April 20, 2012

.. ‘আমি দেখি কৃষ্ণগহ্বর’..

.. ‘আমি দেখি কৃষ্ণগহ্বর’..

“..জেগে আছি আমরা দু’জন শহর থেকে দূরে
রাত্রিটা ঘুমোয় শুধু ক্লান্তিতে পাশ ফিরে

প্লাবনের মতো জোসনা বেয়ে অনুমতি ছাড়া
নোঙর করে যখন বাতাসে হাসনাহেনারা
বুঝলাম আমি দ্বিতীয়; তোমাকে ছোঁওয়ার প্রতিযোগিতায়
আলুথালু চুলে তোমার বাঁকানো ভ্রূ তাই আহ্বান জানায়

আমি আঁজলায় ধরি প্রতিমার কান্তি
আঙুলে ছুঁয়ে যাই জোড়া দিগন্ত
আলোআঁধারির ক্যানভাসে ঠোঁট দুটোকে
তুলির মতো করে একটু একটু আঁকি বিমূর্ততা
বেজে ওঠে প্রশ্বাসের ঠুমরী, নিকটত্ত্বের গজল
কবিতার খাতায় লিখিত কবিতার পাতা এক
আলতো দোলায় নামে শূন্য পাতায়
খুঁজি ছন্দ শিকড়ে, নুপুরের নির্জনতায়
সৌন্দর্যপিপাসুদের তীর্থস্থানে রুদ্ধশ্বাস চারণ
খুব সন্তর্পণে হেঁটে যাই হাতের আঙুলে কম্পনের কেন্দ্রবিন্দু
বুক ভরে জমা করি ত্রয়োদশ সুবাস
অসম্ভব বিস্ময়ে অনুভব করি অস্থির জোড়া জলাধার

অতঃপর তন্দ্রালু আমার চোখের ঘাসে
ধেয়ে নামে নিড়ানি, চোখের পাতা তোমার
উষ্ণ শ্বাসের যন্ত্রসংগীত থামে ধীরে
গুঞ্জরিত কণ্ঠে তুমি জানতে চাও –
‘এই চোখে চোখ রাখো,
বল, কি দেখতে পাও?’

আমি ধীরে মেলে ধরি চোখের পাতা
নদীর পালের মতো রুপালি জলে
দেখি কচুরিপানার নিচে
দলবেঁধে সাঁতরানো মাছেরা পালায়,
কাদামাটিতে নিটোল আল্পনা আঁকে
হাঁসেদের পায়ের ছাপ
দূরে দাঁড়ানো এক বিশাল গাছের শাখায়
দুটি হাঁ করা মুখের মধ্যে খাবার
দিতে ব্যস্ত কাজল-কালো এক দাঁড়কাক!

দেখি পেটফোলা এক কান্নারত শিশু
মুছে নিয়ে তার অশ্রুসজল মুখ
ছোটে এক ফড়িঙের পিছু পিছু
পড়ন্ত বিকেলে রাজপথের পাশে পায়ে হাঁটা পথ ধরে
জীবনের না মেলা হিসেব মিলায়
বৃদ্ধ এক, একাকী সঙ্গোপনে

দেখি কিশোরের দল, দেখি ঝুম বাদল
দেখি অনাহার, অপ্রাপ্তি, লিপ্সা
দেখি ঘন অরণ্য, দেখি নিটোল তরঙ্গ
দেখি সাতরঙা ধূমায়িত হতাশা!

হঠাৎ তোমার স্পর্শে ফিরে আসি বাস্তবে
বুঝি, এ নয় কল্পনার প্রহর;
দুচোখে যা-ই দেখি, মুখে বলি –
‘আমি দেখি কৃষ্ণগহ্বর’!..”

No comments: