December 29, 2014

..‘অনাদ্রিতার কাছে স্বীকারোক্তি’..

..‘অনাদ্রিতার কাছে স্বীকারোক্তি’..

“..অনাদ্রিতা,
তোমার সকল অভিযোগ নিঃসঙ্কোচে মেনে নিচ্ছি
আজকাল আমি ভীষণভাবে চরিত্র হারাচ্ছি!

প্রথাবিরোধী সত্য যখনই উচ্চারিত হচ্ছে রংহীন কোন ঠোঁটে
আঁধারবাসীরা কাঁপছে যখন সেই সত্যের রোদে
আমি সেই ঠোঁট খুঁজে বেড়াচ্ছি;
নরম-সজ্জিত ঠোঁটকে রেখে
সেই ঠোঁটে ঠোঁট রাখছি!

যে জোড়া চোখ স্বাপ্নিক খুব জীর্ণ অতীত ভুলে
স্বপ্ন কাজলে যে জোড়া চোখ জলজ টলটলে
আমি সেই চোখ খুঁজে বেড়াচ্ছি;
অঙ্কিত-কামুকী চোখকে রেখে
সেই চোখে চোখ রাখছি!

যে বুকের অলিন্দ-নিলয়ে ছুটে বেড়ায় বাংলা বর্ণমালা
উদ্ধত খুব গুঞ্জরিত যে বুকে হাসন-লালন-পালা
আমি সেই বুক খুঁজে বেড়াচ্ছি;
প্রস্তুতকৃত-আধুনিকা বুককে রেখে
সেই বুকে মুখ লুকাচ্ছি!

যে শরীর জড়ায় বৈশাখী শাড়ি-নবান্নের অন্তর্বাস
দ্বিধা থরথর ফাগুনের টিপে ছড়ায় চৈত্রের সর্বনাশ
আমি সেই শরীর খুঁজে বেড়াচ্ছি;
ছায়াভূক-আদর্শ শরীরকে রেখে
সেই শরীর আলিঙ্গনে জড়াচ্ছি!

যে নিঃশ্বাসে ঝরে ভোরের স্নেহাদ্রতা
আঁজলায় – দুপুরের নিশ্চয়তা
যে গোড়ালি আনে মায়াবী গোধূলি
খোলা চুল – রাতের একাগ্রতা
আমি তাদের প্রেমে পড়ছি!

অনাদ্রিতা,
তোমার সকল অভিযোগ নিঃসঙ্কোচে মেনে নিচ্ছি
আজকাল আমি ভীষণভাবে চরিত্র হারাচ্ছি!..”

December 20, 2014

..‘কবিতা’..

..‘কবিতা’..

“..‘কবিতা’ হলো শব্দের রঙে আঁকা এক বিমূর্ত ছবি
‘কবিতা’ হলো প্রাণের প্রকাশ দীঘির জলে উঠা রবি।
‘কবিতা’, চোখেরই জল
‘কবিতা’ হলো মানব মনের অনুভূতি লাভার ঢল;
‘কবিতা’, মেঘেরই জল
‘কবিতা’ হলো প্রিয়ার নাকে জেগে উঠা শিশির টলমল।
‘কবিতা’, দিগন্তহীন আকাশ
চাওয়া-পাওয়ার ঘুড়ি উড়িয়ে দিয়ে
কাটাকাটি খেলার প্রয়াস,
‘কবিতা’, সুন্দর পিয়াসীর ধর্ম
আবর্জনা মাঝে মাথা উঁচু করা পেলব আভার জন্ম;
‘কবিতা’, পাখির পুষ্প আর ঢেউ-জলে ফুল শয্যা
‘কবিতা’, মুঠো করে ধরা জোস্না আর নববধূর বিনম্র লজ্জা।
‘কবিতা’, খেয়ালের বশে ফেলে রাখা কূলহীন তটিনীর গল্প
‘কবিতা’, প্রিয়ার ঠোঁটের উদাত্ত আহবানে সাড়া দেয়া
– আঙুলের স্পর্শ অল্প!..”

..'এলোমেলো ১ - ৩৩'..

..'এলোমেলো ১'..


"..তোমার অবগুণ্ঠিত মুখ আর বাচাল দু'চোখ
একদিন ঠিকই ধরা পড়ে যাবে;
একদিন ঠিকই আমার কবিতার
শব্দ-ছন্দ-গন্ধগুলো তোমার শরীরে লেগে যাবে!.."

..'এলোমেলো ২'..

"..চুপিসারে সুগন্ধি বকুল
ঝরে পড়ে ছুঁয়ে দেয় তোমার আঙুল
আকাশের সিঁথি বেয়ে
ভেঙ্গে পড়ি আমি ছায়াহীন
ভেঙ্গে পড়ি - অন্যরকম; ঈশ্বরীবিহীন!.."

..'এলোমেলো ৩'..

"..তারপর একটা তারা খুঁজি মৃদু আলোয় খাঁজ কাটা
মেঘের কলসি ঢেলে দিয়ে তাকিয়ে থাকি খুব বোকা;
উঠলে ডেকে রাতের পাখি আঁধার চাদর চিরে
ঘুমায় আমার দু'চোখ তোমার বুকের গন্ধ নিয়ে!.."

..'এলোমেলো ৪'..

"..আসবো প্রার্থনার আঙিনায়
আসবো গোধূলির ফিসফাসে;
জলরঙা মুহূর্তের ঘ্রাণ
যখন ধুলোপথে নেমে আসে!.."

..'এলোমেলো ৫'..

"..নীরব না-দেখা যন্ত্রণায়
দগ্ধ হয়ে ক্ষত-বিক্ষত হই;
অসমাপ্ত কবিতার খাতায়
ঝরে পড়া শুকনো পাতা হই!.."

..'এলোমেলো ৬'..

"..তোমাকে ছোঁবো ভেবে
যখনই হাত বাড়াই;
নিবিড় কুয়াশাতেও
উষ্ণ জোছনা পাই!.."

..'এলোমেলো ৭'..

"..শিশুর গোলাপি হাসি, নারীর স্খলিত খোঁপা
দেয়াল ঘড়ির টিক টিক, শীত রাত্রির নীরবতা
স্পর্শের আঙুল যখন আমার ভেতরে থর থর -
কেমন আছো অভিমানীনি; বলো, তোমার কি খবর?.."

..'এলোমেলো ৮'..

"..খুব গোপনে বেড়ে চলে
গোপন অনেক ঋণ;
ঘাস ফুলের কাছে - বাতাসের কাছে
চুম্বনের কাছে - আলিঙ্গনের কাছে
অনেক গোপন ঋণ!.."

..'এলোমেলো ৯'..

"..কখনও দেখিনি তাঁকে,
কখনও মাখিনি গন্ধ তাঁর
এ শরীরে - ত্বকে;
তবু কেন মনে হয়
আমার অনামিকা
বহু আগেই দিয়েছে সে
তাঁর খোলা চুলে বেঁধে!.."


..'এলোমেলো ১০'..
 
"..অতঃপর, ভেজা চুলের জলে
পিঠ বেয়ে নদী হবে নির্বিকার প্লাবন;
অথবা সমাপ্তি আমার -
স্পর্শাহত তোমার চুলে
আধবোজা ফুলের মতোন!.."


..'এলোমেলো ১১'..
 
"..নারিকেল গাছ যেমন সবুজ চিরুনি দিয়ে
সারাক্ষণ বিলি কাটে হাওয়ার সাদাচুলে;
অনুমতি দিলে, হবো তেমন রবিশঙ্কর
ছুটে যাবো তোমার তনুর সিতারে নিরন্তর!.."


..'এলোমেলো ১২'..
 
"..নাহয় ছুঁয়ে দিয়ে তোমার
জল-জোছনা
ঘুমের ভেতর খুব গাঢ়;
হেঁটে যাবো আঙুলে
চুলের সিঁড়ি
আঁচলে ঢাকা পথ আরও!.."


..'এলোমেলো ১৩'..
 
“..সবারই আছে গল্প বলার
কোন না কোন – সত্যি কথা!
গুঞ্জরিত প্রিয় গানে
লুকানো তাঁদের নাড়ানো ব্যাথা!..”


..'এলোমেলো ১৪'..
 
"..অদ্বিতীয় জীবন কেঁদে ডাকে - 'আয়,
প্রিয়-অপ্রিয় পরিচয়!'
দিন শেষে ঝরে ঝরে যায়
কাম-ক্রোধ-ক্লান্তি-ভয়
মরে যায় ঝরা পাতা, ঝরে যায় মরা পাতা
উড়ে পতাকায় ধ্বংসের বিজয়;
তবু যেন শরীরে আমার
তাঁর সুগন্ধ টিকে রয়!.."


..'এলোমেলো ১৫'..
 
"..কখনো ভাবি, কখনো হাসি
স্তব্ধ সলাজ ত্রাসে
কোন সে জন - তৃতীয় হাঁটে
তোমার-আমার পাশে!.."


..'এলোমেলো ১৬'..
 
"..ভুল করে ঘুমিয়ে পড়েছিল প্রজাপতি
সবুজ ঘাসের উপর
পিছলানো চাঁদ ডুবে গিয়েছিল জলে
তোমার ঠোঁটে আমি - তারপর!.."


..'এলোমেলো ১৭'..
 
"..অলস দৃষ্টি তোমারও
খুঁজে কি ফিরে আমায়;
চেনা-অচেনা মুখ
রোদ-বৃষ্টি-ছায়ায়?.."


..'এলোমেলো ১৮'..
 
"..অভিমান হয়, বড়ো বেশি অভিমান হয়
তুমিও খোঁজো, আমিও খুঁজি
চলে যায় বসন্ত সময়!.."


..'এলোমেলো ১৯'..
 
"..আমি বলেছিলাম আমার ভ্রমণ পছন্দ
আমি বুঝিয়েছিলাম মান-অভিমান-অমিতাভ স্পর্শ;
তুমি বুঝেছিলে নদী-পাহাড়-ঝর্ণা-অরণ্য
আমি বলেছিলাম; তবু তুমি বোঝনিতো!.."


..'এলোমেলো ২০'..
 
"..এস্রাজ সুরে গর্ভবতী কলম আমার
ধুকপুক বুকে লিখে যেত কবিতা অবিরাম,
একটা সময় আমিও ঘুমের নীলাভ অতলে
অনায়াসে ডুবে যেতাম;
ছুটে বেড়ানো তাঁর দু'চোখের সাথে
একটা সময় আমিও অনায়াসে ছুটে বেড়াতাম!.."


..'এলোমেলো ২১'..
 
"..মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে
অদৃশ্য হয়ে যাই;
ছোট-বড় তোর শ্বাস-প্রশ্বাসে
নিটোল মিশে যাই!.."


..'এলোমেলো ২২'..
 
"..এভাবেই কেটে যায় আমার সময়
জোস্নায়-রোদ-জলে মায়াবী সময়;
তবু যেন ভুল করে নীরবে-আড়ালে
তোমার দু'চোখ ভেবে যেন ভুল হয়!.."


..'এলোমেলো ২৩'..
 
"..তবে তাই হোক -
ঘুমিয়ে পড়ুক তোমার ক্লান্ত দু'চোখ;
রাতের আঁধারে নাহয় খুঁজুক
আমার দু'ঠোঁট তাঁর উষ্ণ চিবুক!.."


..'এলোমেলো ২৪'..
 
"..নষ্ট হতে হতে একদিন
আমি কবিতা হবো;
কামনা হবো, দ্রোহ হবো
উচ্ছ্বাস হবো, স্বপ্ন হবো
কবিতা হতে হতে একদিন -
একদিন আমি মানুষ হবো!.."


..'এলোমেলো ২৫'..
 
"..তুমি-আমি হাঁটতে হাঁটতে পথে ফোটা ফুল
বৃষ্টিজলে গা ভিজিয়ে একটা বিশাল ভুল
রাতের আকাশ জুড়ে প্রাসাদ মেঘছোঁয়া চাঁদ কই?
নগরবন্দী একে-অপরের চোখেই ডুবে রই!.."


..'এলোমেলো ২৬'..
 
"..গন্ধ নেবো, অলিন্দ ভরে
তোর শরীরের গন্ধ নেবো;
অন্ধ হবো, আরেকটা দিন
না দেখলে তোকে অন্ধ হবো!.."


..'এলোমেলো ২৭'..
 
"..থাকুক নিম-সাধু সবাই
মুখ লুকিয়ে মুখোশে;
তোমাকেই খুঁজবো আমি
তোমাকে পাবার শেষে!.."


..'এলোমেলো ২৮'..
 
"..সামনে এলেই শব্দ হারাই
'প্রেম'-এর আগে 'প্রথম' বসাই
মুহূর্তের মধ্যে গরম কফি
এখনও যায় জুরিয়ে;
- খুব কি গেছো বুড়িয়ে?.."

..'এলোমেলো ২৯'..

"..স্পর্শ দিও; না হয় তোমার স্পর্শ দিও
আমায় ভেবে
বইয়ের পাতায়
- না হয় তোমার স্পর্শ দিও!.."

..'এলোমেলো ৩০'..

"..ঘুমের মতো গভীর
তোমার স্পর্শ পাবার পরে
আমি দ্রোহী হয়েছিলাম;
জলের মতো স্বচ্ছ
তোমার দু'চোখে চোখ রেখে
আমি প্রতারক হয়েছিলাম

- প্রথা ভাঙার অধরে
আমি চুমু খেয়েছিলাম!.."

..'এলোমেলো ৩১'..

"..আসোনা চলে, মিথ্যে বলে
- আমি এখানেই আছি;
জোনাক ধরে ঘর সাজাবো
আমরা মিছেমিছি!.."

..'এলোমেলো ৩২'..

"..আজ সারাদিন পিপাসায় লীন
তোমার দু'ঠোঁট চাইছি;
'সত্যুক' তুমি শুনতে কি পাও?
- আমি 'মিথ্যুক' বলছি!.."

..'এলোমেলো ৩৩'..

“..তবুও ঘুমের বালিশ আমার
খুঁজবে তোমার চোখের নালিশ
মধ্যাহ্নের নীরব দুপুর
চাইবে পেতে কথার নূপুর
পায়েল হয়ে যাক
রাতের পরে রাত!..”


 
     

..‘লজ্জিত নই; আমি হবো খুব বিব্রত’..

..‘লজ্জিত নই; আমি হবো খুব বিব্রত’..

“..যদি কখনো এমন হয় – অলৌকিক কোন ক্ষমতাবলে
আমার প্রণয় ঘটনাবলী তোমাকে দেখানো হয়
খুব কি লজ্জিত হবো?
নাকি খুব বিব্রত?

তুমি জেনে যাবে – বোরকা পরা এক কিশোরীকে আমি
রাত জেগে লিখেছি অসংখ্য চিঠি
রোদ-বৃষ্টি-জোস্না-মেঘ-শীত-গ্রীষ্ম-বসন্ত
সব কিছু নিয়ে লিখেছি সুদীর্ঘ চিঠি অজস্র
একসময় সে বোরকা ছেড়েছিল, আর
ঢাকা পড়ে গিয়েছিল সবুজ-হলুদ-নীল-গোলাপি
বিভিন্ন রঙের হাতে লেখা কাগজে!
তুমি জেনে যাবে – গান পাগল এক তরুণীর
গলায় সুর ছিলনা বলে আমি তাঁর ঠোঁটে এঁকে দিয়েছি
জানা-অজানা সকল গানের স্বরলিপি
এরপর থেকে সে দারুণ গান গায়
শুনেছি এখন নাকি সে জনপ্রিয় গানের পাখি!
তুমি জেনে যাবে – কাজল পছন্দ করে বলে
একজনের দু’চোখে আমি লেপে দিয়েছি আমৃত্যু কাজল,
একজনের শুভ্র বুকে ছুঁয়ে দিয়েছি নীল পদ্মের শতদল,
এক মহিলার অরণ্য প্রিয় বলে
পার্বত্য অঞ্চলে একসাথে দু’জনের শরীরে
রোপণ করেছি বন্য অনুভূতির অভয়ারণ্য
দারুণ অসন্তুষ্ট বিবাহিতা এক রমণীর
অল্প চুলে মুখ ঢেকে বলেছি – ‘এইতো আমার আঁধার মেঘদল’!
তুমি জেনে যাবে – শত-শত নাম
অগণিত অনুভূতির পদাবলী, অলৌকিক কোন ক্ষমতাবলে
যদি তোমাকে দেখানো হয় আমার প্রণয় ঘটনাবলী!
খুব কি লজ্জিত হবো?
নাকি খুব বিব্রত?
লজ্জিত কিংবা বিব্রত কোনটিই নয়,
এরাই আমার বর্ণমালা; শব্দের সঞ্চয়।
তবে,
আমাদের কাটানো মুহূর্তগুলো যদি তোমাকে দেখানো হয়
লজ্জিত নই; আমি হবো খুব বিব্রত
আমরা যখন পাশে বসে জোনাক জ্বালি
দু’হাত ভরে আমরা যখন রৌদ্র কুড়াই
আমরা যখন আলিঙ্গনে মেঘ নামাই
একে অন্যের ভেতরে যখন খুব লুকাই
তোমার দু’চোখ বন্ধ যখন ঈপ্সিত
- যদি তোমাকে দেখানো হয়, আমি হবো খুব বিব্রত;
তখন তুমি দেখতে পাবে আমার দু’টি চোখ
পলক হারিয়ে গাঙচিল দৃষ্টি গেঁথে নিচ্ছে তোমাকে – বিস্মিত;
আমি হবো খুব বিব্রত
জেনে যাবে তুমি - কখন এ দু’চোখ
বিভ্রান্ত এবং অতল-মুগ্ধ,
লজ্জিত নই; আমি হবো খুব বিব্রত!..”

..‘তোমার শরীর অন্ধ আমার বর্ণমালা’..

..‘তোমার শরীর অন্ধ আমার বর্ণমালা’..

“..ওঁরা আমার নাম জানতে চেয়েছিল - বলেছিলাম
যে নামে আমি আমাকে ধারণ করি - সেই নাম
আমি ওঁদের বলেছিলাম; ওঁরা সন্তুষ্ট হয়নি
আমি জানি - ওঁরা আমার নাম জানতে চায়নি
ওঁরা জানতে চেয়েছিল আমার বংশ, গোত্র, ধর্ম
আমাকে ওঁরা জানতে চায়নি, চেয়েছিল জানতে
আমার দেয়ালে কতোটা হয় ওঁদের প্রতিধ্বনি!

ওঁরা আমার বয়স জানতে চেয়েছিল - বলেছিলাম
পৃথিবীর ইতিহাস যত দিনের - ৪,৫০০ মিলিয়ন বছর
আমি ওঁদের বলেছিলাম; ওঁরা সন্তুষ্ট হয়নি
বলেছিলাম - ‘মানুষ তার জ্ঞানের সমবয়সী’
ওঁরা সন্তুষ্ট হয়নি, বলেছিল - বেশীদিন বাঁচবো না আমি;
‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান দীর্ঘজীবী’ - বলেছিলাম
ওঁরা সন্তুষ্ট হয়নি।
ওঁরা যা জানে - তাই জানতে চায়
ওঁরা যা জানে না - তা জানতে চায় না
ওঁরা আমাকে ওঁদের মতো দেখাতে চেয়েছিল
আমি দেখতে চাইনি; তাই
ওঁরা সন্তুষ্ট হয়নি।
ওঁরা আমার হাত টেনে নিয়ে কোথাও রেখে বলেছিল -
এর নাম ‘বিদ্রোহ’ - আমি বলেছিলাম ‘ঠোঁট’
আবার সরিয়ে নিয়ে অন্য কোথাও রেখে বলেছিল -
এর নাম ‘ঔদ্ধত্য’ - আমি বলেছিলাম ‘বুক’
ফের সরিয়ে নিয়ে অন্য কোথাও রেখে বলেছিল -
এর নাম ‘ধ্বংস’ - আমি বলেছিলাম ‘জন্ম’
ওঁরা আমাকে জন্মান্ধ বলেছিল
বলেছিল - আমি সত্য-মিথ্যা আলাদা করতে পারি না
ওঁরা জানে না -
তোমার শরীর অন্ধ আমার বর্ণমালা
এখানে কোন মিথ্যা নেই
- এই সত্য ওঁরা জানে না!..’’

..'স্মৃতিচারণ বলতে কিছু নেই'..

..'স্মৃতিচারণ বলতে কিছু নেই'..

“..স্মৃতিচারণ বলতে কিছু নেই,
স্মৃতিচারণ বলতে কিছু নেই কবিদের
স্মৃতিতেই তো তাঁদের বসবাস
তপ্ত রোদে-জোস্নালো রাতে-কুয়াশাঘেরা সকালে-ঝিঁ ঝিঁ ময় গোধূলিতে
স্মৃতিময় তাঁদের চারপাশ
স্মৃতির শেকলে বাঁধা পড়া মানুষ, স্মৃতির আবছা নীলাভ ফানুস
হাতছানি দিয়ে ডাকে; স্মৃতির হাওয়ায় দোলে না চুল কার?
কে ফেলে না আঁখিজল, স্মৃতিপাঠে?

কবি স্মৃতিকাতর প্রতি পথে-প্রতি প্রহরে-প্রতি শব্দে-প্রতি ছন্দে
কবির পথচলায় সঙ্গী কেবল স্মৃতি; তাঁর না পাওয়ায়, তাঁর হতাশায়
স্মৃতিময় কবিতাই সুখ প্রতীতি!
কবি জলের শীর্ষাগ্রে দেখে প্রিয়র হাসি, লতার অবগুণ্ঠনে লজ্জা
রাজপথের বাঁকে দেখে রুঢ়তা, গাছতলে ফুলশয্যা
কবি তাঁর হাতের মুঠোয় ধরে অবারিত স্বপ্ন, চোখের তারায় ভাবালুতা
অগোছালো শব্দে রাখে নিজেকে লুকিয়ে, হৃদস্পন্দনে ব্যাকুলতা
স্মৃতিচারণেই তাঁর পূর্ণতা হয়; যার প্রকাশ ঘটে তাঁর কাব্যে
কখনো সে উদ্ধত, কখনো সে কামুক - স্মৃতির ডানা ঝাপটানো শব্দে!
সকল কবিই মানুষ যদিও সকল মানুষ নয় কবি
মানুষ তখনি কবি হয় যখন সাদা-কালো স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে
নিরঙ শব্দের তুলি দিয়ে আঁকে সে রঙিন ছবি!
কবির ভুবনে স্মৃতিচারণ তাই আকাশের মতো
যার নিচে আবাস সকল অনুভূতির
স্মৃতির মেঘজলেই তাঁর নিরন্তর স্নান,
স্মৃতির রৌদ্রালোকেই সমাধি –
কবির আত্মাহুতির!..”

..‘আমি এড়িয়ে যেতে পারি প্রায় সব’..

..‘আমি এড়িয়ে যেতে পারি প্রায় সব’..

“..আমি বিশ্বাস করি মানব এবং মানবী সৃষ্টির আগে
সৃষ্টিকর্তার পাশে ছিল একটি প্রেমি হৃদয়,
আমি বিশ্বাস করি একদিন ধ্বংস হবে সব
শুধু ধ্বংসস্তূপের উপর - থেকে যাবে প্রেম; অনন্ত-অক্ষয়!

আমার সম্মুখ হতে সরিয়ে নাও তোমার চুল -
অগণিত, অযাচিত অমানিশার গাঢ় প্রতিশ্রুতি
এখানে কোন প্রেম নেই - আছে চিরায়ত শৃঙ্খল
হয়তো শুধু দেখবো; কিন্তু এড়িয়ে যাবো আমি ঠিকই
সরিয়ে নাও তোমার স্নিগ্ধ জোড়া করতল -
মেহেদী রঙে ঢাকা আধ্যাত্মিক প্রশান্তির দূর্বার আহবান
এখানে প্রেম নেই - আছে স্বার্থের প্রস্ফুটিত শতদল
হয়তো শুধু দেখবো; কিন্তু এড়িয়ে যাবে ঠিকই আমার গর্ব নৈব্যক্তিক প্রাণ
আমি চাইনা সম্মুখে তোমার পেলব উরু - পুঁজিবাদ
চাইনা তোমার উল্লম্ফিত বুক - সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের ফাঁদ
সরিয়ে নাও ক্রমহ্রাসমান কোমর - প্রতিজ্ঞাবদ্ধ কল্যাণ
চাইনা তোমার অপসৃয় নিতম্ব - অস্তিত্ব নাশের গিরিখাদ
এগুলোতে কোন প্রেম নেই; আছে শুধু বিলুপ্তি
হয়তো শুধু দেখবো; কিন্তু এড়িয়ে যাবো আমি ঠিকই
আমার যে দু’চোখ বধির - পিপাসার্ত
আগ্রহী খুব সবকিছু গেঁথে নিতো
এড়িয়ে যায় আজকাল তন্দ্রালু-আনমনা
অন্যকিছু হলেও হতে পারে আমার
মিথ্যে প্রতিশ্রুতি, অবগুণ্ঠিত শান্তি আর
লালায়িত পুঁজিবাদ - কখনোই আমার না!
আমার কেন যেন শুধু চোখ ভরে যায় জলে
বাহিরে যখন দারুণ বসন্ত; ভেতরে ভেতরে
আমি পুড়ে যাই দাবানলে!
আজকাল আমি এড়িয়ে যেতে পারি প্রায় সব
প্রিয়জন হারানোর বেদনায় অভিনীত বহুল চর্চিত - জলে ভেজা চোখ
অগোচরে উঁকি দেয়া জাগরণের স্বার্থসিদ্ধি - বুক বন্ধনীর ফিতে
শুভ্র উরুর গুটানো কাপড়ে লুপ্ত - দেশাত্মবোধ আমার
এগুলোতে প্রেম নেই; তাই আলোড়িত হই না
আজকাল আমি এড়িয়ে যেতে পারি প্রায় সব
শুধু সাদা কাগজ আর প্রেমে থরোথরো ঠোঁট
এড়াতে পারি না!..’’