January 29, 2013

..‘অধরে ধরা অধরা’..

..‘অধরে ধরা অধরা’..

“..প্রায়সময় আমার মনে হয় - যদি সেদিন না থাকতে তোমরা
আজ কিভাবে প্রকাশ করতাম - বৃষ্টির মায়াজাল, রৌদ্রের আলো-খেলা
কিভাবে প্রকাশিত হতো আমাদের ভালো লাগা, মন্দ লাগা
কিভাবে হতো প্রতিফলিত আমাদের আলো লাগা, অন্ধ লাগা?

প্রাচুর্য কিংবা নিশ্চয়তা; জীবনে কোনটাই ছিলনা তোমাদের
ছিল শুধু ক্ষুদ্র বুকে গনগণে উত্তাপ - প্রবঞ্চনা, শোষণ, ক্রোধানলের
লাজুক সহপাঠিনীর চুড়ির রিনিঝিনি উপেক্ষা করে সেদিন
এসেছিল ছুটে তোমাদেরই একজন - ছাত্র; রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রেখে
সহধর্মিণীর সুখ, আদরিনি কন্যার বায়না পূরণের মাধ্যম রিকশা
ছুটে এসেছিল তোমাদেরই একজন - রিকশাওয়ালা;
হাইকোর্টের দাপ্তরিক কাগজপত্র; দোকানের হিসেবের খাতা ছুঁড়ে ফেলে
এসেছিলে ছুটে তোমরা, ঢেলে দিয়েছিলে বুকের রক্ত - সাক্ষী মহাকাল
তাই বুঝি আজ আমরা অকুতোভয় স্বাপ্নিক; বাংলার মাটিতে
ফোটা ফুল - তাই বুঝি এতো, এতো বেশী লাল!

বায়ান্নর আগুন লাগা ফাল্গুনে সেদিন যদি না আসতে তোমরা
অশ্রুর মতো
প্রশ্বাসের মতো
হৃদয়ের অনাবিষ্কৃত অন্তঃস্থল থেকে উঠে আসতো কি বাংলা?

প্রিয়, বড়ো বেশী প্রিয় বাংলাকে এনে দিতে সেদিন
অদ্বিতীয় ভালোবাসা বিসর্জন দিলো যারা;
তাঁদের জন্য উৎসর্গিত হলো সন্তান আমার -
প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অধরে ধরা অধরা’!..’’

January 25, 2013

“..উপলব্ধি..’’




..উপলব্ধি..’’  
..আমার জীবনে প্রথম নারী এবং নায়িকা,
যার ঠোঁটে জীবনে প্রথম একেঁছিলাম চুম্বনের আলপনা,
যার বুকের উষ্ণতা আমার চির আরাধ্য,
যার নাম হয়তবা আমার কণ্ঠে উচ্চারিত প্রথম শব্দ-
সে যতোটা আমার, তারচেয়েও বেশী আপনার!

সে আমাকে সবসময় স্নাত করেছে আবেগী চোখের জলে
আর আপনি আমাকে আলোকিত করেছেন আপনার সূর্যালোকে

সে আমাকে তার দীঘল চুলের বেণীর মতোই স্নিগ্ধ বাধঁনে
বেধে রেখেছে আমার হাত-পা-বুক-কোমর;
আর আপনি প্রবাহিত করেছেন আমাকে ঝর্নাধারার মতো,
আমাকে উৎসারিত করেছেন গজলের মতো-
সীমাবদ্ধতায় নয়, বিশুদ্ধতার ছকে

আপনি কখনোই আমাকে
বিরত করেন নি কোনো কিছু করা থেকে,
আপনি কখনোই চাননি আমি শুধু তত্ত্বীয় দিকটুকু জানি
আর তাই আজ আমার ক্ষুধা পৃথিবীর মানচিত্রের মতোই বিশাল

'উৎসাহ' এবং 'প্রশংসা' শব্দদু'টির গন্ধ এবং রঙ
ঠিক আপনার মতো কারন আপনার কাছ থেকেই
এই শব্দদু'টির প্রয়োগ এবং ফলাফল
আমি পূর্ণাঙ্গ ভাবে শিখেছি

এভারেস্ট আমি দেখিনি কিন্তু আমার চোখে
পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ আপনার অনবনত মাথা -
ক্ষমতার অপপ্রয়োগের সামনে,
মিথ্যার মুখোশের সামনে,
লোভের প্রাচুর্যের সামনে;

আমার শ্রবণে আসা সবচেয়ে মধুর শব্দ -
দুর্যোগের রাতে দরজার বাইরে পাপোশে
আপনার জুতাজোড়া ঘষার আওয়াজ;
আমার দৃষ্টিতে সর্বাধিক সুদর্শন আপনার মুখায়ব;
ঘুম ভাঙ্গা সকালে জানালা গলে আসা রোদের চেয়েও
বেশি আকাঙ্ক্ষিত - আপনার ভারী কণ্ঠস্বর

সে আমাকে শিখিয়েছে আবেগ,
আপনি শিখিয়েছেন যুক্তি;
সে আমাকে শিখিয়েছে মুঠো করে ধরা,
আপনি শিখিয়েছেন হাতের তালুতে পৃথিবী তৈরী করা;
সে আমাকে পাখি দেখিয়েছে,
আপনি দেখিয়েছেন পাখির স্বাধীনতা;
সে আমাকে আকাশ দেখিয়েছে,
আপনি দেখিয়েছেন আকাশের বিশালতা!

সে আমার 'অক্ষমতায়' হাহাকার করেছে;
আপনি এসে আলতো করে তুলে নিয়ে গেছেন
এবং তাকে রূপান্তরিত করেছেন 'ক্ষমতায়',
সে একটু একটু করে গড়ে তুলেছে আমার চোখ,
নাক, ভ্রু,হাত, পা - আমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ;
আপনি গড়ে তুলেছেআমার বোধ, আমার সত্ত্বা!

সে আমার জন্য যেভাবে বারবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে,
আপনি সেভাবে কাঁদেননি;
আপনার প্রতি আমার অসংখ্য অমীমাংসিত অভিযোগ রয়েছে
তবু আমার চোখে আপনি শ্রেষ্ঠ মানুষ;
আপনি কিছুক্ষণ পরপর দাঁড়িয়েছেন বিশ্রামের অভিনয়ে,
অনেক দূরত্ব রেখে - যা আসলে
আমাকে পথ দেখানোর জন্য;
তাই আপনি আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ

সে হলো আমার 'মা', যে হলো আমার 'শরীর' এর মতো;
যা ছাড়া আমার চারপাশের কাছে আমি 'আমি' নই!

আপনি হলেন আমার 'বাবা', যে হলো আমার বোধের মতো;
যা ছাড়া আমার কাছে আমি 'আমি' নই!..’’

..‘এলোমেলো ১ - ৬’..

..‘এলোমেলো ১ - ৬’..

..‘এলোমেলো-১’..

“..সত্যি বলছি মেঘ -
তোমাকে নিয়ে ভীত ছিল নদী
সাড়া না দিয়ে থাকবে কিভাবে
কখনও তাকে তুমি ডাকো যদি!..’’

..‘এলোমেলো-২’..

“..বল আমাকে,
তুই কিভাবে পারিস বল -
একফোঁটা চোখের অশ্রুমাঝে
ধরতে অতল জল!..’’

..‘এলোমেলো-৩’..

“..না বলা কথাগুলো বলা হলো না
তোমার ঘুমন্ত মুখ
বড়ো বেশী প্রিয় বলে
তোমাকে ঘুম থেকে তোলা হলো না!..’’

..‘এলোমেলো-৪’..

“..আমার মনের শান্ত জলে
পড়েছে ছায়া যার;
ছায়া হয়েছে আমার
শুধু কায়াটুকুই তার!..’’

..‘এলোমেলো-৫’..

“..তবু যেন ভালবাসি
ঘাসের বিছানা সবুজ - তোর আততায়ী বুক;
আরও যেন ভালবাসি
শিশির জমানো রুপা - তোর আদ্র দুচোখ!..’’

..‘এলোমেলো-৬’..

“..আসে রাত্রি, আসে ক্লান্তি
শরীর ঢেকে যায় ঘুমে;
প্রানবন্ত আমি স্থির
তোমার উষ্ণ বুকের প্রেমে!..’’

January 18, 2013

“..নিখাদ গর্ব করার মতো বাঙ্গালীর কোন কিছুই নেই..’’

“..নিখাদ গর্ব করার মতো বাঙ্গালীর কোন কিছুই নেই..’’

“..নিখাদ গর্ব করার মতো বাঙ্গালীর কোন কিছুই নেই
শুধুমাত্র বাংলা ভাষা ছাড়া;
ভাষা আন্দোলনের ৬০ বছর পার হয়ে গেলেও
কোন এক অদৃশ্য কারণে নবজাতকদের নাম
এখনো রাখা হচ্ছে আরবিতে
শিশুটি যখন বড় হচ্ছে, তার নামের অর্থ জিজ্ঞাসা করা হলে
সে কিন্তু নামটির বাংলা অর্থই বলছে!

কেন তাহলে এই আরবি নাম রাখা?
- হয়তোবা সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের জন্য
যা প্রমাণ করে দেয় আমরা কতোটা লোভী এবং অলস!
পুণ্য কামাব আরবি নামের মাধ্যমে
পুণ্য কামাব ইবাদত না করা সত্ত্বেও
বোধহয় এ দুটোই আমাদের অভিলাষ!

গত কয়েক বছর ধরে আবার কারও কারও
নাম রাখা হচ্ছে হিন্দি, ইংরেজি সহ বিভিন্ন বিদেশী শব্দে
যা প্রমাণ করে দেয় সৃজনশীলতা বলতে আমাদের কিছু নেই
আমরা শুধু জানি - অন্যের প্রেমেই পড়তে!

২১শে ফেব্রুয়ারী এলেই গলার রগ ফুলিয়ে
বুকের রক্ত ঢেলে দেবার সুযোগ পাচ্ছি না তাই
মুখের লালা ঝরিয়ে, উচ্চ মাধ্যমিক ভাষণ দিয়ে
আমরা একেকজন ভাষাশহীদদের বংশধর হয়ে যাই
অতঃপর ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে ধর্মের সানগ্লাস
চোখে দিয়ে আড়চোখে পান করি –
বিদেশী সংস্কৃতি,
মাংসের দোকান,
আকাঙ্ক্ষিত অশ্লীলতা!

আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও কি বয়ে বেড়াবে
আমাদের অজানিত শ্রদ্ধা - আরবি নাম?
আমাদের পরশ্রীকাতর ভালোলাগা - হিন্দি-ইংরেজি নাম?
আর অবহেলায় শুধু অভিধানে
পড়ে থাকবে আমাদের ভালোবাসা - বাংলা?

জাতি হিসেবে আসলেই কি সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা
নাকি আধুনিকতার আলো পেছনে রেখে
শুধুই এবং শুধুই দীর্ঘতর হচ্ছে
আমাদের দুর্বল, অপুষ্ট, ভীত, বেখাপ্পা জাতির কম্পমান ছায়া?

বাংলার ঘর আজ ভরে গেছে অগণিত
‘স্বর্গীয় উদ্যান’, ‘পুণ্যবান’ আর ‘প্রিয়-প্রিয়া’য়;
বাংলার আকাশে-বাতাসে আজও মধ্যযুগীয় ভয়
অলিতে-গলিতে ভ্রান্ত আধুনিকতা
খুব কমই দৃশ্যমান ভাষাশহীদদের
রক্তে ফোটা কৃষ্ণচূড়া থোকায় থোকায়!

আমাদের নাম, আমাদের ঘ্রাণ বলে দেয়
আমরা ধারণ করে আছি কাদের -
অনাবিষ্কৃত শ্রদ্ধা আর অস্তিত্ব হারাবার ভয়
থেকেই তাদের শাসনামল; বুকের
খুব কাছে কোন জায়গা নেই যাদের!

সৃষ্টিকর্তার বসবাস শুধু মরু অঞ্চলে নয়
তিনি সকল ভাষাই বোঝেন;
নির্দিষ্টতা নয়, প্রার্থনা মাঝে তিনি
অন্তরলীনতাকেই খোঁজেন!

আধুনিকতার মানে অনুকরণ নয়
আধুনিকতার মানে নির্বাচিত অনুসরণ
আধুনিকতার মানে নিজ আলোতে
আলোকিত হয়ে আলোর পরিস্ফুটন!

বাংলা ভাষায় রয়েছে অজস্র শব্দ সুন্দর
পৃথিবীর যেকোনো ভাষার শব্দ থেকে
কোটিগুণ অর্থপূর্ণ এবং ছন্দময়;
আমরা কি পারিনা আমাদের লোভ
এবং পরশ্রীকাতরতাকে ছুঁড়ে ফেলে
পরবর্তী প্রজন্মকে দিতে বাংলার স্নিগ্ধ আশ্রয়?

পারিনা কি তাদের নামের মধ্য দিয়ে
বাংলার রুপ, রস, গন্ধ, সৌন্দর্যকে ছড়িয়ে দিতে?
পারিনা কি তাদের নামে বাংলার নদী-নালা-গাছ-ফুল
উৎসব-আনন্দ-বেদনা আকুলকে বার বার ডেকে
উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া আমাদের অন্ধ
এবং নোংরা মানসিকতাকে স্নান করাতে?..’’

January 16, 2013

..‘এলোমেলো ১-৫’..

..‘এলোমেলো ১-৫’..
..‘এলোমেলো-১’..
“..বাড়ানো হাত ফিরে আসে শূন্য
উষ্ণতা নেই তোমার;
বস্ত্রহীন-শীতার্ত টোকাইদের সাথে
পার্থক্য কোথায় আমার?..’’

..‘
এলোমেলো-২’..

“..
তোর ঐ টোল পরা গালে
ঠোঁট রেখে যদি আমার মৃত্যু হয়;
এপিটাফে লিখিস
পেয়েছে সবই, অতৃপ্ত সে নয়’!..’’

..‘
এলোমেলো-৩’..

“..
প্রতীক্ষারত চোখগুলোর কাছে জানতে চেয়ো
কেমন কেটেছে তাদের;
ঘুম পাড়িয়ে ঠোঁট, বুক, হৃদয়
নির্ঘুম তাকিয়ে আকাশে, রাতের!..’’

..‘
এলোমেলো-৪’..

“..
পারলে আমায় উঠিয়ে দিও
উষ্ণতা পেয়ে তোমার বুকে
প্রচণ্ড শীতের এই সকালে
দুচোখ যদি একটু বেশী
ঘুমকাতুরে হয়;
চোখের পাতায় দুঠোঁট রেখে
কপোলে তোমার অধর ঘষে
আরও একবার জড়িয়ে ধরে
পারলে আমায় জাগিয়ে দিও!..’’

..‘
এলোমেলো-৫’..

“..
ক্ষমা করে দিও
ঠোঁটে-বুকে যদি দাগ চোখে পরে;
শুধু জেনে নিও -
বাহিরেও আমি, ঠিক যেমন ভেতরে!..’’

January 05, 2013

..‘এলোমেলো ১-৫’..

..‘এলোমেলো ১-৫’..

..‘এলোমেলো-১’..

“..ঘাস – ফুল – কাগজ – জল
কর্কশ – স্নিগ্ধ;
ছুঁয়েছে দু’হাত সারাদিন
তোমাকে পায়নি তো!..’’

..‘এলোমেলো-২’..

“..কেন যেন মন
অবচেতন;
প্রতীক্ষারত
তুমি আসবে কখন!..’’

..‘এলোমেলো-৩’..

“..সবচেয়ে অসহনীয়
তোমার দৃষ্টি ঐ
ঠোঁট কামড়ে লুকানোর চেষ্টায়
জলজ চোখ থই থই!..’’

..‘এলোমেলো-৪’..

“..ঐ ঠোঁটে বিষ রেখো, আমি
না হয় পান করে মরে যাবো;
ঐ চুল বিছিয়ে রেখো, আমি
না হয় ফুল হয়ে ঝরে যাবো!..’’

..‘এলোমেলো-৫’..

“..জানো কি তুমি – যেদিন থেকে
ধূমপান দেবো ছেড়ে;
সেদিন থেকে তোমার ঠোঁটের উপর
অত্যাচার যাবে বেড়ে!..’’