April 25, 2012

..'স্তোত্র'..

প্রসঙ্গঃ সংগীত


“.. বর্তমান বাংলা সংস্কৃতির একটি দ্রুত বর্ধনশীল এবং পচনশীল পণ্যের নাম সঙ্গীত.. প্রতি মুহূর্তে ঘড়ির কাঁটার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সঙ্গীত, সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার, গীতিকার এবং প্রযোজনাসংস্থা.. ঐশ্বরিক ক্ষমতাবলে আমাদের প্রায় অধিকাংশ জনসংখ্যাই মন করেন তারা অসাধারণ গান করতে পারেন.. এদের মধ্যে বেশ কিছু সংখ্যক গায়ক/গায়িকা আবার ভয়ংকর মেধাবী কেননা তারা নাকি আধাঘণ্টায় ৬-৭ টি নতুন গান কণ্ঠে তুলে recording ও করছেন প্রতিনিয়ত (উস্তাদ বড় গুলাম আলীর একটা concert এ শুনেছিলাম চুপকে চুপকে রাত দিনগানটি কণ্ঠে তুলতে তার নাকি কয়েক মাস লেগেছিলো আর আমাদের শিল্পীদের মাত্র এক ঘণ্টাই যথেষ্ট একটি আস্ত অ্যালবাম বের করে ফেলার জন্য)! কারো কারো নামের সাথে উপস্থাপক/উপস্থাপিকা যখন তাদের যোগ্য(!) বিশেষণ সমূহ মিনিটব্যাপী বলে অবশেষে তার নাম বলে-খুব অবাক হই; এতো গুনী একজন শিল্পী অথচ তার নাম আগে কখনো শুনলাম না, এটা কি করে হয়!

দুর্ভাগ্যবশত, আমার গলায় সুর নেই কিন্তু শ্রবনে সুর আছে.. তাই বেসুরো কোনো গান শোনামাত্রই আমার প্রচণ্ড কষ্ট হয়, দম বন্ধ হয়ে আসে চারপাশ ঝাপসা দেখতে থাকি এবং তলপেটে প্রচণ্ড চাপ অনুভব করতে থাকি, পাগলের মতো এদিক ওদিক খুঁজে বেড়াই BATHROOM: জলবিয়োগের জন্য (সঠিক জায়গায় সঠিক জিনিসটি ফেলার ইচ্ছে আমাদের অনেকের থাকলেও সামর্থ্য আমাদের অনেকেরই থাকেনা)..

আমি বাজি ধরে বলতে পারি এদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক জন বলতে পারবে সা, রে, গা, মা, পা, ধা, নি- শব্দগুলোর Elaboration কী? এবং খুব কম সংখ্যক জন বলতে পারবে শুদ্ধ শ্রুতি এবং বিকৃত শ্রুতি কয়টি? এবং খুব কম সংখ্যক জন বলতে পারবে যেসব জনপ্রিয় গানগুলো মঞ্চে গেয়ে তারা আজ ভুলবশত জনপ্রিয় সেসব গানের গীতিকার এবং সুরকার কারা?

অসংখ্য সঙ্গীতানুষ্ঠানে আমি গাইতে শুনেছি – ‘ও আমার দরদী আগে জানলে’, ‘আমার হাড় কালা করলামরে’, ‘প্রাণ সখীরে ওই শোন ওই কদম্বতলে’, ‘আমায় ভাসাইলিরে, আমায় ডুবাইলিরে’, ‘আমায় এতো রাতে কেনে ডাক দিলিইত্যাদি অসাধারন গানগুলো যেগুলো লিখেছেন কবি জসিম উদ্দীন এবং সুর করেছেন আব্বাসউদ্দিন কিন্তু গায়ক/গায়িকা এমনকি প্রযোজনাসংস্থাগুলো cassette/cd- এর গায়ে কথা ও সুর-সংগ্রহবলে চালিয়ে দিচ্ছে!
..ফলাফল হিসেবে আমাদের next generation এমন অজস্র অসাধারণ মোহময় গানের গীতিকার এবং সুরকার সম্পর্কে কিছুই জানতে পারছেনা এবং অনেকেই মনে করছে এগুলো এইসব ব্যাঙকণ্ঠা/ব্যাঙকণ্ঠী গায়ক/গায়িকাদেরই সৃষ্টি..

যথাযথ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক এইসব গায়ক/গায়িকা এবং প্রযোজনাসংস্থাগুলোর জন্য আমরা এখন শুধু একটা কাজই করতে পারি আর তা হচ্ছে –‘সংগৃহীতবিভিন্ন ডালপালা দিয়ে তাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন নকশা সংগ্রহকরে দেওয়া যাতে করে ভবিষ্যতে তারা সত্যি সত্যি আসল নামগুলো সংগ্রহকরে ঠিকমতো প্রকাশ করতে পারে..

প্রসঙ্গঃ লিঙ্গ বৈষম্য

..লিঙ্গ বৈষম্য (Gender Discrimination) আমাদের সমাজে ঐ সকল ব্যাধিগুলোর মধ্যে অন্যতম যেগুলো আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে থেকে পেয়েছি, লালন করছি এবং ধারণ করছি..পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই এ ব্যাধি কম-বেশী রয়েছে তবে আমাদের মতো যেসকল দেশ ধর্মের অপব্যাখ্যায় এবং Certificate শিক্ষায় বিশ্বাসী, এ ব্যাধি সেসকল দেশে সূর্যের মতোই ধ্রুব!

অনেকেই মনে করেন লিঙ্গ বৈষম্য কেবলমাত্র গ্রামাঞ্চলে রয়েছে, শহরে নেই..ধারণাটি সম্পূর্ণ সঠিক নয়..নিরক্ষর লোকেরা তাদের উচ্ছ্বাস, আবেগ, দুঃখ, ঘৃণা ইত্যাদি উন্মুক্ত এবং প্রকট ভাবে প্রকাশ করে অভ্যস্ত কিন্তু শিক্ষিতরা এসব বিষয়ে শৈল্পিক ভাবে মুখোশধারী..তাই আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে শহরে এ ব্যাধিটি অনুপস্থিত কিন্তু বাস্তবে তা নয়..এ ব্যাধিটির প্রাথমিক কারণগুলো হচ্ছে ধর্মীয় অপব্যাখ্যা, প্রথাগত সামাজিক বিধিনিষেধ, অশিক্ষা এবং মানসিকতা..

একটু ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে যে, এই কারণগুলো একটি অপরটির সাথে সম্পর্কিত এবং এগুলোর মধ্যেই এ ব্যাধি থেকে মুক্তির পথ রয়েছে..যেমন ধর্মীয় বিধিগুলোর অপব্যাখ্যাই কালক্রমে সামাজিক বিধিনিষেধে রূপান্তরিত হয় যার ফলে শিক্ষিত লোকেরা অশিক্ষিত মানুষের মতো মানসিকতা নিয়ে এ ব্যাধিটিকে চারাগাছ থেকে বট বৃক্ষে রূপান্তরিত করছে.. ফলাফল হিসেবে সাম্প্রতিক Dhaka University এর International Relations department এর madam রুমানা মঞ্জুরের BUET engineer স্বামী সাইদ হাসানের দ্বারা পাশবিক ভাবে নির্যাতিত হবার ঘটনাটি উল্লেখযোগ্য..

একজন BUET engineer স্বামী যেকোনো বঙ্গীয় ললনারই আরাধ্য কিন্তু একজন সাইদ হাসান কি আরাধ্য? Answerটি অবশ্যই negative হবে..তার মানে হচ্ছে শিক্ষিত মানুষ নয়, প্রয়োজন হচ্ছে শিক্ষিত মানসিকতা কেননা Certificateধারী মুক্তিযোদ্ধায় যেমন দেশ ছেয়ে গেছে ঠিক তেমনি দেশ ভরে গেছে Certificateধারী শিক্ষিত মানুষে যাদের মানসিকতা এখনো Amazon এর গহীন অরন্যের থেকেও অনেক বেশী অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং নানা রকমের বন্য পশুর পায়ের ছাপে পরিপূর্ণ!..

২০১১ সালে বসবাস করেও এখনো আমরা কোনো মহিলাকে গাড়ি চালাতে দেখে চোখ কপালে তুলে ফেলি আর যদি কোনো মহিলা motor cycle চালিয়ে সামনে দিয়ে যায় তবে তো কথাই নেই! আমাদের ভাবটা তখন এমন হয় যে- এইমাত্র ঐ মহিলা মঙ্গল গ্রহ থেকে land করলো!

যে দেশের প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী সবাই মহিলা, সেই দেশে লিঙ্গ বৈষম্য অকল্পনীয় কিন্তু যে যে দেশের public bus এ মহিলাদের জন্য সুনির্দিষ্ট আসনের ব্যবস্থা রয়েছে সে দেশে লিঙ্গ বৈষম্য থাকবে এটাই কি স্বাভাবিক নয়? এখনো কি আমাদের সমাজে অনেক পুরুষেরা মনে করেন না যে সমাজটা তাদের, তাদের অর্ধাঙ্গীরা তাদের ভোগ্যপণ্য, তাদের মেয়েদের একটি ভালো জায়গায় বিয়ে দিতে পারাই তাদের জীবনের অন্যতম পরম লক্ষ্য?

লিঙ্গ বৈষম্য থেকে মুক্তির একটিই পথ আর তা হচ্ছে মানসিকতার পরিবর্তন যেটি কেবলমাত্র আসতে পারে সুশিক্ষার দ্বারা..তবে মনে রাখতে হবে শিক্ষার উদ্দেশ্য হতে হবে নিজের মধ্যে একটি ছাঁকনি তৈরি করা যা গ্রহণ করবে শুধুই বিশুদ্ধকে এবং বর্জন করবে সকল দূষিতকে..কারণ এটি সকলেরই জানা আছে যে, Certificateধারী শিক্ষিতরা শুধু গলা উঁচু করে বলতে পারে কিন্তু মানতে পারেনা- নারী-পুরুষ সবাই সমানকিন্তু ছাঁকনিধারী শিক্ষিতরা এটি শুধু জানে তাই নয়; মানে এবং ধারণও করে; আর এই ধারণ করাই হওয়া উচিৎ আলোকিত সমাজের একমাত্র ধর্ম!..

 প্রসঙ্গঃ বৃষ্টি

“..আমার দেশের যেসকল জিনিস আমার অত্যন্ত পছন্দের, এগুলোর মধ্যে বৃষ্টি অন্যতম..একটা সময় ছিলো যখন বৃষ্টি হলেই আমি বৃষ্টিতে ভিজতাম; সেটা হোক দিন কিংবা রাত!

বৃষ্টির একটা ভয়ঙ্কর সুন্দর ছন্দ আছে যা আমার মনোযোগ কেড়ে নিতে পারে চোখের পলকে, বৃষ্টি একটা অদ্ভুত সুন্দর গন্ধ আছে যা আমি অজস্রবার বোতলে ভরে রেখে দিতে চেয়েছি, বৃষ্টির একটা তীব্র কোমল স্পর্শ রয়েছে যা আমি খুঁজে ফিরেছি অসংখ্য আদর্শ আঙ্গুলে; কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি প্রতিবার!..

বৃষ্টির একটা তীক্ষ্ণ সম্মোহনী ক্ষমতা রয়েছে- যে অপেক্ষা করতে চায়, তাকে অপেক্ষায় রাখার এবং যে চলে যেতে চায় তাকে চলতে দেবার..বৃষ্টিতে চারপাশ বাগান হয়ে যায়বিশ্বাস জন্মে যায় পৌরাণিকতায়..শুনেছি, স্বাধীনতার পর অনেক পাকিস্তানী বাদক এবং উস্তাদরা আমাদের দেশ ছেড়ে যেতে চাননি পাকিস্তানে বৃষ্টি হয় না বলে!..

বৃষ্টি আমাদের ভেতরে একটা চঞ্চল শূন্যতা তৈরি করে, ফোঁটায় ফোঁটায় খনন করে গভীর কুয়া যেখানে অসংখ্য স্মৃতি স্থবির জলের মতো পড়ে থাকা অবস্থায় বৃষ্টির ফোঁটায় আবার প্রাণ ফিরে পায়, প্রতিধ্বনিত হয়..হঠাৎ করে স্কুল এ বেজে উঠা ছুটির ঘণ্টার মত বৃষ্টির শব্দ ছুটি দেয় আমাদের- পরাধীন ভাবনাগুলো থেকে, দায়িত্বগুলো থেকে..বৃষ্টি মনে করিয়ে দেয় কচি বাঁশপাতার মতো বড় অগোছালো অপরিচিতার চোখগুলোকে, হুড টেনে রিকশায় খুব কাছাকাছি বসা একজোড়া কদমফুলকে, আভিজাত্য আর নিরাপত্তার অভাবে বারান্দায় আধভেজা Money-plant এর দ্বিধা থরথর পাতা..বৃষ্টি চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় রিকশাওয়ালার পিঠে পিস্টনের শক্তি, নোংরা টোকাই ছেলেটার ফোকলা দাঁতের ভয়ঙ্কর মিষ্টি হাসি, নির্দয় এবং রাগী মানুষটার চোখেও স্মৃতির diaryর পাতা উল্টানোর কাঁপন!

বৃষ্টি আমাকে সবসময় আন্দোলিত করেছে, উৎসাহ দিয়েছে এবং কাছে টেনেছে কিন্তু আজকাল বৃষ্টি দেখলে আমার খুব দুশ্চিন্তা হয়, ভয় হয়, পলকহীন চোখেও আমি একটা দৃশ্য কল্পনা করতে পারি.. আমার এ কল্পনার জন্য আমি এখন আর বৃষ্টিতে ভিজতে পারিনা বৃষ্টিতে ভিজছে এমন কারো দিকেও তাকাতে পারিনা..

তাই বৃষ্টি শুরু হলেই আমি দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাই এবং গভীরভাবে কঠিন কোনো কিছু নিয়ে ভাবতে শুরু করি আর তা না হলে আমি কল্পনায় দেখতে পাই - 

অসম্ভব সুন্দর বৃষ্টিধারায় প্রান খুলে চেনা-অচেনা হাজার হাজার মানুষ ভিজছে, ভিজছি আমি, তাদের আনন্দধ্বনির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বৃষ্টির বেগ..স্নাত করছে, ধুয়ে দিচ্ছে আমাদের ভালোবাসায় মাখা, পাপ দিয়ে ঢাকা শরীর.. বৃষ্টির ধারা একটু একটু করে মুছে দিচ্ছে পাপের আস্তরণ..নিষ্পাপ আমরা আরো শুভ্র, আরো সুন্দর.. বৃষ্টির ধারা একটু একটু করে খুলে ফেলছে ভালোবাসার পরত.. একটু একটু করে উঁকি দিচ্ছে বুকের মধ্যে রেখে দেওয়া আমাদের চিন্তা- ভাবনার আয়না!..

কী জঘন্য, কী পাশবিক, কী হিংস্র, কী অন্ধকারাচ্ছন্ন আমাদের চিন্তা- ভাবনাগুলো! আমরা একে অপরের আয়নার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠছি, ছুটে পালিয়ে যেতে চাইছি আমাদের ভাবনার প্রতিফলন দেখে!

আয়নাতে দেখা এই কুৎসিত, অমানবিক সব কিছুই দেখিয়ে দিচ্ছে আমাদের ভেতরটাকে, আমাদেরকে!...

আমি আবার আগের মতো ভিজতে চাই

বৃষ্টি, তুমি শুধু ধুয়ে দাও ঐ পাপের আস্তরণ আর একবার শুধু চোখ ভরে দেখতে দাও ঐ ভালোবাসার পরত, সত্যি বলছি-প্রতিটি মানুষের ভেতরটা হয়ে যাবে তোমার মত-ই পবিত্র, সূর্যালোকের মতো উদ্ভাসিত, যেখানে স্থান হবেনা কোনো আঁধারের, কোনো কুৎসিতের!..

প্রসঙ্গঃ তরুন প্রজন্মের খাদ্যাভ্যাস 

"..ঢাকা শহরের অধিকাংশ ছেলে মেয়েদের পছন্দের খাবার তালিকা শুরু এবং শেষ হয় বিভিন্ন ধরনের Fast Food Items দিয়ে..এগুলোর মধ্যে কিছু নাম থাকে দেশীয় খাবারের যেগুলো তালিকাটিকে কিছুটা exceptional করে তোলার জন্য যদিও সেগুলো খেতে তারা মোটেও প্রকৃত অর্থে আগ্রহী নয়..এই পছন্দের খাবারগুলোর বেশীরভাগই chicken related.. এবং তাই রাস্তাঘাট, অলিগলি, স্কুল কলেজ এর সামনে একটুখানি খোলা জায়গাও রূপান্তরিত হচ্ছে Fast Food Shop এ.. 

এই Fast Food প্রিয়তার কারন অনেকের কাছেই সময় বাঁচানো’..

এইভাবে প্রচুর পরিমানের Poultry Chicken খাওয়ার result হিসেবে এইসব ছেলেমেয়েগুলোও অর্জন করছে Poultry Chicken এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য..একটু জ্বর হলেই টানা ৬-৭ দিন অসুস্থ থাকছে, একটু পরিশ্রম করলেই তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ছে এবং দিন দিন তারা নিজেদের ভয়ঙ্কর ভাবে অল্প কিছু জায়গাতে সীমাবদ্ধ করে ফেলছে..

সরিষার তেল দিয়ে মাখা পোড়া মরিচ দিয়ে আলুভর্তা, মাসকলাই এর ঘন ডাল, লাউ ডগার সাথে আলু, ঝোল ঝোল করা পুইঁশাক, তেলে ভাজা পাটশাক, কাঁঠালের বিচি দিয়ে পালংশাক, গরম ভাতের সাথে ঘিয়ে ভাজা কুমড়া ফুল, বরবটির সাথে শিং মাছের ঝোল কখনোই তারা খেয়ে দেখেনি তারা জানেনা এইসব খাবারের স্বাদ চোখ বন্ধ করে দিতে পারে তৃপ্তিতে অনায়াসে; মুহূর্তের মধ্যে উপলব্ধি করাতে পারে বাংলার ভেঁজা মাটির গন্ধ, মৃদু বাতাসে তিরতির করে কাঁপা কচি বাঁশপাতার গজল, সুদূর থেকে ভেসে আসা চঞ্চল বাছুরের বিরামহীন ডাক আর আমাদের সংস্কৃতির সবুজ শেকড়-কে..

স্বাস্থ্য-সম্মতশব্দটির ভুল প্রয়োগে তারা অবহেলা করে যাচ্ছে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য গুলোকে..তাদের কাছে দুধ খেতে ভাল লাগেনা কিন্তু Coke ভালো লাগে, শুঁটকির ভর্তা ভালো লাগেনা কিন্তু Coleslaw ভালো লাগে..Pizza, Burger, Hotdog, Sandwich, Pastry, Roll তাদের খুব ভালো লাগে কিন্তু ভালো লাগেনা পাটিসাপটা, চিতই, নকশীকাঁটা পিঠা; ভালো লাগেনা মুড়ির মোয়া, নিমকি, খেজুরের রস..

এসকল দেশীয় খাবারের নাম অনেকের কাছেই জঘন্য, বিরক্তিকর, খ্যাঁত এবং Unsmart লাগতে পারে.. পশ্চিমা দেশগুলোর আবিষ্কার এইসব Fast Food Item গুলোকে যে একেবারেই খাওয়া যাবেনা তা কিন্তু নয়; মাঝে মাঝে অবশ্যই খাওয়া যেতে পারে..কিন্তু যে হারে এসব খাওয়ার প্রবণতা এবং দেশীয় খাবার ঘৃণা করার প্রবণতা বাড়ছে- এতে করে একটি কথাই সবাইকে মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে, এসব দেশীয় খাবার আমাদের সংস্কৃতির-ই অংশ..Fast Food Item গুলো নয় এবং আমার মা দেখতে যতই খারাপ হোক না কেন; আমার কাছে সে-ই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর এবং মমতাময়ী!..

প্রসঙ্গঃ হরতাল

“..আজ ০৫.০৬.১১ সারাদেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ছিলো.. শক্তিশালী বিরোধীদলগুলো তাদের রাজনৈতিক অধিকার আদায় এবং শক্তি প্রদর্শন উপলক্ষে হরতাল ডেকেছিল সারাদেশ জুড়ে.. বাংলা সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে এই হরতাল এর কারণে বন্ধ ছিলো দেশের প্রায় সকল school, college, university. বন্ধ ছিলো multinational company গুলোর urgent meetings .. কোটি কোটি টাকার লেনদেন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সিংহভাগের উৎস- অসংখ্য পোশাক শিল্প, বন্ধ ছিলো অভিজাত হোটেলগুলো, রঙিন পানশালা, ধনকুবেরদের দামী গাড়িগুলোর চাকা, উন্নত দেশগুলোর সাথে আমাদের দরিদ্র দেশের দুপক্ষীয় চুক্তি, চাবি দেওয়া বুদ্ধিজীবীগুলোর মতবিনিময় সভা, রাজধানী ঢাকা থেকে অন্যান্য বিভাগে যাতায়াত করা highway গুলোতে সদাব্যস্ত Bus, Truck গুলোও বন্ধ ছিলো..

কিন্ত বন্ধ ছিলোনা ছোট ছোট স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে জ্ঞান আহরণের ইচ্ছে, বন্ধ ছিলোনা তাদের মনের ভিতর জ্ঞানালোক প্রবেশের জানালা, বন্ধ ছিলোনা আস্তাকুঁড় থেকে টোকাই ছেলেমেয়েগুলোর খাবার খোঁজার প্রয়াস, বন্ধ ছিলোনা রাস্তার ধারে বসবাস করা ভিখারি রোগা শিশুটির ক্ষুধার্ত কান্না, বন্ধ ছিলোনা সন্তানের ঘরে ফেরার পথ চেয়ে উৎকণ্ঠায় থাকা মায়ের প্রতীক্ষা, বন্ধ ছিলোনা সরকারী অফিসের ছাপোষা বৃদ্ধ পিয়নটির ভাঙা সাইকেলটির দুটি চাকা, বন্ধ ছিলোনা সদ্য প্রেমে পড়া তরুণীটির স্বপ্ন দেখা- তার স্বপ্নের মানুষটিকে সাথে নিয়ে রিকশায় ঘুরে বেড়ানোর নরম, স্নিগ্ধ স্বপ্ন, বন্ধ ছিলোনা কলেজ পড়ুয়া মেয়েটির Close Up-1 তারকা হবার স্বপ্নে আবিষ্ট, হারমোনিয়ামে ছুটে বেড়ানো তার শুভ্র আঙ্গুলগুলো, বন্ধ ছিলোনা সদ্য শেষ হওয়া H.S.C. পরীক্ষার্থীদের ভর্তিযুদ্ধ নিয়ে দুশ্চিন্তা, বন্ধ ছিলোনা photographer হবার কল্পনায় বিভোর কিশোর ছেলেটির mobile phone এর camera এর shutter,বন্ধ ছিলোনা ৮ সদস্য বিশিষ্ট নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারটির কর্তার মাথায় সারামাস পরিবার কিভাবে চলবে তার দুশ্চিন্তা, বন্ধ ছিল না কাক, চড়ুই, দোয়েল, কোকিল, শ্যামা, মোরগ-মুরগির ডাক, গাছ থেকে পাতাদের ঝরে পড়া, রাস্তায় বাতাসের সাথে ধুলোর উড়ে আসা, প্রচণ্ড রোদের দাবদাহের ফাঁকে হঠাৎ একটু শীতল হাওয়া বওয়া, বন্ধু হতে চেয়ে ভীত, সলজ্জ SMS পাঠানো; বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেওয়া সহপাঠিনীর mobile এ..

বন্ধ ছিলোনা অজস্র ছোট ছোট হাতের মুঠোতে বিশাল, সুবিশালকে ধরে রাখার আমৃত্যু অভিলাষ..

বন্ধ ছিলোনা বছরের অধিকাংশ দিন জলে ডুবে থাকা চোখগুলোতে সম্ভাবনাপূর্ণ ভবিষ্যতের কথা ভেবে জেগে উঠা হঠাৎ আলোর ঝলকানি..

..তাহলে এসব হরতাল কি বন্ধ করছে?..

.. এসব হরতাল আসলে একটু একটু করে বন্ধ করে দিচ্ছে রাজনীতিবিদদের প্রতি তরুণ প্রজন্মের আস্থা অর্জনের পথ, অন্ধ বিশ্বাসে তাদের প্রতি খুলে রাখা- অপেক্ষারত আমাদের কাজল-কালো চোখ, চক্রাকারে সেই চির-পরিচিত দলগুলোর সিংহাসনে আরোহণের সম্ভাবনা এবং একই মুখোশ পরে বারবার যেমন খুশী তেমন সাজোপ্রতিযোগিতায় বিজয়ী হবার নিশ্চয়তা!..

প্রসঙ্গঃ নামকরণ 

“.. গর্ব করার মতো বাঙ্গালীর কোনো কিছুই নেই শুধুমাত্র বাংলা ভাষা ছাড়া। ভাষা আন্দোলনের ৬০ বছর পার হয়ে গেলেও কোনো এক অদৃশ্য কারনে নবজাতকদের নাম এখনো আরবিতে রাখা হচ্ছে (৪০% মেয়ের নাম ‘জান্নাতুল ফেরদৌস’)। শিশুটি যখন বড় হচ্ছে, তার নামের অর্থ জিজ্ঞাসা করা হলে সে কিন্তু তখন নামটির বাংলা অর্থই বলছে!

কেনো তাহলে এই আরবি নাম রাখা? - হয়তোবা সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের জন্য যা প্রমাণ করে আমরা কতোটা লোভী (আরবি নামের উছিলায় সওয়াব কামাব এই আশায়) এবং অলস (ইবাদাত না করেও সওয়াব কামাব এই আশায়)!

গত কয়েক বছর ধরে আবার কারও কারও নাম রাখা হচ্ছে হিন্দি সিরিয়াল, মুভি, গান থেকে আগত কিছু হিন্দি শব্দে। যা প্রমান করে সৃজনশীলতা বলতে আমাদের কিছু নেই এবং আমরা শুধু অন্যের প্রেমেই পড়তে জানি।

২১শে ফেব্রুয়ারী এলেই গলার রগ ফুলিয়ে, বুকের রক্ত ঢেলে দেবার সুযোগ পাচ্ছি না তাই মুখের লালা ঝরিয়ে, উচ্চ মাধ্যমিক ভাষণ দিয়ে আমরা একেকজন ভাষা শহিদদের বংশধর হয়ে যাই; অতঃপর ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে ধর্মের সানগ্লাস চোখে দিয়ে আড়চোখে পান করি হিন্দি সংস্কৃতি, মাংসের দোকান, আকাঙ্ক্ষিত অশ্লীলতা ।

আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম-ও কি বয়ে বেড়াবে আমাদের অজানিত শ্রদ্ধা – আরবি নাম? আমাদের পরশ্রীকাতর ভাল লাগা – হিন্দি নাম? আর অবহেলায় শুধু অভিধানে পড়ে থাকবে আমাদের ভালবাসা – বাংলা নাম?

জাতি হিসেবে আসলেই কী আমরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছি নাকি আধুনিকতার আলো পেছনে রেখে শুধুই দীর্ঘতর হচ্ছে আমাদের দুর্বল, অপুষ্ট, ভীত, বেখাপ্পা জাতির কম্পমান ছায়া?

বাংলা ভাষায় অজস্র সুন্দর শব্দ রয়েছে যেগুলো পৃথিবীর যেকোনো ভাষার শব্দ থেকে কোটিগুণ সুন্দর, অর্থপূর্ণ এবং ছন্দময়। আমরা কি পারিনা আমাদের লোভ এবং পরশ্রীকাতরতাকে ছুড়ে ফেলে পরবর্তী প্রজন্মের নামের মধ্য দিয়ে আমাদের বাংলার রুপ, রস, গন্ধ, সৌন্দর্যকে ছড়িয়ে দিয়ে আমাদের নোংরা মানসিকতাকে স্নাত করাতে? ..”

প্রসঙ্গঃ বই পড়া

‘’..আমার পছন্দের মানুষের তালিকাটি বেশ দীর্ঘ কিন্তু তাদেরকে দেবার মতো উপহারের তালিকাটি বেশ ক্ষুদ্র ..

আমার বাবা যদি শুধু আমার ‘বাবা’ হতেন, তাহলে হয়তো আমি তাকে শুভ্র পাঞ্জাবী বা জায়নামাজ বা Body spray বা Wrist watch দিতাম।

আমার মা যদি শুধু আমার ‘মা’ হতেন, তাহলে হয়তো আমি তাকে মৃদু রঙের শাড়ি বা স্কার্ফ বা জায়নামাজ বা আকর্ষণীয় পান রাখার পাত্র দিতাম।

আমার ভাই-বোন যদি শুধু আমার ‘ভাই-বোন’ হতো, তাহলে হয়তো আমি তাদের Latest model এর Mobile Phone বা Music Player দিতাম।

আমার Student রা যদি শুধু আমার ‘Students’হতো, তাহলে হয়তো আমি তাদের tasty Chocolates বা Showpiece দিতাম।

আমার Colleague রা যদি শুধু আমার ‘Colleagues’ হতো, তাহলে হয়তো আমি তাদের Body spray বা Chocolates বা Lighter দিতাম।

বাকি রইলে তুমি। তুমি যদি শুধু ‘তুমি’ হতে, তাহলে হয়তো তোমাকে স্তব্ধ রাতের মতো কাজল বা রঙধনুর মতো বিভিন্ন বর্ণের চুড়ি বাঁ বিস্তীর্ণ প্রান্তরের মতো, আমার দেশের তাঁতিদের সহজ-সরল মানসিকতার মতো স্নিগ্ধ শাড়ি দিতাম।

কিন্তু এরা কেউই তাদের চারপাশের মানুষের কাছে শুধুমাত্র এই পরিচয়গুলোতে সীমাবদ্ধ নয়, তাই তারা আমার কাছে এই এই পরিচয়গুলো থেকেও অনেক বেশি কিছু। আমার অনেক ইচ্ছে এরা এই পরিচয়ের সীমাবদ্ধতা থেকে বের হয়ে আসুক এবং তাদের চারপাশের কাছে এরা পরিচিত হোক শুধুমাত্র একটি মানুষ হিসেবে নয়; একটি পৃথিবী হিসেবে।

আমি তাদেরকে গুচ্ছ গুচ্ছ তারকারাজির মতো, অসংখ্য আদিগন্ত ঝাউবনের মতো প্রচুর বই দিতে চাই। কারন একমাত্র বই-ই পারে একজন মানুষকে একটি পৃথিবীতে রূপান্তরিত করতে। একমাত্র বই-ই আমাদের শেখাতে পারে বাদল ধারার মতো কাঁদতে, পাখির মত প্রকৃত গান গাইতে , আগ্নেয়গিরির মতো ফেটে পড়তে, ভোরের আকাশের মতো অজ্ঞতার আঁধারে ডুবে থাকা মানসিকতায় দ্যুতি ছড়াতে, পাহাড়ের মতো দৃঢ় হতে, ঢেউ এর মতো ছান্দসিক হতে, আকাশের মতো বিশাল হতে, মহাকাশের মতো ক্ষুধার্ত হতে এবং সৃষ্টির মতো সুন্দর হতে।

আমি চাই আমার প্রিয় মানুষগুলোর ভেতর হয়ে উঠুক উদ্ভাসিত, আমি চাই তারা এক একটি সম্পূর্ণ পৃথিবী হয়ে উঠুক, তারা জানুক- আমাদের দারিদ্র্য হচ্ছে আমাদের বাহ্যিকতা আর প্রাচুর্য হচ্ছে আমাদের আহরিত সুন্দর।

আমি চাই আমরা একসঙ্গে বলে উঠি – মিথ্যা বাহ্যিকতা আর নয়; এসো পূঁজি সুন্দরে’ আসুক চোখে জল!

বই পড়া হোক আমাদের অন্যতম অবসর – এই প্রত্যাশায়!..’’
 







April 20, 2012

.. ‘আমি দেখি কৃষ্ণগহ্বর’..

.. ‘আমি দেখি কৃষ্ণগহ্বর’..

“..জেগে আছি আমরা দু’জন শহর থেকে দূরে
রাত্রিটা ঘুমোয় শুধু ক্লান্তিতে পাশ ফিরে

প্লাবনের মতো জোসনা বেয়ে অনুমতি ছাড়া
নোঙর করে যখন বাতাসে হাসনাহেনারা
বুঝলাম আমি দ্বিতীয়; তোমাকে ছোঁওয়ার প্রতিযোগিতায়
আলুথালু চুলে তোমার বাঁকানো ভ্রূ তাই আহ্বান জানায়

আমি আঁজলায় ধরি প্রতিমার কান্তি
আঙুলে ছুঁয়ে যাই জোড়া দিগন্ত
আলোআঁধারির ক্যানভাসে ঠোঁট দুটোকে
তুলির মতো করে একটু একটু আঁকি বিমূর্ততা
বেজে ওঠে প্রশ্বাসের ঠুমরী, নিকটত্ত্বের গজল
কবিতার খাতায় লিখিত কবিতার পাতা এক
আলতো দোলায় নামে শূন্য পাতায়
খুঁজি ছন্দ শিকড়ে, নুপুরের নির্জনতায়
সৌন্দর্যপিপাসুদের তীর্থস্থানে রুদ্ধশ্বাস চারণ
খুব সন্তর্পণে হেঁটে যাই হাতের আঙুলে কম্পনের কেন্দ্রবিন্দু
বুক ভরে জমা করি ত্রয়োদশ সুবাস
অসম্ভব বিস্ময়ে অনুভব করি অস্থির জোড়া জলাধার

অতঃপর তন্দ্রালু আমার চোখের ঘাসে
ধেয়ে নামে নিড়ানি, চোখের পাতা তোমার
উষ্ণ শ্বাসের যন্ত্রসংগীত থামে ধীরে
গুঞ্জরিত কণ্ঠে তুমি জানতে চাও –
‘এই চোখে চোখ রাখো,
বল, কি দেখতে পাও?’

আমি ধীরে মেলে ধরি চোখের পাতা
নদীর পালের মতো রুপালি জলে
দেখি কচুরিপানার নিচে
দলবেঁধে সাঁতরানো মাছেরা পালায়,
কাদামাটিতে নিটোল আল্পনা আঁকে
হাঁসেদের পায়ের ছাপ
দূরে দাঁড়ানো এক বিশাল গাছের শাখায়
দুটি হাঁ করা মুখের মধ্যে খাবার
দিতে ব্যস্ত কাজল-কালো এক দাঁড়কাক!

দেখি পেটফোলা এক কান্নারত শিশু
মুছে নিয়ে তার অশ্রুসজল মুখ
ছোটে এক ফড়িঙের পিছু পিছু
পড়ন্ত বিকেলে রাজপথের পাশে পায়ে হাঁটা পথ ধরে
জীবনের না মেলা হিসেব মিলায়
বৃদ্ধ এক, একাকী সঙ্গোপনে

দেখি কিশোরের দল, দেখি ঝুম বাদল
দেখি অনাহার, অপ্রাপ্তি, লিপ্সা
দেখি ঘন অরণ্য, দেখি নিটোল তরঙ্গ
দেখি সাতরঙা ধূমায়িত হতাশা!

হঠাৎ তোমার স্পর্শে ফিরে আসি বাস্তবে
বুঝি, এ নয় কল্পনার প্রহর;
দুচোখে যা-ই দেখি, মুখে বলি –
‘আমি দেখি কৃষ্ণগহ্বর’!..”

April 17, 2012

..'সুপ্ত কথন'..

..'সুপ্ত কথন'..

“..চন্দ্রালোকে আমার ছায়ার অবয়বে তুমি
স্বল্পদৈর্ঘ্য ভাবনায়, তোমার কেন্দ্রবিন্দু আমি

আমার আছে কূপের মতো গহন অন্ধকার
তোমার আছে স্নিগ্ধ আলো; জোসনা-তারার
আমার আছে পাতার মতো ঝরার ছলা-কলা,
তোমার আছে পেলব ঘাসের সবুজ বৃক্ষতলা
আমার আছে আঁজলায় ধরা জলের মতো স্বপ্ন,
তোমার আছে মাতাল করা বৃষ্টি-ভেজা কণ্ঠ

আমার চুম্বন কালিমার রঙে
নোঙর তোলে, তোমার আঁখি-কোলে
আমার কামনা ছায়ামূর্তি হয়ে
লতার মতো জড়ায়, তোমার শরীর বেয়ে
আমার না পাওয়াগুলো বাষ্পে জমে
তোমার তনু ছুঁয়ে, মেঘজল হয়ে নামে

তুমি কুয়াশাঘেরা ঘাস চাদরে জোসনা ঝরার শব্দ
তোমার অনেক পছন্দের সুগন্ধি ভিড়ে -
আমি ভেজা মাটির গন্ধ
তুমি দৃপ্ত স্বরের আহ্বান মাঝে হঠাৎ জাগা স্পৃহা
তোমার নক্ষত্রসম চোখের পাতায় -
আমি কাজল, সর্বংসহা
তুমি কৃষ্ণচূড়ার 'লজ্জায় লাল', বেহালায় 'মীড়' - এর প্রথমা
আমি জানালা গলে ছুঁয়ে যাওয়া বাতাস -
তোমার ঘরে, দখিনা!..”

..'THE DESIRE-II'..

..'THE DESIRE-II'..

"..Close to your breast
Let me hide and weep
Unable I’m to touch my eyelids though
I just wanna be on you
To have like those early times
A sweet and slumber sleep

Oh, grab me tightly
Let my breath stop
Don’t you know how I felt?
The time you went off?

Let me be there
And have the warmth for aye!
Empty I am shedding all the tears
Know not will thou believe?
There ain’t left a single sigh!.."

..'বৈশাখী কবিতা - ৫'..


..'বৈশাখী কবিতা - ৫'..

"..আকাশের মুখ ভার হয়েছে
উড়ছে মেঘের দল;
ঝড়ো হাওয়ায় চুল খুলে দে
এক সাথে সব চল!

বাজতে থাকুক ডুগডুগি আর
কণ্ঠে থাকুক গান;
আঁজলা ভরে কুড়াব আজ
স্বপ্নস্রোতের বাণ!.."


..'অনুকাব্য - ১' ..


..'অনুকাব্য - ১' ..

"..চুল উড়িয়ে, কাজল মেখে
যেদিন পড়বি টিপ;
আঁধার ঘরে জ্বালবো সেদিন
জোনাকি প্রদীপ!.."

.. ‘আমি চাই পেতে তারে’..

.. ‘আমি চাই পেতে তারে’..

“..ছেড়ে যেতে পারো তুমি
ঈষৎ বাঁকানো ঘাস, ঝরা পাতার অর্ঘ্য
অসমাপ্ত কবিতা, অনিমেখ স্বপ্ন
পোড়া দড়ির মুখে বসা মাছির গুঞ্জন
প্রবাহিত জলে ধোওয়া প্রায় সাদা মৃত ইঁদুরের
শরীরে ঝাপটে পড়া নতুন জঞ্জাল
দেয়ালের গায়ে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা
হঠাৎ প্রতিধ্বনির জনক টিকটিকির কক্ষপথ
দমকা বাতাসে নুয়ে পড়া হাসনাহেনার কচি শাখা
দপ করে নিভে যাওয়া মাজারের বেশ কিছু মোমবাতি
সলাজ ত্রাসে কম্পিত নববধূর আলোড়িত চুড়ি
কাজলে রাঙা অপরিচিতার চোখে দুর্বোধ্য আহ্বান
দৃষ্টিতে সৃষ্টি নিয়ে অপলক দহন
নয় তোমার; নয় আমার; নয় কারও যেন
জলে, স্থলে, ভেসে বেড়ানো, অবগাহনকালে
সবার মধ্যে অন্যতম ‘অনন্যা’র মতো নয়
সাধারণ, চির সাধারণ ‘অন্যা’র মতো করে
হারিয়ে স্তিমিত তারার আলোকে, এলোমেলো ঘোরে
রহস্যাবৃত কুয়াশা অথবা ঝড়ো প্রান্তরে
প্রত্যাখ্যাত হয়তোবা নয়, হয়তোবা আশাহত
নদীর পাড়ে হেঁটে হেঁটে, ছুঁয়ে ছুঁয়ে ঢেউয়ে ভেজা মাটির
তামাটে শরীরে এঁকে নবান্নের আল্পনা
ছেড়ে যেতে পারো তুমি আমি পারবোনা!

দু’হাতের আঁজলায় শীতল জল নিয়ে
ভেজাবো আমার পিপাসার্ত এ দু’চোখেরে
আর চাপা গুণগুণে ভ্রমরের মতো সুরে
বলবো আমি চাই
চাই পেতে তারে
স্পৃষ্ট হতে চাই তার বজ্রে
পুড়তে চাই তার অনলে
স্নাত হতে চাই তার বর্ষণে
আমি চাই পেতে তারে আমার বিজন ক্ষণে!..”

April 12, 2012

..’এইটুকু জেনো তুমি’..

..’এইটুকু জেনো তুমি’..

“..চোখদুটো বন্ধ করো
রাখো আমার দুটি হাতে
তোমার কোমল দুটি হাত
একটু সাজাতে দাও তোমার দীর্ঘ নখগুলো
আমার ঠোঁটের অদৃশ্য রঙে

তোমার স্নিগ্ধ করতল
অধিকার করুক আমার জোড়া ঠোঁট
তোমার আঙুল, কব্জি, বাহু
আমার ঠোঁটের স্পর্শধারায় স্নাত হোক

চোখদুটো বন্ধ রাখো
লিখতে দাও নতুন ভাগ্যলিপি
তোমার দীপ্ত কপালে
কালি ও কলম হোক আমার দু’ঠোঁট
ছুঁয়ে যেতে দাও নিবিড়ভাবে
নিমীলিত তোমার চোখ

জেগে ওঠা অমূল্য শিশিরকণায়
আদ্র হতে দাও তোমার নাকে
বয়ে যেতে দাও বিস্তীর্ণ সৈকত
তোমার কপোল, আমার ঠোঁটের স্রোতে

শোনাতে দাও ঠোঁটে ধীর লয়ের গজল
শ্রবণে তোমার, যখন
উষ্ণ নিঃশ্বাসে বাজে তবলার বোল
পিপাসার্ত আমার ঠোঁটে নির্বিশেষ
পরাতে দাও গলায় একটি আন্তর নেকলেস

চোখদুটো থাক বন্ধ
তোমার অধর থাকুক বন্দি
দৃষ্টি নয় অনুভূতিতে
মেনে নেবো আমিও – অধরে অধরের বন্দিত্ব!

এভাবেই যাক কেটে কিছুটা সময়
ইন্দ্রিয়গুলো তোমার আমার হোক বশীভূত
আর কিছু তো নয়!

চলে যাওয়া আমার পথে তাকিয়ে
হয়তো দ্বিধাগ্রস্ত তুমি
চুম্বনের অর্থ খুঁজে ক্লান্ত
যেখানে শ্রদ্ধা, স্নেহ, ভালোবাসা, কামনা
সবই যেন একীভূত

কোথায় তবে আমার আশ্রয়?
- ভালোবাসার অসামর্থ্য-ই
তুলে ধরে শারীরিক প্রশ্রয়!

পূর্ণ দীঘির টলটলে জল ফেলে
কেন যাচ্ছি চলে আমি?
- সকল প্রার্থনার শেষে ‘আমিন’ যেমন অবশ্যম্ভাবী;
আসবো ছুটে আবার আমি -
এইটুকু জেনো তুমি!..”

April 05, 2012

..'অথচ তুমি’..

..'অথচ তুমি’..

“..এখানে রঙিন কাগজে মুড়িয়ে
স্বল্পদৈর্ঘ্য ভাবনা বিক্রি হচ্ছে
বর্ণিল পূর্ণদৈর্ঘ্য, প্রজন্ম বদলানোর
আকাঙ্ক্ষিত আলোকবর্তিকা নামে

অথচ তুমি তোমার আদিগন্ত চোখ সাজিয়ে বসে আছো অমল কাজলে!

এখানে পারিবারিক ক্ষমতার চাদরতলে
প্রতিটি মানুষ ধারণ করে আছে
ভু-অভ্যন্তরের পাললিক অজ্ঞতা
গহীন অরণ্যের জমাট অন্ধকার

অথচ তুমি তোমার কৃষ্ণচূড়া অধরে ধরে আছো প্রস্ফুটিত স্নিগ্ধতা!

এখানে ‘পা-চাটা’-দের নামের আগে ‘বুদ্ধিজীবী’
ফতোয়াবাজ, চর্বির দোকান – পীরদের নামের আগে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’
অন্ধ, মূক, বধির, মগজহীনদের নামের আগে ‘মাননীয়’
এবং অনুকরণে পারদর্শীদের ডাকা হচ্ছে ‘মেধাবী’ নামে

অথচ তুমি শিশিরে ধোওয়া সবুজ তোমার আঁচল বিছিয়ে আছো!

এখানে নষ্ট কলের মতো কর্কশ কণ্ঠ হতে
অনবরত, একাধারে, চুইয়ে - চুইয়ে, ছড়িয়ে – ছিটিয়ে
প্লাবিত করছে, বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে
পুঁজের মতো; বমির মতো – নোংরা, জারজ শব্দগুচ্ছ

অথচ তুমি বৃষ্টি ভেজা কণ্ঠে বলছ শুধু একই কথা – ‘ভালবাসি’!

এখানে প্রতিনিয়ত ধর্ষিত হয়ে বদলে যাচ্ছে
জীবন, মনন, সৃজনশীলতা, নতুনের মূল্য
স্বাধীনতা, আধুনিকতা, ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ
বদলে যাচ্ছে প্রতিশ্রুতি, আহ্বান, সংস্কার
সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, সময় – স্বপ্ন দেখার
বদলে যাচ্ছে পোস্টারে, ব্যানারে দেখা অজস্র মুখ
বদলে যাচ্ছে থরোথরো কেঁপে ওঠা সুখের মতো দুখ

অথচ মেয়ে তুমি শুধু বদলালে না!..”

..'আমি পারবোনা'..

..'আমি পারবোনা'..

“..আমি পারবোনা তোমার দিকে চেয়ে থাকতে
ঐ হলুদ সূর্যমুখীর মতো
পারবোনা তোমার প্রখরতায় স্নান করতে
ঐ শুকতলী ক্ষয়ে ফেলা পথিকের মতো;

তুমি তো সূর্য নও, তুমি তো চাঁদ আমার
আমারই চঞ্চল চুম্বনে যে
ঐ কলঙ্ক মাখা মুখ তোমার!

আমি পারবোনা ফিরে ফিরে আসতে
পুরনো ভালো লাগা সুরের মতো
তোমার একাকী ক্ষণে
আমি পারবোনা ঐ চুলের ঘোমটা সরিয়ে
দোলাতে তোমার কানের পদ্মফুল
ঘুম ভাঙ্গা রাত গহীনে!

আমার যে আকাশটা
জুড়ে ছিল নীলাভ খণ্ড খণ্ড মেঘে
সে তো কবেই শ্রাবণের বর্ষণ হয়ে ঝরে গেছে
তোমায় ভেবে পার করা
প্রথম রাত্রিগুলোতে
আর যে নেই এক খণ্ড মেঘ-ও অবশেষ –
কি দিয়ে তোমায় আবার করবো বরণ?
কি ঝরাবো আহূত শুভক্ষণের পুষ্পাঞ্জলিতে?

প্রাপ্তি কি কভু হয় পূর্ণ
রঙ-হীন জল ছাড়া?
আমার আকাশ আজ মেঘহীন
আর পেয়ে হারানোয় ভরা!

স্বপ্ন দেখতে এখন আমি আর পারিনা
পুরনো দিনগুলোর মতো
পারিনা পালক হয়ে লুকাতে ঝাউবনে
ঝরাপাতা হয়ে ভাসতে নদীজলে, অথবা
তোমার স্বপ্নগুলো ঠোঁটে করে উড়ে যেতে
ছোট্ট মাছরাঙাটির মতো!

তোমার আকাশে, আজ তুমি একাই থাকো জেগে
ছড়িয়ে রেখে আমার দেয়া
কল্পনার আঁধার কালো চাদর;
আর শত শত দুঃখ তারা
ঐ ধূপ-বসনে মেখে

চাইলেও আমি পারবোনা ফিরে আসতে
সন্ধ্যাবেলার নীড়ে ছোটা পাখি হয়ে
তোমার আঁধার শাড়ির আঁচলে জ্বলা দুঃখ-তারাগুলো
জানি একদিন হারাবে উজ্জ্বলতা, ম্লান হয়ে
আমার দু’হাতে আজ আর কিছুই নেই
শুধু প্রায় মুছে যাওয়া কিছু দাগ ছাড়া
আজ আর পারিনা বলতে গর্ব ভরে –
‘এই দু’হাতে হাত রাখো, সব পাবে’
ক্লান্তিতে, আমি যে আজ দিশেহারা।

একাকী হেঁটেছি অনেকটা পথ
রাখিনি সঙ্গী করে কাউকে, কখনও
আমার আজন্ম পরিচিত ছায়া ছাড়া
শুধু জেনে রেখো,
এই দীর্ঘ পথ আমারই সৃষ্টি
এই ক্লান্তি- জেনে রেখো, আমারই সৃষ্টি করা।

চাইলেও আজ তোমার একটি হাসিকে
পারবোনা কিনে নিতে একটি গান দিয়ে
সে যে ছিলাম গত জনমের আমি
তোমার গুণগুণে, তুলে রাখা বীণা হয়ে।

পারবোনা বলতে তোমায়
ঐ হাত দুটো মেলে ধরতে, যে আঙ্গুলগুলোতে ছুটে যেতো,
ঘুরে বেড়াতো আমার আঙুলগুলো
পিয়ানো ভেবে; তোমার নতুন গাওয়া সুরে সুর মেলাতে।

পারবোনা বলতে ঐ দুচোখ ছুঁয়ে –
‘আমার বসবাস এ তারা দুটোর কালোতে’

পারবোনা আর ডাকতে তাদের
‘কৃষ্ণগহ্বর’ নামে

পারবোনা আর পাশাপাশি হাঁটতে
যখন রাজপথে কুয়াশা এসে থামে।

আজ আর আমায় ডেকোনা
আজ ভালবাসা নেই আর আমাতে

যখন আবার দুচোখ ভরে
স্বপ্ন দেখতে পারবো,
স্বপ্ন দেখাতে পারবো,
ছুটে যেতে পারবো তোমায় নিয়ে
বুনো ঘোড়া হয়ে সবুজ অরণ্যে –
নিজেই আমি আসবো ছুটে,

জড়াতে তোমায় শুভ্র-শাদা ঢেলে দিয়ে
ঐ আঁধার-কালো, দুঃখ-তারা জ্বলা জামাতে!..”

“..আমার কল্পনায় তুমি..”

“..আমার কল্পনায় তুমি..”

“..আমার কল্পনায় তুমি
এতবার এসেছ যে
তুমি তোমার বাস্তবতা হারিয়ে ফেলেছ
কল্পনায় তোমাকে এতবার ছুঁয়েছি,
ধারণ করেছি যে,
তুমি তোমার বাস্তবতা হারিয়ে ফেলেছ

আমি চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাই
তোমার মেঘ, লতানো পাতা, প্রবাহিত অবয়ব
আমার বন্ধ চোখের পৃথিবী
জুড়ে তোমার আলো আর অসংখ্য তুমি
আমার বই, খাতা-কলম, আসবাবপত্র
নখ, ঠোঁট, আঙ্গুল-বুক সবকিছুতেই
শুধু তুমি লেগে আছো!

আমি চোখ বন্ধ করলেই বলে দিতে পারি
কতোটা বর্ষা তোমার চুল
কতোটা পুষ্প তোমার আঙুল
কতোটা গোলাপ তোমার ঠোঁট
কতোটা পদ্ম তোমার পা
কতোটা তুমিময় তোমার তুমি

আমার কল্পনায় ঐ চুল, আঙুল, ঠোঁট, পা
এতবার, আমি এতবার ছুঁয়েছি,
ধারণ করেছি যে –
যখন সত্যিকারের তুমি এসে দাঁড়াও সামনে
অপ্রস্তুত লাগে, অস্বস্তি লাগে;

এই তোমাকে আমি ছুঁয়েছি এতো কম!

এই তোমাকে আমি জেনেছি এতো কম!

বড় বেশি এলোমেলো আর অচেনা লাগে

বিশ্বাস করো –
এতবার,
আমার কল্পনায় তুমি
এতবার এসেছ যে –
তুমি তোমার বাস্তবতা হারিয়ে ফেলেছ !..”

“..রং হীন তোমার জল..”

“..রং হীন তোমার জল..”

“..রং হীন তোমার জল
যখন কাঁপায় আমার হেলেঞ্চার শীর্ষাগ্র
তুমি তা কখনও দেখোনি তো !

থরথর তোমার উষ্ণ নিঃশ্বাসে
যখন পালায় আমার লাজুক ডাহুক
ছড়ানো কচুরিপানায় দ্বিধান্বিত পা ফেলে
তুমি তা কখনও শোনোনিতো !

স্পর্শ না করেও ভালবাসতে পারি
তোমার মেঘ, পাহাড়, ঝর্ণা
গহীন অরণ্য, নদী;

শূন্যতায়ও এতোটুকু হয় না বদল
আমার ক্যানভাসে শুভ্রতা
তোমার নীল, সবুজ আর
প্রবাহিত গোলাপি!

তোমার শুধু একটাই কথা -
‘ভালোবাসা বলতে কিছু নেই;
যদি তা না থাকে সারা জীবন ভরে,’
আমি বলি,
‘ভেবে দেখো
শুনছো যে গান তার
ক’টা লাইন আসে ফিরে
চাপা গুনগুনে?’..”

..‘এই কবিতাটি তোমার জন্য নয়’..

..‘এই কবিতাটি তোমার জন্য নয়’..

“..আমার এই কবিতাটি তোমার জন্য নয়
আমি জানি, তুমি জানো –
বৃষ্টি হলেই আমি কবিতা লিখি তোমার জন্য
কিন্তু, শুধু এই কবিতাটি তোমার জন্য নয়।

এই কবিতাটি শুধু তাদের জন্য
যারা বৃষ্টি ভালোবাসে
টুকরো কাগজের মতো যারা
নিজেদের উড়িয়ে দিতে চায়
বৃষ্টি শুরুর লাগামহীন বাতাসে
যারা বৃষ্টির ফোঁটায় খোঁজে প্রিয় মুখ;
জল নিয়ে গালে – যারা হাসে!

অবারিত আকাশ মুঠোতে ধরবে বলে
যারা ছুটে যায় খোলা প্রান্তরে
বারান্দার কার্নিশে অপেক্ষমাণ কাকের দিকে
‘মাটিতে আকাশের স্বাধীনতা’ যারা দিতে পারে ছুঁড়ে!

এই কবিতাটি তাদের জন্য
যাদের দু’হাত গত বৃষ্টিতে
ধরে রাখা অন্য দু’হাতের স্মৃতিতে কাঁপে

এই কবিতাটি তাদের জন্য
যারা ভেজা জানালার এপাশে বসে
কচি বাঁশপাতার মতো
বড়ো বেশি এলোমেলো চোখে কাঁদে

এই কবিতাটি শুধু তাদের জন্য
যারা ব্যাথার কাজল মেখে
দু’হাতে মুখ লুকিয়ে,
বৃষ্টিকে ভালোবেসে – রং হীন জলে
ঝরে যেতে ভালোবাসে!..’’

..‘এলোমেলো-১-৪’..

..‘এলোমেলো-১’..

“..তোর বুকেই ঘুমাব শুধু
আর কোনও কিছু চাইবো না;
সত্যি বলছি, আমাদের বিছানায়
একের অধিক বালিশ রাখবো না!..’’

..‘এলোমেলো-২’..

“..‘আজ শাড়ি পড়েছি’ –
মুঠোফোনে বললি;
কায়া ছেড়ে ছোটে ছায়া
বলি, ‘তুই কোথায় চললি!?’..’’

..‘এলোমেলো-৩’..

“..দশ-বারোটা কবিতার বই কিনেছি
একটিও পড়তে পারছি না;
তোর দুচোখের মত কবিতা
কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না!..’’

..‘এলোমেলো-৪’..

“..জানি এ Cigarette ভালো না মোটেও
পোড়াচ্ছে আমায় ধীরে ধীরে’;
তবুও বলবো, ভালো,
অন্তত ঐ অভিমানিনীর থেকে
পোড়াচ্ছে ঠিকই,
তবু আসছে তো ঠোঁটে ফিরে ফিরে!..’’

..'এলোমেলো-১-৫'..

..'এলোমেলো-১'..

“..ধরতে বলিস তোর দুটি হাত
শক্ত করে ওভাবে;
হাত যে আমার প্রচণ্ড ঘামে
বল, রাখব ধরে কিভাবে?..’’

..'এলোমেলো-২'..

“..ঘর ভেঙ্গে তুই আসতে চাস
ছুটে আমার কাছে;
ভাঙ্গবি না তুই আমার ঘর
এই নিশ্চয়তা কি আছে?..’’

..'এলোমেলো-৩'..

“..অনেক হল, আর কাছে
আসার চেষ্টা করিস না;
ঘুম হারিয়ে ঐ দুচোখে
জল বৃক্ষের বীজ বুনিস না!..’’

..'এলোমেলো-৪'..

“..খসখসে কাগজে কখনও
নাম লিখিনি তোর;
চোখের পাতায় নেই
তোর ঠোঁটের স্পর্শ?
- চাইনা এমন ভোর!..’’

..'এলোমেলো-৫'..

“..যে নামে আমার ইচ্ছে
সে নামেই তোকে ডাকবো;
স্বামী নই, প্রেমিক আমি
যখন ইচ্ছে – ভালবাসবো!..’’

..‘রাত্রি’..

..‘রাত্রি’..

“..দিবাবসানে আসো তুমি
নক্ষত্রের চাঁদর গায়ে
নিস্তব্ধতার জলধারায় ভিজিয়ে পায়ের পাতা
পলকহীন চোখ আর কপালে দিয়ে চাঁদের টিপ;
দিবাবসানে আসো তুমি
আঁধারের মৌতান ছড়িয়ে।

কালবোশেখি মেঘের সর্পিল বেণী
ফিরে ফিরে দুলতে থাকে তোমার তন্বী কোমরে
তোমার পথচলায় ছন্দালোক জোগাতে –
জোয়ার উঠে সায়র জলে,
জোনাকিরা, প্রদীপ তুলে ধরে।

রাত্রি, তুমি আসো ধীরে
গুনগুনিয়ে বাদলধারার মতো –

রাত্রি, তুমি পাশে এসে বস চুপে
অবিচ্ছেদ্য আমার ক্ষীণকায় ছায়ার মতো –

রাত্রি, তুমি চোখ মেলে তাকাও আমার পানে
বহুদূর থেকে ভেসে আসা ডাহুকীর গানের মতো –

রাত্রি, তুমি মেলে ধরো তোমাকে আমার কাছে –
প্রথম বর্ষায় স্নাত, প্রস্ফুটিত কদমফুলের মতো!..’’

..‘এলোমেলো-১-৫’..

..‘এলোমেলো-১’..

“..ঘাসের তুলি, শিশিরের রং
পায়ের পাতায় তোর আঁকে যেমন আল্পনা;
আকাঙ্ক্ষিত – তোকে ঘিরে আমার চাওয়া
দুর্বোধ্য – তোকে নিয়ে আমার কল্পনা!..’’

..‘এলোমেলো-২’..

“..তোমার কাছেই আসবো ছুটে
যুদ্ধ-ফেরত সৈনিকের মতন;
তোমার বুকেই উঠবো জেগে –
আদ্র স্পর্শে, ঘুমন্ত দহন!..’’

..‘এলোমেলো-৩’..

“..আমিও হতাম ‘হিমু’
আর হাঁটতাম সারারাত -
রাস্তায়;
ক্লান্তিতে,
যদি ঘুমাতে পারতাম –
তোমার কোলের বারান্দায়!..’’

..‘এলোমেলো-৪’..

“..চোখটা মেলে আকাশ পানে
তাকাও আরেকবার;
‘ক্ষুদ্র’ তোমার মাঝেই আছে
‘সবটুকু’ আমার!..’’

..‘এলোমেলো-৫’..

“..না পাই যদি সূর্যাস্তে
তোমার ঠোঁটের নির্যাস;
বছর জুড়ে চলবে আমার
আমৃত্যু উপবাস!..’’