“..ফিরে এসো গুনগুন..”
“..আগে ভাবতাম –
পারি, আমি অনেক কিছুই পারি
চোখ বন্ধ করে নিমেষেই কল্পনা করতে পারি
বাংলার মুখায়ব, নৈসর্গিক গ্রামীণ দৃশ্য
ফসল কেটে বাড়ি ফেরার পথে গোধূলির রুপালি
আলোয় উদ্ভাসিত কৃষকের মাংসল পেশী
কৃষাণীর কোমরে গোঁজা শত কুঞ্চিত শাড়ির আঁচল
মাটির চুলার কালো ধোঁয়া ছাপিয়ে মুখে লাজ-চাপা হাসি
ঘাড় বাঁকিয়ে বাক-বাকুম ডেকে ওঠা কবুতরের ফুলে ওঠা পালক
সবাই ঘুমিয়ে পড়া মাঝ রাতের স্তব্ধ পুকুরে আন্দোলিত চাঁদের আলোক !
অনায়াসে কণ্ঠে তুলে নিতে পারি
রবীন্দ্রনাথের আড়াই হাজার এবং নজরুলের
চার হাজার তিন শত ছাব্বিশটি গান
আর একটু কুহু – বিবাগী কোকিলের,
একটু কর্কশতা – ধূর্ত কাকের,
একটু চঞ্চলতা – অস্থির চড়ুইয়ের,
আর একটু মাদকতা – ঝরে পড়া শুকনো পাতার !
মুঠোফোনে তার একটু ভারী প্রশ্বাস শুনেই
পারি ঝুম বৃষ্টির মতো কথার বর্ষা নামিয়ে
স্বপ্নের বড়ো বড়ো ফোঁটায় তাকে আমূল ভিজিয়ে
বুকের ঠিক মাঝখানটায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে
স্পন্দিত উষ্ণতায় শুষ্ক করতে তার ভেজা শরীর
স্পর্শিত অনুভবে ডুবে যেতে তার ভেতর – বাহির
ছন্দিত চুম্বনে সিঁদুর – রাঙা করে তুলতে তার ওষ্ঠ এবং অধর !
কিন্তু এখন দেখি
আমার সদ্য ফোঁটা হাসনাহেনায় নেই পৌরাণিক মৌতান
তার ছোটো-বড়ো-মাঝারি পাপড়িগুলোতে
লেগে আছে শুধু জোসনা
পারিনা, এখন আমি অনেক কিছুই পারিনা !
বন্ধ চোখ নিমেষেই অন্ধ হয়ে যেতে চায়
পিপাসার্ত কণ্ঠ অনায়াসে স্তব্ধ হয়ে যেতে চায়
ইচ্ছে করে – শহরের সবচেয়ে উঁচু দালানটার ছাদে
দাঁড়িয়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলি –
তার বুকের বাম দিকে খানিকটা নিচে
যেখানে রয়েছে ছোট্ট একটা তিল
ওখানেই-তো আমার আজন্ম বসবাস,
আমার স্নানঘর,
আমার নিদ্রা-বিলাস !
ইচ্ছে করে – গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলি -
আমি পারবোনা মেটাতে চারপাশে আমার
জমে আছে যে সকল ঋণ;
একবার, ইচ্ছে করে, একবার তার কানের কাছে
মুখ রেখে আস্তে করে বলি –
‘ফিরে এসো গুনগুন, আমি ফিরিয়ে দেবো
তোমার বিনিদ্র, অশ্রুসিক্ত
এক বছর-দুই মাস এবং চৌদ্দ দিন’ !..”
No comments:
Post a Comment