“..নিখাদ গর্ব করার মতো বাঙ্গালীর কোন কিছুই নেই..’’
“..নিখাদ গর্ব করার মতো বাঙ্গালীর কোন কিছুই নেই
শুধুমাত্র বাংলা ভাষা ছাড়া;
ভাষা আন্দোলনের ৬০ বছর পার হয়ে গেলেও
কোন এক অদৃশ্য কারণে নবজাতকদের নাম
এখনো রাখা হচ্ছে আরবিতে
শিশুটি যখন বড় হচ্ছে, তার নামের অর্থ জিজ্ঞাসা করা হলে
সে কিন্তু নামটির বাংলা অর্থই বলছে!
কেন তাহলে এই আরবি নাম রাখা?
- হয়তোবা সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের জন্য
যা প্রমাণ করে দেয় আমরা কতোটা লোভী এবং অলস!
পুণ্য কামাব আরবি নামের মাধ্যমে
পুণ্য কামাব ইবাদত না করা সত্ত্বেও
বোধহয় এ দুটোই আমাদের অভিলাষ!
গত কয়েক বছর ধরে আবার কারও কারও
নাম রাখা হচ্ছে হিন্দি, ইংরেজি সহ বিভিন্ন বিদেশী শব্দে
যা প্রমাণ করে দেয় সৃজনশীলতা বলতে আমাদের কিছু নেই
আমরা শুধু জানি - অন্যের প্রেমেই পড়তে!
২১শে ফেব্রুয়ারী এলেই গলার রগ ফুলিয়ে
বুকের রক্ত ঢেলে দেবার সুযোগ পাচ্ছি না তাই
মুখের লালা ঝরিয়ে, উচ্চ মাধ্যমিক ভাষণ দিয়ে
আমরা একেকজন ভাষাশহীদদের বংশধর হয়ে যাই
অতঃপর ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে ধর্মের সানগ্লাস
চোখে দিয়ে আড়চোখে পান করি –
বিদেশী সংস্কৃতি,
মাংসের দোকান,
আকাঙ্ক্ষিত অশ্লীলতা!
আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও কি বয়ে বেড়াবে
আমাদের অজানিত শ্রদ্ধা - আরবি নাম?
আমাদের পরশ্রীকাতর ভালোলাগা - হিন্দি-ইংরেজি নাম?
আর অবহেলায় শুধু অভিধানে
পড়ে থাকবে আমাদের ভালোবাসা - বাংলা?
জাতি হিসেবে আসলেই কি সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা
নাকি আধুনিকতার আলো পেছনে রেখে
শুধুই এবং শুধুই দীর্ঘতর হচ্ছে
আমাদের দুর্বল, অপুষ্ট, ভীত, বেখাপ্পা জাতির কম্পমান ছায়া?
বাংলার ঘর আজ ভরে গেছে অগণিত
‘স্বর্গীয় উদ্যান’, ‘পুণ্যবান’ আর ‘প্রিয়-প্রিয়া’য়;
বাংলার আকাশে-বাতাসে আজও মধ্যযুগীয় ভয়
অলিতে-গলিতে ভ্রান্ত আধুনিকতা
খুব কমই দৃশ্যমান ভাষাশহীদদের
রক্তে ফোটা কৃষ্ণচূড়া থোকায় থোকায়!
আমাদের নাম, আমাদের ঘ্রাণ বলে দেয়
আমরা ধারণ করে আছি কাদের -
অনাবিষ্কৃত শ্রদ্ধা আর অস্তিত্ব হারাবার ভয়
থেকেই তাদের শাসনামল; বুকের
খুব কাছে কোন জায়গা নেই যাদের!
সৃষ্টিকর্তার বসবাস শুধু মরু অঞ্চলে নয়
তিনি সকল ভাষাই বোঝেন;
নির্দিষ্টতা নয়, প্রার্থনা মাঝে তিনি
অন্তরলীনতাকেই খোঁজেন!
আধুনিকতার মানে অনুকরণ নয়
আধুনিকতার মানে নির্বাচিত অনুসরণ
আধুনিকতার মানে নিজ আলোতে
আলোকিত হয়ে আলোর পরিস্ফুটন!
বাংলা ভাষায় রয়েছে অজস্র শব্দ সুন্দর
পৃথিবীর যেকোনো ভাষার শব্দ থেকে
কোটিগুণ অর্থপূর্ণ এবং ছন্দময়;
আমরা কি পারিনা আমাদের লোভ
এবং পরশ্রীকাতরতাকে ছুঁড়ে ফেলে
পরবর্তী প্রজন্মকে দিতে বাংলার স্নিগ্ধ আশ্রয়?
পারিনা কি তাদের নামের মধ্য দিয়ে
বাংলার রুপ, রস, গন্ধ, সৌন্দর্যকে ছড়িয়ে দিতে?
পারিনা কি তাদের নামে বাংলার নদী-নালা-গাছ-ফুল
উৎসব-আনন্দ-বেদনা আকুলকে বার বার ডেকে
উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া আমাদের অন্ধ
এবং নোংরা মানসিকতাকে স্নান করাতে?..’’
No comments:
Post a Comment