েরা সংসার ছেড়ে পালাতো?
: পালিয়ে তারা কোথায় যাবে?
: এইতো বুঝতে পেরেছ! যাবার জায়গা নেই বলেইতো
বাংলার নারীদের চোখ এতোটা অশ্রুসিক্ত।
: বাদ দেন এসব। ভালো লাগছে না শুনতে।
আচ্ছা, ধরুন – আমার বিয়ে, কি পাব উপহার আপনার পক্ষ থেকে?
: ১৫০ টা দীপ্ত জোনাকি।
: মিথ্যা।
: একটা দুই পা ওয়ালা খাট।
: ডাহা মিথ্যা।
একটা অষ্টমী চাঁদের ফটোকপি।
: আবারো মিথ্যা।
: এগুলো যে মিথ্যা তা তুমি বুঝলে কিভাবে?
: বুঝি। কল্পনা নেই আপনার বাহিরের কথায়
যেমনটা থাকে ভেতরের কথাতে।
: হুমম। আচ্ছা, যেদিন তোমার বিয়ে সেদিন নিশ্চয়ই তুমি অনেক সাজুগুজু করবে?
: অবশ্যই।
: সেদিন নিশ্চয়ই অনেক মানুষ আসবে?
: অবশ্যই।
: তুমি নিশ্চয়ই অনেক সুখী থাকবে?
: অবশ্যই।
: বাবা-মা নিশ্চয়ই অনেক আনন্দিত থাকবে?
: অবশ্যই।
: তুমি কি জানো, তখন হয়তো একজন অচেনা লোক এসে তোমার নাম খোঁজ করবে?
: কেন?
: কারন – তোমাকে একটি পার্সেল নিতে হবে।
: কিসের পার্সেল?
: তোমার বাবা হয়তো লোকটিকে বিদায় করে দিতে চাইবে।
: তারপর?
: তারপর কেউ একজন তোমাকে এই পার্সেলের কথা জানাবে।
: তারপর?
: তারপর তুমি লোকটিকে কাছে ডাকবে।
: তারপর?
: তারপর লোকটি তোমাকে পার্সেল গ্রহনের রসিদে সিগনেচার করতে বলবে।
: তারপর?
: তারপর তুমি পার্সেলটি দেখতে চাইবে।
: তারপর?
: লোকটি তোমাকে অডিটোরিয়ামের বাইরে যেতে বলবে।
: (নীরবতা)
: তোমার বাবা-মা তোমাকে মানা করবে।
: (নীরবতা)
: অডিটোরিয়াম ভর্তি লোকজন অবাক হয়ে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকবে।
: (নীরবতা)
: তবুও তুমি বাইরে বের হয়ে আসবে এবং দেখবে –
: কি?
: একটি বিশাল ট্রাকের উপর শেকড়শুদ্ধ একটি বিশাল কৃষ্ণচূড়া গাছ!
উষ্ণ রক্তে ধোওয়া লাল লাল অজস্র ফুলে
ছেয়ে আছে তরুণ একটি শেকড়শুদ্ধ বিশাল কৃষ্ণচূড়া গাছ!
: (নীরবতা)
: হয়তো তখন তোমার হবু বর তোমাকে ফিরিয়ে নিতে আসবে।
: (নীরবতা)
: হয়তো অভিমানের অভিনয় করতে গিয়েও
তোমার জলভরা দু চোখ দেখে থামবে।
: (নীরবতা)
: হয়তো তুমি,
তুমি হয়তো দু হাতে মুখ ঢাকবে।
: আপনি কি চান, বাকি জীবনও কাটুক আমার শুধুই কেঁদে কেঁদে?
: নাতো!
: আমি চাই উঠুক বেড়ে
নিঃসঙ্গ একটি কৃষ্ণচূড়া –
বৃষ্টি নয়;
পান করে শুধু
তোমার অশ্রুধারা !
: (সম্পূর্ণ নীরবতা)..’’

1 comment:

mimbo said...

ish...vabs..