June 30, 2012

“..ফিরে এসো গুনগুন..”

“..ফিরে এসো গুনগুন..”

“..আগে ভাবতাম –
পারি, আমি অনেক কিছুই পারি

চোখ বন্ধ করে নিমেষেই কল্পনা করতে পারি
বাংলার মুখায়ব, নৈসর্গিক গ্রামীণ দৃশ্য
ফসল কেটে বাড়ি ফেরার পথে গোধূলির রুপালি
আলোয় উদ্ভাসিত কৃষকের মাংসল পেশী
কৃষাণীর কোমরে গোঁজা শত কুঞ্চিত শাড়ির আঁচল
মাটির চুলার কালো ধোঁয়া ছাপিয়ে মুখে লাজ-চাপা হাসি
ঘাড় বাঁকিয়ে বাক-বাকুম ডেকে ওঠা কবুতরের ফুলে ওঠা পালক
সবাই ঘুমিয়ে পড়া মাঝ রাতের স্তব্ধ পুকুরে আন্দোলিত চাঁদের আলোক !

অনায়াসে কণ্ঠে তুলে নিতে পারি
রবীন্দ্রনাথের আড়াই হাজার এবং নজরুলের
চার হাজার তিন শত ছাব্বিশটি গান
আর একটু কুহু – বিবাগী কোকিলের,
একটু কর্কশতা – ধূর্ত কাকের,
একটু চঞ্চলতা – অস্থির চড়ুইয়ের,
আর একটু মাদকতা – ঝরে পড়া শুকনো পাতার !

মুঠোফোনে তার একটু ভারী প্রশ্বাস শুনেই
পারি ঝুম বৃষ্টির মতো কথার বর্ষা নামিয়ে
স্বপ্নের বড়ো বড়ো ফোঁটায় তাকে আমূল ভিজিয়ে
বুকের ঠিক মাঝখানটায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে
স্পন্দিত উষ্ণতায় শুষ্ক করতে তার ভেজা শরীর
স্পর্শিত অনুভবে ডুবে যেতে তার ভেতর – বাহির
ছন্দিত চুম্বনে সিঁদুর – রাঙা করে তুলতে তার ওষ্ঠ এবং অধর !

কিন্তু এখন দেখি
আমার সদ্য ফোঁটা হাসনাহেনায় নেই পৌরাণিক মৌতান
তার ছোটো-বড়ো-মাঝারি পাপড়িগুলোতে
লেগে আছে শুধু জোসনা
পারিনা, এখন আমি অনেক কিছুই পারিনা !

বন্ধ চোখ নিমেষেই অন্ধ হয়ে যেতে চায়
পিপাসার্ত কণ্ঠ অনায়াসে স্তব্ধ হয়ে যেতে চায়

ইচ্ছে করে – শহরের সবচেয়ে উঁচু দালানটার ছাদে
দাঁড়িয়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলি –
তার বুকের বাম দিকে খানিকটা নিচে
যেখানে রয়েছে ছোট্ট একটা তিল
ওখানেই-তো আমার আজন্ম বসবাস,
আমার স্নানঘর,
আমার নিদ্রা-বিলাস !

ইচ্ছে করে – গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলি -
আমি পারবোনা মেটাতে চারপাশে আমার
জমে আছে যে সকল ঋণ;

একবার, ইচ্ছে করে, একবার তার কানের কাছে
মুখ রেখে আস্তে করে বলি –

‘ফিরে এসো গুনগুন, আমি ফিরিয়ে দেবো
তোমার বিনিদ্র, অশ্রুসিক্ত
এক বছর-দুই মাস এবং চৌদ্দ দিন’ !..”

June 28, 2012

..‘এলোমেলো ১ - ৫’..

..‘এলোমেলো ১ - ৫’..

..‘এলোমেলো-১’..

“..আমার স্বপ্নে আমি ভিজি
তোমার স্বপ্নে তুমি;
এক-ই আকাশ মাথার উপর
ভিন্ন শুধু ভুমি !..’’

..‘এলোমেলো-২’..

“.. ‘আর কিছু থাকুক না থাকুক
কেন সারাক্ষণ ঐ মিউজিক প্লেয়ার-টা
থাকে তোমার গলার কাছে?’

‘মিউজিক প্লেয়ার কোথায়?
আমি তো দেখি ওটা তোমার দু’হাত –
আমার গলায় জড়িয়ে আছে’ !..’’

..‘এলোমেলো-৩’..

“..যেদিন নেবো বিদায়
পৃথিবী ছেড়ে, প্রিয় –
ঐ চোখ চুমে আসা জল দিয়ে
লাশ আমার ধুয়ে দিও !..’’

..‘এলোমেলো-৪’..

“..অতৃপ্ত এ হৃদয়টাকে ছুঁড়ে দিও
কোন এক ক্ষুধার্ত কুকুরের মুখে –
আমার মৃত্যুর পরে;
ভালোবাসায় পূর্ণ ছিল এটা
শুধু ছিল না সাহস – ভেতরে !..’’

..‘এলোমেলো-৫’..

“..শেষ বলতে কিছু নেই
বিশ্বাস হবে সেদিন;
আমার মৃতদেহের সামনে
তোমার ভেজা দু’চোখ মুছাতে
নিথর দু’ঠোঁট হঠাৎ করে
উঠবে কেঁপে যেদিন !..’’

June 22, 2012

“..অনাদ্রিতার কাছে চাওয়া..”

“..অনাদ্রিতার কাছে চাওয়া..”

“..অনাদ্রিতা,
চাচ্ছি না আমার হৃদপিণ্ডের রিক্টার স্কেলে
নয় মাত্রার কম্পন ঘটিয়ে মুঠোফোনের পর্দায়
জ্বলে উঠুক তোমার নাম;
ভেজা গোলাপের গন্ধ ছড়িয়ে বৃষ্টির মতো
নামুক আমাদের কথোপকথনঃ

‘আজ সবুজ শাড়ি পড়বো’
‘অরণ্যের মতো?’
‘না, সবুজ – তোমার কবিতার মতো!
আজ শিশু একাডেমীতে গাইবো, তুমি আসছো তো?’
‘না, সময় হবে না,’

শ্রবণেন্দ্রিয় দিয়েই দেখতে পেতাম খানিকটা সরে যাওয়া
তোমার মুখ, অনেকটা জলে ভেজা তোমার চোখ;

‘তুমি কি কাঁদছো?’
‘নাতো! চোখে কি যেন একটা পড়লো!’

চাচ্ছি না আমার সারা শরীরের লোমকূপগুলোকে
শিহরিত করে কাজলে রাঙানো প্রসারিত চোখে
অলঙ্ঘনীয় আহবান; আলতো করে ধরে রেখে আমার অনামিকা
ভাসুক আমাদের কথোপকথনঃ

‘কাল একসাথে ঘুরবো’
‘গৃহহীনদের মতো?’
‘না, একসাথে – তোমার দু’ঠোঁটের মতো!
কাল পহেলা ফাল্গুন, একসাথে রিকশায় ঘুরবো, তুমি যাবে তো?’
‘না, সময় হবে না,’

কি নির্দ্বিধায় তোমার মোমের মতো তনু
বেয়ে নামতো কাজলের গাঢ় কালো;

‘তুমি কি কাঁদছো?’
‘নাতো! চোখে কি যেন একটা পড়লো!’

চাচ্ছি না ঝড়ের মতো লণ্ডভণ্ড করে দাও শরীর আমার
অতঃপর একটু নিঃশ্বাসের খোঁজে তোমার ঠোঁটে রাখা
আমার শ্রান্ত দু’ঠোঁট কম্পিত হোক
তোমার প্রশ্বাসের ভৈরবীতে;
গুঞ্জরিত হোক আমাদের কথোপকথনঃ

‘আর একটু ধরে রাখো’
‘লতার মতো?’
‘না, ধরে রাখো – গান শেষে তোমার গুনগুনের মতো!
আর একটু ধরে রাখো নিবিড় করে, রাখবে তো?’
‘না, সময় হবে না,’

কি দ্যার্থক তোমার থরোথরো কায়া
প্রচণ্ড বাতাসে উড়ে যাওয়া টিনের চালের মতো
দ্রুত মুখ লুকাতে, টেনে নেয়া দু’হাতে;

‘তুমি কি কাঁদছো?’
‘নাতো! চোখে কি যেন একটা পড়লো!’

চাচ্ছি না মুগ্ধতা, অনুরাগ, ক্ষণিক স্পর্শ, হিমায়িত সুখ
চাচ্ছি না স্তব্ধতা, আয়োজন, উত্তাল কামনা, পরিতৃপ্ত বুক

চাচ্ছি জানাতে – আমার এখন প্রচুর সময়
চাচ্ছি জানতে – এখনও তুমি আছো পাশে আগেরই মতো

চাচ্ছি তুমি দেখো চশমার কাঁচের ওপাশে
আমার দু’চোখ আজ ঝাপসা অনেক

অনাদ্রিতা, চাচ্ছি তুমি বলো –

‘তুমি কি কাঁদছো?’

চাচ্ছি, ভীষণ চাচ্ছি, আমি শুধু বলি –

‘নাতো! চোখে কি যেন একটা পড়লো!’..”

June 15, 2012

..‘এলোমেলো ১ - ৫’..

..‘এলোমেলো ১ - ৫’..

..‘এলোমেলো-১’..

“..বাংলার মাটি ভরে গেছে
‘অমর’দের কবরে;
বাংলার চ্যানেল ভরে আছে
মগজহীনদের খবরে !..’’

..‘এলোমেলো-২’..

“..মেয়েদের ‘ছিঁচকাঁদুনে’ বলে
অপমান করে যারা;
স্বাধীন বাংলায় ভণ্ড হুজুরদের ওয়াজ
শোনেনি কখনও তারা !..’’

..‘এলোমেলো-৩’..

“..তোর পছন্দ ‘হিন্দি’,
তোর বাবার পছন্দ ‘আরবি’
তোর কাছে একটা-ই অনুরোধ
যদি কখনও বলতে চাস – ‘ভালোবাসি’
‘বাংলা’তেই তা বলবি !..’’

..‘এলোমেলো-৪’..

“..রাস্তায় উলঙ্গ পাগলী দেখে
তুমিও কি হও ততোটাই বিব্রত,
ঠিক যতোটা রাজনীতিবিদদের
দেখে আমি হই লজ্জিত ?..’’

..‘এলোমেলো-৫’..

“..অন্য পুরুষ যাতে না দেখে তোমায়
তাই বোরকায় ঢেকেছো নিজেকে;
তুমি যে দেখছো অন্য পুরুষকে
বলো, এর সমাধান কি হবে ?..’’

June 10, 2012

..‘এলোমেলো ১ - ৬’..

..‘এলোমেলো ১ - ৬’..

..‘এলোমেলো-১’..

“..ঘুমিয়ে যদি যাই কখনও
তুই ঘুমাবার আগে;
আর কিছু নয়, তোর একটি হাত
যেন আমায় জড়িয়ে রাখে !..’’

..‘এলোমেলো-২’..

“..যেই আমি ঝুম বাদলের মতো
কথার বৃষ্টি নামাই;
সেই আমি তোর ঠোঁটে রেখে ঠোঁট
সকল শব্দ হারাই !..’’

..‘এলোমেলো-৩’..

“..ছুঁয়ে যদি যাই সারাদিনও
তোর চোখ, ঠোঁট, বুক, গলা;
জানি তবু, তোকে চাই কতোটা
হবে না কখনও বলা !..’’

..‘এলোমেলো-৪’..

“..মন-ই শুধু জানে
কে আছে হৃদয়ের খুব কাছে;
তুমি ছাড়া গান শোনাবো কাকে
আমি ছাড়া ভালবাসবে কাকে !..’’

..‘এলোমেলো-৫’..

“..এ পৃথিবীর যতো প্রেমিক-প্রেমিকা
যখন ছোঁয় একে অপরের ঠোঁট
সকলের ঠোঁটে আমি ছুঁয়ে যাই তোকে
তাদের ঠোঁট-ই আমাদের ঠোঁট !..’’

..‘এলোমেলো-৬’..

“..প্রচণ্ড গরম ঘামছি ভীষণ
মুখ মুছবো কিসে ?
না পাই যদি ওড়না তোমার
বলো, তার প্রয়োজন কিসে ?..’’