January 21, 2014

..‘শুদ্ধতম মাটি কোথায় পাওয়া যায়, বলতে পারবি?’..

..‘শুদ্ধতম মাটি কোথায় পাওয়া যায়, বলতে পারবি?’..

“..‘শুদ্ধতম মাটি কোথায় পাওয়া যায়, বলতে পারবি?’
- জিজ্ঞেস করেছিল বকুল আপা – আমার কৈশোরের আকাংখিতা
- ‘যে মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরি করা হয়?’
- পাল্টা প্রশ্ন করেছিলাম, উত্তর দিতে পারিনি;
বৃষ্টির প্রলেপ মাখানো হাসি দিয়ে আপা বলেছিল –
‘আগে আমার উত্তর তারপর তোর!’
আমি তখনও বৃষ্টিস্নাত – উত্তর দিতে পারিনি!

এরপর শরীরের দৈর্ঘ্য-প্রস্থের মাপ
পরিবর্তিত হয়েছে বহুবার, আকস্মিকভাবে স্বামীচ্যুত
বকুল আপা আমাকে শিখিয়েছে অনুভূতির ব্যাখ্যা
শিখিয়েছে চোখ চাহনি – আঁকড়ে ধরা
মনের জলে শব্দ জালে জলজ জোস্না বন্দী করা
তারপর একদিন দুপুরে সবাই যখন মোড়া ঘুমের চাদরে
গায়ের সুবাস ঢেলে দিয়ে সে বলেছিল –
‘ইস! তুই যদি কবি হতিস!’
সেদিন রাতেই গ্রামে চলে গিয়েছিল তাঁরা; সব নিয়ে
শুধু আমার গলায় গাঢ় নখের দাগ ছাড়া!

এরপর চলে গেল অজস্র ফাগুন – রোদে জ্বলে
চলে গেল কতো অসংখ্য শ্রাবণ – ঝরে ঝরে
স্মিতার হাসি শিখিয়েছিল দ্যুতি ছড়ানোর কৌশল
বীথির দৃষ্টি শিখিয়েছিল সারিবদ্ধ স্বাপ্নিক প্রদর্শন
বর্ণমালার এক একটি বর্ণ অন্যান্য বর্ণের সাথে
বর্ণিল করেছিল আমায় কখনো একা; কখনো দল বেঁধে!

বুকের মাঝে গর্ত করে, পায়ের শুভ্র পদ্ম নিংড়ে
মেঘ নামিয়ে শিশির দেয়া – পাথর কেটে ধুলোর কেয়া
চন্দ্রাহত – স্পর্শাহত – বেদনাহত হওয়া
হাতের মুঠোয় নদী নিয়ে – ঠোঁটে কাজল কালো ছুঁয়ে
আঙুল রেখে জলাধারে অনিমেখ কম্পন দেখা
শিখেছিলাম অনেক কিছুই – কখনো যুগল; কখনো একা!

বকুল আপার প্রশ্নের উত্তর আমি তখনও দিতে পারিনি!
শিক্ষকরা বলেছিল – মাতৃভূমি
কৃষকরা বলেছিল – পলিমাটি
ব্যাবসায়িরা – স্ফটিক; রাজনীতিবিদেরা – মোজাইক
বকুল আপার প্রশ্নের উত্তর আমি তখনও খুঁজে পাইনি!

সেদিন একজন কবিকে জিজ্ঞেস করলাম –
‘শুদ্ধতম মাটি কোথায় পাওয়া যায়, বলা যাবে?’
তিনি বললেন –

‘যেখানে উড়ে রুদ্রের চিঠি, বোদলেয়ারের মেঘদল
যেখানে বিসর্জিত নারী-পুরুষের অর্জিত বোধ সকল
যে ঘর অনাহূতেরে ডাকে আহূতের সুরে-স্বরে
পতিতালয়ের প্রবেশদোরেই শুদ্ধতম মাটি আছে পড়ে!’

বকুল আপার প্রশ্নের উত্তর আমি এখনও দিতে পারিনি!
প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি ঠিকই – তাঁকে আর খুঁজে পাইনি!..”

January 17, 2014

..‘নারী আরাধ্য আমার, কবিতা - আশ্রয়’..

..‘নারী আরাধ্য আমার, কবিতা - আশ্রয়’..

“..নারী আরাধ্য আমার, কবিতা – আশ্রয়
শিল্পে দু’হাত উত্তোলিত – প্রার্থনায় নয়!

হাজার বছর ধরে এসেছে অনেক জীবন বিধান
স্বার্থ দিয়ে ঘেরা, সীমাবদ্ধতায় মোড়া, উদ্দেশ্য সরল
দোঁহায়-মন্ত্রে-স্তোত্রে-আয়াতে একঘেয়ে বিভাজন
কুয়াশা নেই এখানে; নেই নিঃস্বার্থ নৈব্যক্তিকতা
লোভ আর লালসায় পরিপূর্ণ অবিকশিত কথকতা
নিরন্তর প্রার্থনার একই রুপ – স্বেচ্ছাচারিতা
অগণিত মহামানবের একই বানী – অপাপবিদ্ধতা!

আমি অনুসারীদের দিয়েছিলাম কিছু কাগুজে নোট
অসংখ্য বিধি-নিষেধের বিনিময়ে তাঁরা দিয়েছিল আশ্বাস
অসীম আয়ুষ্কাল – স্বচ্ছ বিপরীত লিঙ্গ – অনায়াস সুখ
তাঁদের শব্দগুচ্ছে ছন্দ ছিল, দ্যোতনা ছিল, ছিল না পক্ষপাতহীনতা
আমার রাত কেটেছিল নির্ঘুম – চোখের পাতায় নিষেধ ভাঙ্গার ভয়
নারী এসে দিল সৃজনশীল তন্দ্রা; কবিতা দিল আশ্রয়
তারা আবৃত ছিল – সহজবোধ্য ছিল – ছিল পশ্চাৎপদ আঁধার
দ্রোহানলে পুড়িয়ে নারী ও কবিতা আমায় মানুষ করলো আবার
হয়তো কখনো পাপড়ি দিয়েছি – নারী খুলে দিয়েছে বাগান
অথবা কখনো আকাশ দিয়েছি – সে জল দিয়েছে শিশির সমান
হয়তো কখনো ‘সাদা’ কবিতা পড়ে আমিও হয়েছি ‘সাদা’
অথবা কখনো ‘কালো’ কবিতায় মেখেছি কালোর কাদা!

পবিত্র বিধানের বাক্যগুচ্ছ জড়ায়নি আমাকে
যেভাবে জড়িয়েছে নারী;
ছোঁয়নি যূথবদ্ধ তাঁদের প্রাচীন বিধি
তৃষিত শ্রবণ আমারই!

নারীর মত উন্মুক্ত অথচ দুর্বোধ্য – আর কেউ নেই
সে আমার আরাধ্য তাই – যার যা খুশি বলুক
কবিতার মত সার্বজনীন অথচ আকাঙ্ক্ষিত – আর ফুল নেই
সে আমার আশ্রয় তাই – যে রঙেই তা ফুটুক!

আমার বোধে, পরিশ্রমে – প্রাপ্তিটুকু আসুক
অপেক্ষায় নেই অদৃশ্য অলস মেঘদল নামুক
নারী আরাধ্য আমার, কবিতা – আশ্রয়
শিল্পে দু’হাত উত্তোলিত – প্রার্থনায় নয়!..”

..‘কথকতা’..

..‘কথকতা’..

“..তোমাদের কমলা রঙের উচ্ছ্বাসের ভেতর
বিষাদের সবুজ মেশাতে পারিনি
কারো নৈশব্দের শান্ত নদে
‘ভোঁ’ বাজানো জাহাজ হয়ে উঠিনি
তারাগুলো নৈমিত্তিক আড়াল হলে
ভাবি,
এ বুঝি আমারই দারিদ্র –
আকাশ থেকে এখনও কোন
তারা নামাতে শিখিনি,
জলে তারার প্রতিবিম্ব দেখে
কবিতা লিখেছি
কখনো ঊর্ধ্বে চেয়ে দেখিনি,
জলে চাঁদ দেখা যায় –
পূর্ণ গোলক;
জোসনার কথা শুনেছি অনেক
জলে ছুঁয়ে তারে কখনো পাইনি

জলে ডুবে পাওয়া যায় কি?

জল নাকি বাষ্পের পাখা মেলে!

জলে পাওয়া যায় না কি?..”

January 12, 2014

..‘নষ্ট ছিলাম না, ভ্রষ্ট ছিলাম’..

..‘নষ্ট ছিলাম না, ভ্রষ্ট ছিলাম’..

“..নষ্ট ছিলাম না, ভ্রষ্ট ছিলাম
ভিন্ন ছিলাম, স্বতন্ত্র ছিলাম
অসাধারণ ছিলাম না, অতি সাধারণ ছিলাম
স্বপ্নাবিষ্ট যাত্রী দলে মুখোশহীন আমি শামিল ছিলাম
‘মানুষ’ আমি ভীষণ ‘প্রেমিক’ রৌদ্র-জলে স্তব্ধ ছিলাম!

কাঁঠালচাঁপায় সুবাসিত বুকের গন্ধে মগ্ন ছিলাম
চোখের কৃষ্ণ-গহবরে সমর্পিত নভোচারী ছিলাম
দশ আঙ্গুলের পিয়ানোতে গুঞ্জরিত সুর তুলেছিলাম
কম্পিত ওষ্ঠে স্পর্শাহত দারুণ বাধা ভুলেছিলাম!

অনেক খুঁজে নিষাদ আমি নিখাদ যে ফুল কুড়িয়েছিলাম
রক্তে-মাংসে-মেধায়-বোধে নিবিড় তাকে মিশিয়েছিলাম
বুকের কাছে খুব লুকিয়ে আদ্র যত্নে রেখেছিলাম
শ্রাবণহীন রোদনে তুমুল বর্ষা করে নামিয়েছিলাম!

নষ্ট ছিলাম না, ভ্রষ্ট ছিলাম
ভিন্ন ছিলাম, স্বতন্ত্র ছিলাম
প্রথা ভাঙা নিনাদে প্রথম প্রার্থনা করেছিলাম
অসাধারণ ছিলাম না, অতি সাধারণ ছিলাম
বাহিরে আপাত আহত হলেও ভেতরে আমি নিহত ছিলাম!..”

January 03, 2014

..‘এলোমেলো ১ - ৫’..

..‘এলোমেলো ১ - ৫’..

..‘এলোমেলো-১’..

“..তবু যেন প্রথমবার
যখনি দেখি;
মনে হয় তোকে
দেখছি প্রথমবার!..’’

..‘এলোমেলো-২’..

“..ব্যাংক-ব্যালান্স নেইতো আমার
পৈতৃকসূত্রে নেই জমি;
আশ্রয়হীন আমাকে বুকে
থাকতে দেবে তুমি?..’’

..‘এলোমেলো-৩’..

“..উঠুক দেয়াল, নামুক পর্দা
আমি তোমারই আছি;
খুব দূরে নয়, ভুল সুরে নয়
হৃদয়ের কাছাকাছি!..’’

..‘এলোমেলো-৪’..

“..কি আশ্চর্য!
শ্রবণ অপেক্ষায় সেই স্বরের;
তোমার কণ্ঠ উড়ায় যদিও
প্রাণহীন ছাই-ভস্ম!..’’

..‘এলোমেলো-৫’..

“..কাছেই আছো তবু তোমাকে
পেতে চাই কাছে আরো;
বাহিরে-ভেতরে সমান তালে
বাড়ছে শৈত্যপ্রবাহ!..’’