..‘তোমাকে চুমু খেতে আমার দারুণ অনীহা আজকাল’..
“..তোমাকে চুমু খেতে আমার দারুণ অনীহা আজকাল
দারুণ অনীহা আজকাল তোমাকে চুমু খেতে
তোমাকে চুমু খাওয়ার পর পরই আমার কণ্ঠনালীতে
জন্ম নেয় এক বিমূর্ত ছাঁকনি, যেখানে আটকে যায়
মিথ্যে স্তাবকতা, তৈলাক্ত তোষামোদ, দ্যার্থকতা
বের হয়ে আসা আমার আন্তর নিটোল গোলাপ শব্দগুচ্ছ
ধারালো ছুরির মতো বিকট শব্দে ফোটাতে থাকে
চারপাশে খুব উঁচুতে উড়তে থাকা রঙিন বেলুন অগণিত
বিদ্ধ করতে থাকে, টুকরো টুকরো করতে থাকে
বিষাক্ত লালায় সিক্ত, ক্ষুধার্ত কালচে হৃদপিণ্ড অজস্র
আমার স্নিগ্ধ, কোমল, সুবাসিত শব্দগুচ্ছ ভেঙ্গে দেয়
তাদের অহমিকার ইমারত সুদৃশ্য;
ওদের চোখে ঝরা ফুল হই আমি
আমার উচ্চারিত শব্দেরা হয় খুনি !
দারুণ অনীহা আমার আজকাল তোমার চোখে চোখ রাখতে
তোমার চোখে চোখ রাখার পর পরই আমার দৃষ্টিতে
জন্ম নেয় এক অদ্ভুত ফ্রেম, যেখানে স্থান পায় শুধু
শিল্পিত শুভ্র, স্বাধীন সুন্দর, আধুনিকতা
প্রসারিত আমার পিপাসার্ত চোখের ফ্রেম যখনই
মেলে ধরি চারপাশে, একে একে অদৃশ্য হতে থাকে
সমাজের এবং জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ
অজস্র প্রার্থনালয়, শিক্ষালয়ের শরীরে বিশাল শূন্যতা
ঘুরে বেড়ানো অসংখ্য তরুণ-তরুণীর প্রত্যঙ্গহীনতা
সিংহাসনগুলোতে বসে থাকা দেবতাদের স্কন্ধের উপর ফাঁপা
পুরো ফ্রেম জুড়ে শূন্যতা, নৈব্যক্তিকতা
আমার দু’চোখে গেঁথে থাকে ভয়ংকর বস্তুহীনতা !
দারুণ অনীহা আমার আজকাল তোমায় জড়িয়ে ধরতে
তোমাকে জড়িয়ে ধরার পর পরই আমার শরীরে, মননে
জন্ম নেয় এক বৈপ্লবিক ধর্ম, যা ধারণ করতে বলে
সূক্ষ্ম মানবতা, কাঙ্ক্ষিত সাম্যতা, ভালোবাসা
বোধের দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হয়ে শ্রবণে আমার
আছড়ে পড়ে চিৎকার শোষিতের, অত্যাচারিতের
হোঁচট খেয়ে উল্টানো নখ নিয়ে থমকে দাঁড়ায়
রক্তাক্ত আমার দু’পা সাজানো সাইনবোর্ডে – ভুল পথের
আমার হাত থেকে হঠাৎ পড়ে যায়, ছিঁড়ে যায়
সুদৃশ্য মলাটে বাঁধা বানানো ইতিহাসের বই
রক্তবমি করে উগড়ে দেয় পাকস্থলী আমার
লোভের মশলায় মাখানো বিষাক্ত খাবার
ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠে শরীর আমার হারিয়ে উষ্ণতা
আগুন-চুলার মাঝে থেকেও শীতার্ত
ফিরে ফিরে করে আবৃত্তি – ‘ভালোবাসা, মানবতা’ !
আপাদমস্তক প্রেমিক আমি তাই মিথ্যে বলবো না
এ সমাজেই আমার বসবাস, ছেড়ে যেতে পারবো না
জলে ভরা মেঘ না-ও যদি পাই
ভালোবেসে জন্ম দেবো শীতল দখিন হাওয়া ;
তাই তোমাকে ভালবাসতে আজকাল, সত্যি বলছি –
আমার দারুণ অনীহা !..’’
No comments:
Post a Comment