December 29, 2014

..‘অনাদ্রিতার কাছে স্বীকারোক্তি’..

..‘অনাদ্রিতার কাছে স্বীকারোক্তি’..

“..অনাদ্রিতা,
তোমার সকল অভিযোগ নিঃসঙ্কোচে মেনে নিচ্ছি
আজকাল আমি ভীষণভাবে চরিত্র হারাচ্ছি!

প্রথাবিরোধী সত্য যখনই উচ্চারিত হচ্ছে রংহীন কোন ঠোঁটে
আঁধারবাসীরা কাঁপছে যখন সেই সত্যের রোদে
আমি সেই ঠোঁট খুঁজে বেড়াচ্ছি;
নরম-সজ্জিত ঠোঁটকে রেখে
সেই ঠোঁটে ঠোঁট রাখছি!

যে জোড়া চোখ স্বাপ্নিক খুব জীর্ণ অতীত ভুলে
স্বপ্ন কাজলে যে জোড়া চোখ জলজ টলটলে
আমি সেই চোখ খুঁজে বেড়াচ্ছি;
অঙ্কিত-কামুকী চোখকে রেখে
সেই চোখে চোখ রাখছি!

যে বুকের অলিন্দ-নিলয়ে ছুটে বেড়ায় বাংলা বর্ণমালা
উদ্ধত খুব গুঞ্জরিত যে বুকে হাসন-লালন-পালা
আমি সেই বুক খুঁজে বেড়াচ্ছি;
প্রস্তুতকৃত-আধুনিকা বুককে রেখে
সেই বুকে মুখ লুকাচ্ছি!

যে শরীর জড়ায় বৈশাখী শাড়ি-নবান্নের অন্তর্বাস
দ্বিধা থরথর ফাগুনের টিপে ছড়ায় চৈত্রের সর্বনাশ
আমি সেই শরীর খুঁজে বেড়াচ্ছি;
ছায়াভূক-আদর্শ শরীরকে রেখে
সেই শরীর আলিঙ্গনে জড়াচ্ছি!

যে নিঃশ্বাসে ঝরে ভোরের স্নেহাদ্রতা
আঁজলায় – দুপুরের নিশ্চয়তা
যে গোড়ালি আনে মায়াবী গোধূলি
খোলা চুল – রাতের একাগ্রতা
আমি তাদের প্রেমে পড়ছি!

অনাদ্রিতা,
তোমার সকল অভিযোগ নিঃসঙ্কোচে মেনে নিচ্ছি
আজকাল আমি ভীষণভাবে চরিত্র হারাচ্ছি!..”

December 20, 2014

..‘কবিতা’..

..‘কবিতা’..

“..‘কবিতা’ হলো শব্দের রঙে আঁকা এক বিমূর্ত ছবি
‘কবিতা’ হলো প্রাণের প্রকাশ দীঘির জলে উঠা রবি।
‘কবিতা’, চোখেরই জল
‘কবিতা’ হলো মানব মনের অনুভূতি লাভার ঢল;
‘কবিতা’, মেঘেরই জল
‘কবিতা’ হলো প্রিয়ার নাকে জেগে উঠা শিশির টলমল।
‘কবিতা’, দিগন্তহীন আকাশ
চাওয়া-পাওয়ার ঘুড়ি উড়িয়ে দিয়ে
কাটাকাটি খেলার প্রয়াস,
‘কবিতা’, সুন্দর পিয়াসীর ধর্ম
আবর্জনা মাঝে মাথা উঁচু করা পেলব আভার জন্ম;
‘কবিতা’, পাখির পুষ্প আর ঢেউ-জলে ফুল শয্যা
‘কবিতা’, মুঠো করে ধরা জোস্না আর নববধূর বিনম্র লজ্জা।
‘কবিতা’, খেয়ালের বশে ফেলে রাখা কূলহীন তটিনীর গল্প
‘কবিতা’, প্রিয়ার ঠোঁটের উদাত্ত আহবানে সাড়া দেয়া
– আঙুলের স্পর্শ অল্প!..”

..'এলোমেলো ১ - ৩৩'..

..'এলোমেলো ১'..


"..তোমার অবগুণ্ঠিত মুখ আর বাচাল দু'চোখ
একদিন ঠিকই ধরা পড়ে যাবে;
একদিন ঠিকই আমার কবিতার
শব্দ-ছন্দ-গন্ধগুলো তোমার শরীরে লেগে যাবে!.."

..'এলোমেলো ২'..

"..চুপিসারে সুগন্ধি বকুল
ঝরে পড়ে ছুঁয়ে দেয় তোমার আঙুল
আকাশের সিঁথি বেয়ে
ভেঙ্গে পড়ি আমি ছায়াহীন
ভেঙ্গে পড়ি - অন্যরকম; ঈশ্বরীবিহীন!.."

..'এলোমেলো ৩'..

"..তারপর একটা তারা খুঁজি মৃদু আলোয় খাঁজ কাটা
মেঘের কলসি ঢেলে দিয়ে তাকিয়ে থাকি খুব বোকা;
উঠলে ডেকে রাতের পাখি আঁধার চাদর চিরে
ঘুমায় আমার দু'চোখ তোমার বুকের গন্ধ নিয়ে!.."

..'এলোমেলো ৪'..

"..আসবো প্রার্থনার আঙিনায়
আসবো গোধূলির ফিসফাসে;
জলরঙা মুহূর্তের ঘ্রাণ
যখন ধুলোপথে নেমে আসে!.."

..'এলোমেলো ৫'..

"..নীরব না-দেখা যন্ত্রণায়
দগ্ধ হয়ে ক্ষত-বিক্ষত হই;
অসমাপ্ত কবিতার খাতায়
ঝরে পড়া শুকনো পাতা হই!.."

..'এলোমেলো ৬'..

"..তোমাকে ছোঁবো ভেবে
যখনই হাত বাড়াই;
নিবিড় কুয়াশাতেও
উষ্ণ জোছনা পাই!.."

..'এলোমেলো ৭'..

"..শিশুর গোলাপি হাসি, নারীর স্খলিত খোঁপা
দেয়াল ঘড়ির টিক টিক, শীত রাত্রির নীরবতা
স্পর্শের আঙুল যখন আমার ভেতরে থর থর -
কেমন আছো অভিমানীনি; বলো, তোমার কি খবর?.."

..'এলোমেলো ৮'..

"..খুব গোপনে বেড়ে চলে
গোপন অনেক ঋণ;
ঘাস ফুলের কাছে - বাতাসের কাছে
চুম্বনের কাছে - আলিঙ্গনের কাছে
অনেক গোপন ঋণ!.."

..'এলোমেলো ৯'..

"..কখনও দেখিনি তাঁকে,
কখনও মাখিনি গন্ধ তাঁর
এ শরীরে - ত্বকে;
তবু কেন মনে হয়
আমার অনামিকা
বহু আগেই দিয়েছে সে
তাঁর খোলা চুলে বেঁধে!.."


..'এলোমেলো ১০'..
 
"..অতঃপর, ভেজা চুলের জলে
পিঠ বেয়ে নদী হবে নির্বিকার প্লাবন;
অথবা সমাপ্তি আমার -
স্পর্শাহত তোমার চুলে
আধবোজা ফুলের মতোন!.."


..'এলোমেলো ১১'..
 
"..নারিকেল গাছ যেমন সবুজ চিরুনি দিয়ে
সারাক্ষণ বিলি কাটে হাওয়ার সাদাচুলে;
অনুমতি দিলে, হবো তেমন রবিশঙ্কর
ছুটে যাবো তোমার তনুর সিতারে নিরন্তর!.."


..'এলোমেলো ১২'..
 
"..নাহয় ছুঁয়ে দিয়ে তোমার
জল-জোছনা
ঘুমের ভেতর খুব গাঢ়;
হেঁটে যাবো আঙুলে
চুলের সিঁড়ি
আঁচলে ঢাকা পথ আরও!.."


..'এলোমেলো ১৩'..
 
“..সবারই আছে গল্প বলার
কোন না কোন – সত্যি কথা!
গুঞ্জরিত প্রিয় গানে
লুকানো তাঁদের নাড়ানো ব্যাথা!..”


..'এলোমেলো ১৪'..
 
"..অদ্বিতীয় জীবন কেঁদে ডাকে - 'আয়,
প্রিয়-অপ্রিয় পরিচয়!'
দিন শেষে ঝরে ঝরে যায়
কাম-ক্রোধ-ক্লান্তি-ভয়
মরে যায় ঝরা পাতা, ঝরে যায় মরা পাতা
উড়ে পতাকায় ধ্বংসের বিজয়;
তবু যেন শরীরে আমার
তাঁর সুগন্ধ টিকে রয়!.."


..'এলোমেলো ১৫'..
 
"..কখনো ভাবি, কখনো হাসি
স্তব্ধ সলাজ ত্রাসে
কোন সে জন - তৃতীয় হাঁটে
তোমার-আমার পাশে!.."


..'এলোমেলো ১৬'..
 
"..ভুল করে ঘুমিয়ে পড়েছিল প্রজাপতি
সবুজ ঘাসের উপর
পিছলানো চাঁদ ডুবে গিয়েছিল জলে
তোমার ঠোঁটে আমি - তারপর!.."


..'এলোমেলো ১৭'..
 
"..অলস দৃষ্টি তোমারও
খুঁজে কি ফিরে আমায়;
চেনা-অচেনা মুখ
রোদ-বৃষ্টি-ছায়ায়?.."


..'এলোমেলো ১৮'..
 
"..অভিমান হয়, বড়ো বেশি অভিমান হয়
তুমিও খোঁজো, আমিও খুঁজি
চলে যায় বসন্ত সময়!.."


..'এলোমেলো ১৯'..
 
"..আমি বলেছিলাম আমার ভ্রমণ পছন্দ
আমি বুঝিয়েছিলাম মান-অভিমান-অমিতাভ স্পর্শ;
তুমি বুঝেছিলে নদী-পাহাড়-ঝর্ণা-অরণ্য
আমি বলেছিলাম; তবু তুমি বোঝনিতো!.."


..'এলোমেলো ২০'..
 
"..এস্রাজ সুরে গর্ভবতী কলম আমার
ধুকপুক বুকে লিখে যেত কবিতা অবিরাম,
একটা সময় আমিও ঘুমের নীলাভ অতলে
অনায়াসে ডুবে যেতাম;
ছুটে বেড়ানো তাঁর দু'চোখের সাথে
একটা সময় আমিও অনায়াসে ছুটে বেড়াতাম!.."


..'এলোমেলো ২১'..
 
"..মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে
অদৃশ্য হয়ে যাই;
ছোট-বড় তোর শ্বাস-প্রশ্বাসে
নিটোল মিশে যাই!.."


..'এলোমেলো ২২'..
 
"..এভাবেই কেটে যায় আমার সময়
জোস্নায়-রোদ-জলে মায়াবী সময়;
তবু যেন ভুল করে নীরবে-আড়ালে
তোমার দু'চোখ ভেবে যেন ভুল হয়!.."


..'এলোমেলো ২৩'..
 
"..তবে তাই হোক -
ঘুমিয়ে পড়ুক তোমার ক্লান্ত দু'চোখ;
রাতের আঁধারে নাহয় খুঁজুক
আমার দু'ঠোঁট তাঁর উষ্ণ চিবুক!.."


..'এলোমেলো ২৪'..
 
"..নষ্ট হতে হতে একদিন
আমি কবিতা হবো;
কামনা হবো, দ্রোহ হবো
উচ্ছ্বাস হবো, স্বপ্ন হবো
কবিতা হতে হতে একদিন -
একদিন আমি মানুষ হবো!.."


..'এলোমেলো ২৫'..
 
"..তুমি-আমি হাঁটতে হাঁটতে পথে ফোটা ফুল
বৃষ্টিজলে গা ভিজিয়ে একটা বিশাল ভুল
রাতের আকাশ জুড়ে প্রাসাদ মেঘছোঁয়া চাঁদ কই?
নগরবন্দী একে-অপরের চোখেই ডুবে রই!.."


..'এলোমেলো ২৬'..
 
"..গন্ধ নেবো, অলিন্দ ভরে
তোর শরীরের গন্ধ নেবো;
অন্ধ হবো, আরেকটা দিন
না দেখলে তোকে অন্ধ হবো!.."


..'এলোমেলো ২৭'..
 
"..থাকুক নিম-সাধু সবাই
মুখ লুকিয়ে মুখোশে;
তোমাকেই খুঁজবো আমি
তোমাকে পাবার শেষে!.."


..'এলোমেলো ২৮'..
 
"..সামনে এলেই শব্দ হারাই
'প্রেম'-এর আগে 'প্রথম' বসাই
মুহূর্তের মধ্যে গরম কফি
এখনও যায় জুরিয়ে;
- খুব কি গেছো বুড়িয়ে?.."

..'এলোমেলো ২৯'..

"..স্পর্শ দিও; না হয় তোমার স্পর্শ দিও
আমায় ভেবে
বইয়ের পাতায়
- না হয় তোমার স্পর্শ দিও!.."

..'এলোমেলো ৩০'..

"..ঘুমের মতো গভীর
তোমার স্পর্শ পাবার পরে
আমি দ্রোহী হয়েছিলাম;
জলের মতো স্বচ্ছ
তোমার দু'চোখে চোখ রেখে
আমি প্রতারক হয়েছিলাম

- প্রথা ভাঙার অধরে
আমি চুমু খেয়েছিলাম!.."

..'এলোমেলো ৩১'..

"..আসোনা চলে, মিথ্যে বলে
- আমি এখানেই আছি;
জোনাক ধরে ঘর সাজাবো
আমরা মিছেমিছি!.."

..'এলোমেলো ৩২'..

"..আজ সারাদিন পিপাসায় লীন
তোমার দু'ঠোঁট চাইছি;
'সত্যুক' তুমি শুনতে কি পাও?
- আমি 'মিথ্যুক' বলছি!.."

..'এলোমেলো ৩৩'..

“..তবুও ঘুমের বালিশ আমার
খুঁজবে তোমার চোখের নালিশ
মধ্যাহ্নের নীরব দুপুর
চাইবে পেতে কথার নূপুর
পায়েল হয়ে যাক
রাতের পরে রাত!..”


 
     

..‘লজ্জিত নই; আমি হবো খুব বিব্রত’..

..‘লজ্জিত নই; আমি হবো খুব বিব্রত’..

“..যদি কখনো এমন হয় – অলৌকিক কোন ক্ষমতাবলে
আমার প্রণয় ঘটনাবলী তোমাকে দেখানো হয়
খুব কি লজ্জিত হবো?
নাকি খুব বিব্রত?

তুমি জেনে যাবে – বোরকা পরা এক কিশোরীকে আমি
রাত জেগে লিখেছি অসংখ্য চিঠি
রোদ-বৃষ্টি-জোস্না-মেঘ-শীত-গ্রীষ্ম-বসন্ত
সব কিছু নিয়ে লিখেছি সুদীর্ঘ চিঠি অজস্র
একসময় সে বোরকা ছেড়েছিল, আর
ঢাকা পড়ে গিয়েছিল সবুজ-হলুদ-নীল-গোলাপি
বিভিন্ন রঙের হাতে লেখা কাগজে!
তুমি জেনে যাবে – গান পাগল এক তরুণীর
গলায় সুর ছিলনা বলে আমি তাঁর ঠোঁটে এঁকে দিয়েছি
জানা-অজানা সকল গানের স্বরলিপি
এরপর থেকে সে দারুণ গান গায়
শুনেছি এখন নাকি সে জনপ্রিয় গানের পাখি!
তুমি জেনে যাবে – কাজল পছন্দ করে বলে
একজনের দু’চোখে আমি লেপে দিয়েছি আমৃত্যু কাজল,
একজনের শুভ্র বুকে ছুঁয়ে দিয়েছি নীল পদ্মের শতদল,
এক মহিলার অরণ্য প্রিয় বলে
পার্বত্য অঞ্চলে একসাথে দু’জনের শরীরে
রোপণ করেছি বন্য অনুভূতির অভয়ারণ্য
দারুণ অসন্তুষ্ট বিবাহিতা এক রমণীর
অল্প চুলে মুখ ঢেকে বলেছি – ‘এইতো আমার আঁধার মেঘদল’!
তুমি জেনে যাবে – শত-শত নাম
অগণিত অনুভূতির পদাবলী, অলৌকিক কোন ক্ষমতাবলে
যদি তোমাকে দেখানো হয় আমার প্রণয় ঘটনাবলী!
খুব কি লজ্জিত হবো?
নাকি খুব বিব্রত?
লজ্জিত কিংবা বিব্রত কোনটিই নয়,
এরাই আমার বর্ণমালা; শব্দের সঞ্চয়।
তবে,
আমাদের কাটানো মুহূর্তগুলো যদি তোমাকে দেখানো হয়
লজ্জিত নই; আমি হবো খুব বিব্রত
আমরা যখন পাশে বসে জোনাক জ্বালি
দু’হাত ভরে আমরা যখন রৌদ্র কুড়াই
আমরা যখন আলিঙ্গনে মেঘ নামাই
একে অন্যের ভেতরে যখন খুব লুকাই
তোমার দু’চোখ বন্ধ যখন ঈপ্সিত
- যদি তোমাকে দেখানো হয়, আমি হবো খুব বিব্রত;
তখন তুমি দেখতে পাবে আমার দু’টি চোখ
পলক হারিয়ে গাঙচিল দৃষ্টি গেঁথে নিচ্ছে তোমাকে – বিস্মিত;
আমি হবো খুব বিব্রত
জেনে যাবে তুমি - কখন এ দু’চোখ
বিভ্রান্ত এবং অতল-মুগ্ধ,
লজ্জিত নই; আমি হবো খুব বিব্রত!..”

..‘তোমার শরীর অন্ধ আমার বর্ণমালা’..

..‘তোমার শরীর অন্ধ আমার বর্ণমালা’..

“..ওঁরা আমার নাম জানতে চেয়েছিল - বলেছিলাম
যে নামে আমি আমাকে ধারণ করি - সেই নাম
আমি ওঁদের বলেছিলাম; ওঁরা সন্তুষ্ট হয়নি
আমি জানি - ওঁরা আমার নাম জানতে চায়নি
ওঁরা জানতে চেয়েছিল আমার বংশ, গোত্র, ধর্ম
আমাকে ওঁরা জানতে চায়নি, চেয়েছিল জানতে
আমার দেয়ালে কতোটা হয় ওঁদের প্রতিধ্বনি!

ওঁরা আমার বয়স জানতে চেয়েছিল - বলেছিলাম
পৃথিবীর ইতিহাস যত দিনের - ৪,৫০০ মিলিয়ন বছর
আমি ওঁদের বলেছিলাম; ওঁরা সন্তুষ্ট হয়নি
বলেছিলাম - ‘মানুষ তার জ্ঞানের সমবয়সী’
ওঁরা সন্তুষ্ট হয়নি, বলেছিল - বেশীদিন বাঁচবো না আমি;
‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান দীর্ঘজীবী’ - বলেছিলাম
ওঁরা সন্তুষ্ট হয়নি।
ওঁরা যা জানে - তাই জানতে চায়
ওঁরা যা জানে না - তা জানতে চায় না
ওঁরা আমাকে ওঁদের মতো দেখাতে চেয়েছিল
আমি দেখতে চাইনি; তাই
ওঁরা সন্তুষ্ট হয়নি।
ওঁরা আমার হাত টেনে নিয়ে কোথাও রেখে বলেছিল -
এর নাম ‘বিদ্রোহ’ - আমি বলেছিলাম ‘ঠোঁট’
আবার সরিয়ে নিয়ে অন্য কোথাও রেখে বলেছিল -
এর নাম ‘ঔদ্ধত্য’ - আমি বলেছিলাম ‘বুক’
ফের সরিয়ে নিয়ে অন্য কোথাও রেখে বলেছিল -
এর নাম ‘ধ্বংস’ - আমি বলেছিলাম ‘জন্ম’
ওঁরা আমাকে জন্মান্ধ বলেছিল
বলেছিল - আমি সত্য-মিথ্যা আলাদা করতে পারি না
ওঁরা জানে না -
তোমার শরীর অন্ধ আমার বর্ণমালা
এখানে কোন মিথ্যা নেই
- এই সত্য ওঁরা জানে না!..’’

..'স্মৃতিচারণ বলতে কিছু নেই'..

..'স্মৃতিচারণ বলতে কিছু নেই'..

“..স্মৃতিচারণ বলতে কিছু নেই,
স্মৃতিচারণ বলতে কিছু নেই কবিদের
স্মৃতিতেই তো তাঁদের বসবাস
তপ্ত রোদে-জোস্নালো রাতে-কুয়াশাঘেরা সকালে-ঝিঁ ঝিঁ ময় গোধূলিতে
স্মৃতিময় তাঁদের চারপাশ
স্মৃতির শেকলে বাঁধা পড়া মানুষ, স্মৃতির আবছা নীলাভ ফানুস
হাতছানি দিয়ে ডাকে; স্মৃতির হাওয়ায় দোলে না চুল কার?
কে ফেলে না আঁখিজল, স্মৃতিপাঠে?

কবি স্মৃতিকাতর প্রতি পথে-প্রতি প্রহরে-প্রতি শব্দে-প্রতি ছন্দে
কবির পথচলায় সঙ্গী কেবল স্মৃতি; তাঁর না পাওয়ায়, তাঁর হতাশায়
স্মৃতিময় কবিতাই সুখ প্রতীতি!
কবি জলের শীর্ষাগ্রে দেখে প্রিয়র হাসি, লতার অবগুণ্ঠনে লজ্জা
রাজপথের বাঁকে দেখে রুঢ়তা, গাছতলে ফুলশয্যা
কবি তাঁর হাতের মুঠোয় ধরে অবারিত স্বপ্ন, চোখের তারায় ভাবালুতা
অগোছালো শব্দে রাখে নিজেকে লুকিয়ে, হৃদস্পন্দনে ব্যাকুলতা
স্মৃতিচারণেই তাঁর পূর্ণতা হয়; যার প্রকাশ ঘটে তাঁর কাব্যে
কখনো সে উদ্ধত, কখনো সে কামুক - স্মৃতির ডানা ঝাপটানো শব্দে!
সকল কবিই মানুষ যদিও সকল মানুষ নয় কবি
মানুষ তখনি কবি হয় যখন সাদা-কালো স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে
নিরঙ শব্দের তুলি দিয়ে আঁকে সে রঙিন ছবি!
কবির ভুবনে স্মৃতিচারণ তাই আকাশের মতো
যার নিচে আবাস সকল অনুভূতির
স্মৃতির মেঘজলেই তাঁর নিরন্তর স্নান,
স্মৃতির রৌদ্রালোকেই সমাধি –
কবির আত্মাহুতির!..”

..‘আমি এড়িয়ে যেতে পারি প্রায় সব’..

..‘আমি এড়িয়ে যেতে পারি প্রায় সব’..

“..আমি বিশ্বাস করি মানব এবং মানবী সৃষ্টির আগে
সৃষ্টিকর্তার পাশে ছিল একটি প্রেমি হৃদয়,
আমি বিশ্বাস করি একদিন ধ্বংস হবে সব
শুধু ধ্বংসস্তূপের উপর - থেকে যাবে প্রেম; অনন্ত-অক্ষয়!

আমার সম্মুখ হতে সরিয়ে নাও তোমার চুল -
অগণিত, অযাচিত অমানিশার গাঢ় প্রতিশ্রুতি
এখানে কোন প্রেম নেই - আছে চিরায়ত শৃঙ্খল
হয়তো শুধু দেখবো; কিন্তু এড়িয়ে যাবো আমি ঠিকই
সরিয়ে নাও তোমার স্নিগ্ধ জোড়া করতল -
মেহেদী রঙে ঢাকা আধ্যাত্মিক প্রশান্তির দূর্বার আহবান
এখানে প্রেম নেই - আছে স্বার্থের প্রস্ফুটিত শতদল
হয়তো শুধু দেখবো; কিন্তু এড়িয়ে যাবে ঠিকই আমার গর্ব নৈব্যক্তিক প্রাণ
আমি চাইনা সম্মুখে তোমার পেলব উরু - পুঁজিবাদ
চাইনা তোমার উল্লম্ফিত বুক - সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের ফাঁদ
সরিয়ে নাও ক্রমহ্রাসমান কোমর - প্রতিজ্ঞাবদ্ধ কল্যাণ
চাইনা তোমার অপসৃয় নিতম্ব - অস্তিত্ব নাশের গিরিখাদ
এগুলোতে কোন প্রেম নেই; আছে শুধু বিলুপ্তি
হয়তো শুধু দেখবো; কিন্তু এড়িয়ে যাবো আমি ঠিকই
আমার যে দু’চোখ বধির - পিপাসার্ত
আগ্রহী খুব সবকিছু গেঁথে নিতো
এড়িয়ে যায় আজকাল তন্দ্রালু-আনমনা
অন্যকিছু হলেও হতে পারে আমার
মিথ্যে প্রতিশ্রুতি, অবগুণ্ঠিত শান্তি আর
লালায়িত পুঁজিবাদ - কখনোই আমার না!
আমার কেন যেন শুধু চোখ ভরে যায় জলে
বাহিরে যখন দারুণ বসন্ত; ভেতরে ভেতরে
আমি পুড়ে যাই দাবানলে!
আজকাল আমি এড়িয়ে যেতে পারি প্রায় সব
প্রিয়জন হারানোর বেদনায় অভিনীত বহুল চর্চিত - জলে ভেজা চোখ
অগোচরে উঁকি দেয়া জাগরণের স্বার্থসিদ্ধি - বুক বন্ধনীর ফিতে
শুভ্র উরুর গুটানো কাপড়ে লুপ্ত - দেশাত্মবোধ আমার
এগুলোতে প্রেম নেই; তাই আলোড়িত হই না
আজকাল আমি এড়িয়ে যেতে পারি প্রায় সব
শুধু সাদা কাগজ আর প্রেমে থরোথরো ঠোঁট
এড়াতে পারি না!..’’

..'তোমার ঘরের বন্ধ দরোজা খুলে গিয়েছিল দমকা বাতাসে'..

..'তোমার ঘরের বন্ধ দরোজা খুলে গিয়েছিল দমকা বাতাসে'..

“..তোমার ঘরের বন্ধ দরোজা খুলে গিয়েছিল দমকা বাতাসে
কুশনের নিচে থাকা দৈনিক পত্রিকা উড়ছিল ছোট্ট রুমের আকাশে
ফুলদানি কাৎ হয়ে পড়ায় গলে গলে পড়ছিল শিরোনামগুচ্ছ -
‘কথা রাখলেন না অর্থমন্ত্রী’, ‘বাঁচল ব্রাজিল, বাঁচল বিশ্বকাপও’
নিরন্তর উড়ছিল জানালার রঙিন পর্দা – বারান্দার খাঁচায় জোড়া মুনিয়া
কেঁপে উঠেছিল বইয়ের তাকে থাকা ‘শ্রেষ্ঠ জীবনানন্দ’, ‘নির্বাচিত বাংলা কবিতা’
কেঁপে উঠেছিল বেশ ক’টি জোড়া চোখ, তোমার শুভ্র পায়ের তলা
হৃদপিণ্ডের মতো নষ্ট ডোরবেলটিকে তুমি বারবার বাজতে শুনছিলে
তুমি বিনা অনুমতিতে তোমার ঘরে অনেকের আগমন পেয়েছিলে
তোমার চঞ্চল ছোট ভাইটি শান্ত হয়ে
তোমার ঘর্মাক্ত মা ভাতের চামচ নিয়ে
তোমার ব্যস্ত বাবা পাঞ্জাবির বোতাম না লাগিয়ে
কাজের মেয়েটি কাজ থামিয়ে পলকহীন চেয়েছিল!

চোরাবালি তোমার দু’ঠোঁট কাঁপছিল থরোথরো;
ভীষণ আকাঙ্ক্ষিত তোমার দু’হাত কাঁপছিল জড়োসড়ো!
রংতুলি–মেঘ–কবিতার বই–মুঠোফোন ফেলে রেখে
তোমার দু’হাত এক টুকরো কাগজ ধরে রেখেছিল;
মিথ্যা–বার্ধক্য–অভিনয়–শ্লোগান সরিয়ে রেখে
তোমার দু’চোখ আজ বিকেলে আসা একটি চিঠি পড়ছিল।
নিয়ম ভাঙ্গা কার্যকারণে বিশ্বাস হচ্ছিলোনা তোমার
হাতে লিখা এক বাক্যের চিঠি তুমি পড়ছিলে বারবার,
তোমার কৃষ্ণগহবর দু’চোখ পড়ছিল –
‘ভালোবাসতে চাই তোমাকে, আরেকবার’!..”

..'BECKONING JADE DREAMS'..

..'BECKONING JADE DREAMS'..

"..Ah! How sweet the days were!
We waited for passionately each other,
Like starved birds in a nest being eager.
After the day’s turn to the sweet night;
Holding beloved desires with plight
Ah! How sweet the days were!

When the gentle breeze passed me whispering
Touched my glowed cheeks with dew-blistering
I fancied those as were from thine presence
Walked with thee grabbing thy hands
We together went for roving
Through the leaves-fallen forests,
Over the icy-blue dreamy oceans
Thrashing the flowers on a vase floating
We together went a roving.
Ah! How aching sweet the days were!
With a lot words-made necklace
Keeping the earnest love in heart bottomless
I whispered & found thee sleeping
At the corner of the bed like a child
Having waited long & thought of
The beloved’s being so unkind
I made futile efforts to keep thou sleeping
Knew not how thou woke up & with eyes tiring
And with thine loving roving eyes we went a roving!.."

“..ফিরে দেখা স্বপ্ন সবুজাভ..”

“..ফিরে দেখা স্বপ্ন সবুজাভ..”

“..অতলান্তিক স্বাপ্নিক ছিল দিনগুলো
আমরা দু’জন আবেগি দু’জন অপেক্ষারত
যেন ক্ষুধার্ত পাখি আগ্রহী তার নীড়ে
যখন দিনের পরিসমাপ্তি শুভ রাত্রির তীরে
আঁজলায় নিয়ে কামনা আর হতাশাগুলো
কি অতলান্তিক স্বাপ্নিক ছিল দিনগুলো!
স্নিগ্ধ বাতাস পাশ কেটে যেত যখন ফিসফিস করে
ছুঁয়ে যেত দীপ্ত কপোল আর স্বেদ কণারে
সে, শুধু সে ছিলো বলে
ভ্রমণ বিলাসী হতাম ঐ দু’টি হাত ধরে
আমরা দু’জন পথিক হতাম পথের পিঠ মাড়িয়ে
হেঁটে বেড়াতাম পাতাঝরা বনের কুমারী বুকে
কল্পনার নীলাভ শীতল সমুদ্রের অধরে
ভাসতে থাকা ফুলের শতদল বসন্তের আধারে
কি অতলান্তিক স্বাপ্নিক দিন ঘিরে ছিল দু’জনেরে!
কি সুখের মতো ব্যাথাদায়ক ছিল সেসব দিনগুলো!
শব্দ দিয়ে গাঁথা মালা গলায় পড়াতে
অনিঃশেষ ভালোবাসা হৃদগভীরে নিয়ে
আমি ফিসফিস করতাম এবং সে ঘুমন্ত
বিছানার একপাশে ছোট্ট শিশুর মতো
অপেক্ষা করে দীর্ঘক্ষণ এই ভেবে ভেবে -
এতোটা নিষ্ঠুর, ভালবেসেছিলো সে যাকে!
তাঁর ঘুম না ভাঙানোর ব্যার্থ প্রয়াসের মতো
আমিও ব্যার্থ হতাম
কিভাবে যেন সে হঠাৎ সজাগ
নিয়ে ক্লান্ত দু’টি চোখ
আর আমিও হারাতাম
অনায়াসে ডুবে যেতাম;
ছুটে বেড়ানো তাঁর দৃষ্টির সাথে সাথে
ছুটে বেড়াতাম ছায়াহীন একসাথে!..”

..‘তাঁর পরিচয় চাই’..

..‘তাঁর পরিচয় চাই’..

“..তখন আমার সাহস ছিল
চিৎকার করে বলার – চিনি, চিনি, চিনি
আমি তাঁকে চিনি!
আমার কাছে তাঁর পরিচয় অজর-অক্ষয়
প্রিয় মৌমাছি, প্রিয় রাণী
তোমার মধুগৃহ সাজাই আমার অসংখ্য আমি!
সবুজের সাথে যেমন করে অন্ধকার বাঁচে
গাঢ়তর দিনে প্রিয়তম সূর্যের সর্বোচ্চ উড্ডয়নে
সে আর তাঁর পরিচয় এমন অবাক
গ্রহে গ্রহে যেমন প্রাণের ভেদ
সুতোয় জড়ানো সূত্র, আমার প্রয়োজনে।
চেয়েছি বলে গাঢ়রঙে রাঙা ঠোঁট
চাইনি বলে সমস্ত ছেড়েই আবির্ভাব যার
একবার ফুলে-ফলে সাজানো
আরেকবার শুধুই সুন্দর – পাতাবাহার!
আমাদের অন্তর্গত পাখিদের অনবরত কিচিরমিচির
প্রাত্যহিকতায় ক্লান্ত মৌখিক পেশী
এইখানে আমাদের বিশ্রাম, নৈশব্দের নাম দেই শিশির!
সরল বলে কিছু নেই; যেমন নেই সহজ -
কাকে বলে সন্ধ্যা, কাকে বলে রাত্রি?
দৃষ্টিগ্রাহ্য তারা পাই খাঁজকাটা
হৃদয়ের নিচে এক টলটলে হ্রদ!
তাতে এক মাঝি হাঁক দেয়,
অহর্নিশ এপার-ওপার করি যাত্রী।
সন্ধ্যা ঘরে ফেরে জলে ধুয়ে পা
সব কটা খিল এঁটে রাত্রি ঘুমায়
উত্থান অতঃপর দ্রুততায় বহুমাত্রিক পতন
বাঘ চোখ গায়ে এঁকে কিশোরী জোসনায়।
মৃদু কড়া নাড়া থেকে বজ্র নিনাদ
জেগে উঠে বসে নিষ্ঠুর ঘুমাই
আমার পরিচয় জানে বাতাস -
সে কে? তাঁর পরিচয় চাই!
কখনও চেতনা, বুদ্ধি, মন ও মুখোশের দেবী
কখনও মধুগৃহে আর্ত রাণী মৌমাছি
ভেজা আর স্নানের পার্থক্য জানা হলে -
পরিচয় ভুলে যাই - চেনা হলেই বাঁচি।
সুবর্ণা সে বসন্ত আমার, আমার যৌবন
তাকে বলি রাত্রির শিশিরে সাজানো সুন্দর সবুজ
সম্মুখে হাঁটুগেড়ে অনুনয় করি,
আধখানা দিয়েছে পরিচয়, আধখানার নাই খোঁজ।
বাজপাখি সমাজ মাটিতে চোখ
কোথাও নেই একজোড়া ছেঁড়া স্যান্ডেল
তাঁর নগ্ন পায়ে শুধু শোক!..’’

..‘যদি পারতাম – হঠাৎ বৃষ্টির সেদিনের সন্ধ্যায় মুছে দিতাম’..

..‘যদি পারতাম – হঠাৎ বৃষ্টির সেদিনের সন্ধ্যায় মুছে দিতাম’..

“..কদমের বর্ষা চোখে টলমল আহত জিজ্ঞাসা তোমার
মেহেদির রঙে সুচারু আহবান নকশা দু’হাতে তোমার
অসহনীয় নিস্তব্ধতার মেঘদল যেন খোলা চুলের গাঙে
বেদনার নীল ছড়ায় নীলে আরও নীলে নীল ভাঙে
অসহ্য লাগে এক গান থেকে আরেক গানের মধ্যকার সময়
অশেষ লাগে একা ঘরে একাকীত্বের সাথে একান্ত প্রণয়
অথবা নির্ঝঞ্ঝাট ব্যস্ততাহীন সময়ের বেঁচে যাওয়া
অথবা পুরনো প্রিয় কবিতার পাতা রাস্তায় খুঁজে পাওয়া
যদি পারতাম – দ্বিধাহীন – স্বতঃস্ফূর্ত ছুটে যেতাম
বকুল কথার শেষদিন – মাধবীলতার বিছানায়
নারিকেল শাঁস ছোঁওয়া ছায়া কাঁপা স্নায়বিক দুপুরে
যদি পারতাম – শর্তহীন – ফিরে যেতে পারতাম
চিরকাল সবুজের মতোন মগ্নতার জলে মাথা রেখে
ভেজা রোদে খুব দক্ষিণে পরগাছা পংক্তিমালা রেখে
ঝম ঝম করে ফোঁটায় ফোঁটায় বুকের অতল গভীরে
আমি সারারাত গল্প হতে হতে ঘাস হতাম
শীর্ষাগ্র থেকে মুক্তোর মতো শিশির ঝরিয়ে ঘাস হতাম
যদি পারতাম – চোখ বন্ধ করে ঘাসের মতো গন্ধ নিতাম
সবুজ ঘাসের মতো আমার উপর ঝরে পড়তো মৌতান
দুলে দুলে ঝরে ঝরে আমাকে ঢেকে দিতো ছাতিমের ফুল
যদি পারতাম – হঠাৎ বৃষ্টির সেদিনের সন্ধ্যায় মুছে দিতাম
মুছে দিতাম অধরে তোমার ওষ্ঠ রেখে প্রথম অকাব্যিক ভুল!..”

..‘তোমাকে’..

..‘তোমাকে’..

“..তুমি আমার প্রিয় রহস্য, গোলকধাঁধা!
সবাক চিন্তা-ভাবনাগুলো স্তব্ধ করে দেয়া
অবাক অদ্ভুত আলোকছটা।
কখনো মা, কখনো বোন, কখনোবা
প্রিয়তমার মতো আশ্চর্য উপস্থিতি তোমার।
শ্রান্ত শরীর আঁচলে নিয়ে, মিষ্টি বকুনির চোখ রাঙিয়ে,
সব ভুলিয়ে উষ্ণ আলিঙ্গনে বেঁধে – তুমি আমার কাছে বৈচিত্র্যপূর্ণ,
তুমি আমার অলিখিত প্রেম, তুমি আমার প্রকাশিত আকাঙ্ক্ষা,
তুমি আমার – নারী!

তোমার অনামিকায় অনামিকা রেখে
আমি দেখেছি সৃষ্টির শুরু – কামনার প্লাবন
– স্বপ্নতারাদের ছুটে চলা।
তোমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পেয়েছে অঞ্জলি আমার;
আজ অবধি তোমার দেয়া অজস্র অনুভূতি
আমার কাছে সমান প্রিয়,
অনিমেখ মনোযোগের কৃষ্ণগহবর।
তোমার মেলে ধরা প্রান্তরে সরব উপস্থিতি
এবং অবগুণ্ঠিত বন্দরে নীরবে দিয়েছি প্রাচুর্য অমূল্য
– আমার একাকীত্ব!
এতোটা বছর কেটে গেলেও
তুমি আমার কাছে যৌবনা অনন্ত;
হঠাৎ বজ্রপাতে কেঁপে উঠা কাজল চোখের মতো –
যার আয়নায় প্রতিনিয়ত খুঁজে ফিরি প্রতিচ্ছবি আমার,
যার স্পন্দিত হৃদকম্পনে প্রতিধ্বনিত করতে চাই নাম আমার –
নিটোল, নিখাদ!
একসাথে চলার অদ্বিতীয় পথে
আমাদের দু’জোড়া পা অবিরাম গেঁথে যাক
অনুসরণীয় পদছাপ!..”

..‘কিছু কিছু মানুষ আছে’..

..‘কিছু কিছু মানুষ আছে’..

“..কিছু কিছু স্পর্শ আছে -
মহাকালকে ধরে রাখা ক্ষণকালের ক্ষীণ ডায়ালে
চোরাবালির মতো ঘর-মন-জানালা নিয়ে
বুদ্বুদে ফোটায় জল কন্যা-পুরাণ কন্যা
অবশেষে নিটোল-অমল নারী এবং ঘরকন্না
শরীরঘাসে হাসনাহেনা কিংবা গুচ্ছ গুচ্ছ বকুল
পাখায় নিয়ে বর্ণ হাজার প্রজাপতি
হারিয়ে আধেক হঠাৎ সবাক ভাষা হারানো রংধনুভুল
অহোরাত্র কাটিয়ে দেয়া স্বপ্নলতায় পেঁচানো সুর
গুনগুনিয়ে বাজতে থাকা-আছড়ে পড়া
কেঁপে উঠা অজানিত-অযাচিত মনের নীলে খুব সুদূর
পায়ের ছাপে-জলের ছলে-কামে-ঘামে-পাপড়িদলে
কিছু কিছু গন্ধ আছে -
মাতাল করা শিশির যেন গায়ে-দেয়ালে
পত্র-পাতায়-ছোট্ট কিছু বিশাল ভুলে
ছুটতে থাকা অবাক সকাল পিছলে পড়া কলসি থেকে
মেঘদল আর গাঙচিল চোখ রুদ্ধ থেকে অবরুদ্ধ
হাতের মুঠোয় জোস্না ভরে বেগুনি আলোয়
কম্পিত যে ছায়া শরীর তার কায়া ঘেঁষে
দাঁড়িয়ে থাকা আপন বাতাস ভাসিয়েছে যেই ঝিম চাদর
তার আঁচল খুলে বাঁধন ভুলে উড়িয়ে দিয়ে সব ফানুস
খুঁজে বেড়ানো সেই মানুষ; যার দু’ঠোঁটে কিংবা ওষ্ঠে কিংবা অধরে
কবিতা হবে অঙ্কিত, অথবা হবে মুদ্রিত, অথবা হবে ঈপ্সিত
কিছু কিছু মানুষ আছে -
আঙুল খোঁজে না, স্তন খোঁজে না
বুকের ভাঁজে-কোমর খাঁজে
নিখাদ ঢেউয়ের বাঁক খোঁজে না
আমৃত্যু – অতন্দ্র;
শরীরে তারা দু’ঠোঁট খোঁজে
খোঁজে অশ্রুত কবিতা যতো!..”

..‘যখন ঘুমিয়ে পড়ে তোমার কাজল দু’চোখ’..

..‘যখন ঘুমিয়ে পড়ে তোমার কাজল দু’চোখ’..

“..যখন ঘুমিয়ে পড়ে তোমার কাজল দু’চোখ
আমি হাতড়ে ফিরি, আঁকড়ে ধরি
ভাঙা আয়নার কাঁচ – মেঘদলের খুলে যাওয়া সাজ
পাখিদের পরিত্যক্ত নীড় – টলমল সবুজ দীঘি সুনিবিড়
জন্মান্ধের মতো, হাঁটতে শেখা মানবশিশুর মতো
শুচিবায়ুগ্রস্ত গৃহিণীর মতো, খুঁতখুঁতে শিল্পীর মতো
আমি হাতড়ে ফিরি, আঁকড়ে ধরি
বর্ণিল-উজ্জ্বল-চোখ ধাঁধানো-প্রশংসিত;
আমার অনুভূতিরা গুমরে কাঁদে
সৌন্দর্য আজ নিহত প্রতিক্ষণে, প্রতিপদে
ধার করা আলোর ঝলকানি ধারণ করবে না বলে
ভেঙে পড়ে যে আয়নার কাঁচ
প্রবল প্রবঞ্চিত উপমায় বিবস্ত্র মেঘদল
স্বেচ্ছা নির্বাসিত দারুণ হতাশাগ্রস্ত চড়ুইয়ের সংসার
অমিতাভ শান্ততা বিলিয়ে নিপাট উজাড় দীঘির বুদ্বুদ
কারও কাছে আজ সৌন্দর্য নেই!

সলজ্জ সাধ ছিল আজন্ম
গুচ্ছ গুচ্ছ কোমল স্নিগ্ধতায় চোখ রাখবো
ছায়াঘেরা অরণ্যে যেভাবে মুখ রাখে বাতাস;
কাঁপা কাঁপা মাদকপূর্ণ সুরে শ্রবণ ভেজাবো
বিস্মৃত পিছুডাকে যেভাবে ঘুরে দাঁড়ায় পথিক!
শুধুই হাতড়ে ফিরি
আজ কোথাও নেই সৌন্দর্য
নিজেকে খুঁজে পাই শব শোভাযাত্রায়
কোথায় মেলে ধরবো তৃষ্ণার্ত দু’চোখ?
কোন সৌন্দর্যের ঠোঁটে রাখবো দু’ঠোঁট?
যদি তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো
বলো, কার ঠোঁটে রাখবো আমার দু’ঠোঁট?..”

..‘আমার চোখের ফ্রেমে’..

..‘আমার চোখের ফ্রেমে’..

“..আমারও দু’চোখ ছিল, গাঙচিল দৃষ্টি ছিল আমারও সুতীক্ষ্ণ
জল দেখতাম জলের মতোন, জোস্নায় দেখতাম চাঁদের দহন
রোদ-বৃষ্টি-মেঘ-নীলাকাশ-ভয় জাগানো রাত দেখতাম যখন তখন
এভাবে নয়, ঠিক এভাবে নয়; আমি দেখতে চেয়েছিলাম দেখাবার মতোন!

প্রাপ্তির বর্ণছটা যখন শতদলে নিজেদের মেলে ধরে প্রজাপতি মিছিলে
আমি তাদের দেখতে পাই মুগ্ধ বাতাসের মতো
আমি তাদের গেঁথে নিতে চাই দু’চোখে
যেভাবে সবুজ-শান্ত দীঘির জল ধরে রাখে মাছেদের কাঁপন!
যেভাবে এলোকেশী হাওয়া ছুঁয়ে দেয়, নুইয়ে দেয় সোনালী ধানক্ষেত
উৎসবে-পার্বণে আশীর্বাদ বিলানো অগ্রজের মতো
অথবা বৃষ্টিস্নাত রাস্তায় হুডতোলা রিকশায় উদ্বেলিত যুগল কদমফুল
কিংবা সীমাবদ্ধতার আকাশ ফুঁড়ে প্রত্যয়ী একরোখা চুলের
সুনীল মেঘদল হয়ে যাওয়া
অথবা প্রশান্তির মতো অজস্র নক্ষত্রদের ফুটে উঠা
দরিদ্রতমর ধোঁওয়া উড়া ভাতের থালে
এবং শ্লোগানে মুখর উচ্চকিত কণ্ঠ, মুঠোবদ্ধ অনমনীয় হাত
নিকষ কালো ভয়, অনিশ্চিত আগামীকাল;
প্রলাপ বকা একঘেয়ে কম্পিত জ্বরের রাত
আর কিছু অনুভূতি ঈপ্সিত, কিছু মুখছবি অঙ্কিত!
আমি তাদের দেখতে পাই মুগ্ধ বাতাসের মতো
আমি তাদের দেখাতে চাই সূর্যালোকের মতো
আমি চাইনা তারা বাঁধা পড়ে থাকুক দৃশ্যাবলী নামে
আমি চাই দেখুক সবাই,
দেখুক সবাই মুহূর্তের মধ্যে ধরা মহাকাল –
আমার চোখের ফ্রেমে!..”

..‘এখন আমার সময় হয়েছে নতুন করে জন্ম নেবার’..

..‘এখন আমার সময় হয়েছে নতুন করে জন্ম নেবার’..

“..বন্ধন ছিঁড়েই প্রথম জন্ম হয়েছিল আমার
মনে নেই তাই তৎকালীন চারপাশ
ওখানে কি রোদ-বৃষ্টি-মেঘ-জোছনা ছিল?
স্পর্শ ছিল? চুম্বন ছিল? উষ্ণতা-আলিঙ্গন ছিল?
মনে নেই, আমার কিছুই মনে নেই!
আমার তখনও জন্ম হয়নি;
আমি তখনও বন্ধনে ছিলাম।

তারপর এলো এলোকেশী নিয়ে পরিচিত সুঘ্রাণ
নরম বুকে মুঠোভরা ঘুম, কপালে সুরক্ষার কাজল টিপ
অর্থহীন শব্দগুচ্ছ – আঞ্চলিক সুরাশ্রয়ী গান
শ্যামলা পায়ের দোলনা - সস্তা শাড়ির বিছানা
দমবন্ধ আলিঙ্গন আবেগি, ডাগর চোখ চাতকী
আমি আটকে যাচ্ছিলাম বাঁধনে – প্রেমিকা প্রথমার
আমাকে আকস্মিক মুক্তি দিল আগরবাতির ধোঁয়া
কিছু বুঝে নেবার আগেই বন্ধন হারালাম
অতঃপর আবদ্ধ হলাম তার চিরায়ত সন্ধানে!
এলো অজস্র কল্লোল, জানালা আড়ে অনুসৃত চোখ
মমতা মাখানো টিফিন বক্স, সুদর্শন পরামর্শ
ঝড়ের মতো উড়ে বেড়াতে লাগলো ঠোঁট-আঙুল
ঝড়ের মতো উড়ে বেড়াতে লাগলো ঠোঁটে-আঙুলে
আমি ভেসে বেড়ালাম – নামে, প্রেমে, ঘামে!
তারপর বর্ষপঞ্জিকার পাতা উড়ে উড়ে
নিয়ে যাচ্ছে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আমার বছর বছর
আত্যন্তিক কেড়ে নিচ্ছে চোখের কাজল
চুলের প্লাবন, ঠোঁটের কাঁপন, রুদ্ধশ্বাস বুকের
আমি বকুলপাপড়ি জড়িয়ে রাখি বুক পকেটে গন্ধ নিয়ে
হাসনাহেনার শিশির জমাই ছড়ানো কথায় চোখের কোণে
কাঁঠালচাঁপা মুঠোতে রেখে ঘড়ির কাঁটায় কৃষ্ণচূড়া
খুব একাকি বইয়ের ভাঁজে লুকিয়ে রাখি স্বর্ণলতা
ঝাঁকড়া চুল-বেতফল-গাঙচিল-মেঘদল
আলিঙ্গনে জড়ায় তবু বাঁধতে পারে না
প্রতিশ্রুত-প্রতীক্ষিত রাখে তবু বাঁধতে পারে না
আমি বাঁধা পড়ি নিরন্তর, আপাদমস্তক
দ্বিতীয়া-তৃতীয়া-চতুর্থী-পঞ্চমী-গণনাতে
আমার বোধ-মনন-স্বপ্ন ঘুরতে থাকে নাচের মুদ্রায়
আমি বাঁধা পড়ে গেছি তোমাতে;
রুপ-রস-বর্ণ-গন্ধ ভুলে
আমি বাঁধা পড়ে আছি তোমাতে!
এখন আমার সময় হয়েছে নতুন করে জন্ম নেবার
প্রথম জন্ম – নাড়ি ছিঁড়ে
দ্বিতীয় জন্ম – নারীকে ছেড়ে
এখন আমার সময় হয়েছে নতুন করে জন্ম নেবার!..”

December 19, 2014

..'আজকের বিজয় দিবস'..

..'আজকের বিজয় দিবস'..

“..আমার দু'হাতে আজ ফুল থাকার কথা ছিল
আমার দু'পা আজ নগ্ন থাকার কথা ছিল
আমার দু'চোখে আজ স্বপ্ন থাকার কথা ছিল
আমার চুলগুলোর আজ মেঘ ছোঁবার কথা ছিল
আমার কণ্ঠে আজ গর্ব থাকার কথা ছিল

যদিও
শেকলপরা দু'হাতে বার বার মুছে যাচ্ছি
জমাট রক্তের মতো জুতোজোড়ার লাল রং
দু'চোখের চাপা অশ্রুতে; মাথা নিচু করে
কণ্ঠনালীতে শক্ত হয়ে বসে থাকা দু'হাত
উপেক্ষা করে ক্লান্ত ফুসফুস – মৃতপ্রায়, অবশ
অবশেষে ধারণ করে আছে হৃদপিণ্ড
ভীত, বড়ো একঘরে আজকের বিজয় দিবস!..’’