December 27, 2012

..‘এবং আমি মৃত্যুকেও করবো আলিঙ্গন’..

..‘এবং আমি মৃত্যুকেও করবো আলিঙ্গন’..

“..এবং আমি মৃত্যুকেও করবো আলিঙ্গন
কথা দাও – ভীষণ প্রাণবন্ত এই আমার কিছু শর্ত
তুমি করবে পূরণ;
প্রতিশ্রুত নই, আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ
সব অধিকার ছেড়ে মৃত্যুকেও করবো আলিঙ্গন!

যদি চাও বিষপানে হোক মৃত্যু আমার
তবে তাই হোক – কথা দাও
ধারণ করবে হেমলক অধর তোমার
আমি আকণ্ঠ পান করবো সেই পেয়ালা
তোমার অধরে রাখা আমার ওষ্ঠের প্রতিটি ক্ষণ
আমি করবো উদযাপন –
স্বপ্নের মতো, তোমার অস্তিত্তের মতো
ধমনি-শিরায় বিষ ছড়াবে তখন, অতঃপর
মৃত্যুকে আমি করবো আলিঙ্গন!

যদি চাও তুলে নেয়া দুচোখের রক্তপাতে মৃত্যু আমার
তবে তাই হোক – কথা দাও
মেলে ধরবে প্রতিটি পাপড়ি তোমার
যেন বর্ষায় স্নাত কদম, যেন আঁজলায় ধরা রঙ্গন
দু’চোখ আমার তুলে নিও তুমি
রক্ত না হয় প্রাপ্তি হয়ে ঝরবে
অঝোর ধারায় তখন, অতঃপর
মৃত্যুকে আমি করবো আলিঙ্গন!

যদি চাও ছোঁড়া পাথরে হোক মৃত্যু আমার
তবে তাই হোক – কথা দাও
আমার আপাদমস্তক লক্ষ্য করে
উড়ে আসা প্রতিটি পাথরে
স্পর্শ থাকবে তোমার, গন্ধ থাকবে তোমার
আমি পলকফেলা চোখে
ছুঁড়ে দেয়া পাথররাজিকে জানাবো স্বাগতম
যেন তারা তোমার খোঁপা থেকে খসে পড়া
কাঁঠালচাঁপার বর্ষণ, অতঃপর
মৃত্যুকে আমি করবো আলিঙ্গন!

যদি চাও শ্বাসরোধ করে হোক মৃত্যু আমার
তবে তাই হোক – কথা দাও
অসংখ্য মানুষের করুণায় বেড়ে উঠা আমার এ কায়া
আন্তর ভালোবাসায় জড়াবে শরীরে তোমার
ছড়ানো চুল ঢেলে দেবে আঁধার দু’চোখে
উদ্ধত বুক বিদ্ধ করে হৃদয়
বাড়াবে রক্ত সঞ্চালন
তোমার ঠোঁটে উচ্চারিত আমার নাম অস্ফুট
দখল করবে বিস্মিত শ্রবণ
উষ্ণ শিশির তোমার বুকের ত্বকে
বেয়ে পড়বে যখন; বাঁধনহীন বাঁধন হবে
তোমার জড়ানো বাহু তখন
মুখ লুকানো তোমার বুকে দারুন তৃপ্ত আমার
হবে না নিঃশ্বাসের প্রয়োজন
অতঃপর,
মৃত্যুকে আমি করবো আলিঙ্গন

বিশ্বাস করো গুনগুন –
প্রতিশ্রুত নই, আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ
তোমাকে দিয়ে যদি হয় আয়োজন
ভীষণ অযাচিত মৃত্যুকেও আমি করবো আলিঙ্গন!..’’

December 25, 2012

..‘এলোমেলো ১-৫’..



..‘এলোমেলো ১-৫’..
 
..‘এলোমেলো-১’..
 
“..বাংলার শীত পূর্ণতা পায়
কুয়াশা ভিজিয়ে আঁচলে
আমার যেমন রাত আসে
মুখ লুকিয়ে তোর বুক তলে!..’’
 
..‘এলোমেলো-২’..

“..তোমার সলজ্জ সাধ
পূরণে আমি অপারগ
মুখ ঢেকেছে চুলের আঁধারে
ঠোঁটেতে তোমার আঙুলের নখ!..’’
 
..‘এলোমেলো-৩’..
 
“..তারপরেও অপেক্ষায় আছি,
জমে থাকা নোংরা উপচে পড়ে যদি হয় নদী;
তারপরেও অপেক্ষায় আছি,
পথ ভুলে আমার এ ভাঙা কুটিরে
তুমি আসো যদি!..’’
 
..‘এলোমেলো-৪’..

“..কোথাও আমি হারাইনি তো
আছি, ঠিক যেখানে ছিলাম;
বন্ধ যদিও ঘড়ির কাটা
তবু দুলছে পেন্ডুলাম!..’’
 
..‘এলোমেলো-৫’..
 
“..তবুও দৃষ্টি আমার তোমাকে ঠিকই খুঁজে নেবে
হয়তোবা ভেসে ভেসে, হয়তোবা ডুবে
হয়তোবা খুঁজে পাবে ঠোঁট তোমার অথবা স্তন;
হয়তোবা অনিমেষকাল, হয়তোবা কিছুক্ষণ!..’’

December 23, 2012

..‘আমি বিশ্বাস করিনা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে ২১শে ডিসেম্বর’..

..‘আমি বিশ্বাস করিনা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে ২১শে ডিসেম্বর’..

“..আমি বিশ্বাস করিনা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে ২১শে ডিসেম্বর
যা ইচ্ছে লিখা থাকুক মায়া সভ্যতার ইতিহাসের পাতায়
এখনও কম্পিত আঙুল স্পর্শ করেনি লাজুক আমার প্রিয়ার অধর
এখনও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আশায় ভিজছে কুয়াশায় বাংলার মাঠ প্রান্তর

এখনও নির্ভীক, নিঃসঙ্গ চড়ুই পাল্লা দেয় দাঁড়কাকের পিছু
ছিনিয়ে আনতে তার সন্তান দারুণ ঐক্যবদ্ধ গোষ্ঠীর দলনেতার ঠোঁট থেকে
এখনও বস্ত্রহীন টোকাই শিশু মাঘের সকালে সূর্যকে ভেংচি কাটে
এখনও এদেশের বিভিন্ন টাকার নোটে জাতীয় অন্য নেতাদের মুখায়ব আসা বাকি
আমি বিশ্বাস করিনা ২১শে ডিসেম্বর ধ্বংস হয়ে যাবে এ পৃথিবী

এখনও বাংলার ঘরে ঘরে নবজাতকের নামে
শোভা পাচ্ছে আরবি, হিন্দি, ইংরেজি অক্ষর
এখনও দুর্নীতির কালো টাকায় কেনা রং ফর্সাকারী ক্রিমে
অচেনা রয়ে গেছে দেশদ্রোহীদের ঘরদোর
আমি বিশ্বাস করিনা, কখনোই না
এতো শীঘ্রই আর যাই হোক
পৃথিবী ধ্বংস হতে পারেনা!

এখনও জ্বলে ওঠেনি সেসকল বাতি
দীর্ঘ ৪১ বছরের ইতিহাস একটু একটু করে
যাদের করে আসছে লালন
এখনও রয়েছে বাকি পৃথিবীকে দেখানোর
দুর্যোগপ্রবণ দেশে আলোর প্লাবন

এখনও রয়েছে বাকি অনেক জমানো দেনা
দায়বদ্ধতার জোয়াল কাঁধ থেকে নামিয়ে
রয়েছে বাকি চোখ মেলে দেখা একটি সুন্দর ভোর
এখনও কম্পিত আঙুল স্পর্শ করেনি লাজুক আমার প্রিয়ার অধর
এখনও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আশায় ভিজছে কুয়াশায় বাংলার মাঠ প্রান্তর
আমি বিশ্বাস করিনা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে ২১শে ডিসেম্বর!..’’

..‘এ শহরে আমাদের রাত কেটে যায় আধেক ঘুমে’..

..‘এ শহরে আমাদের রাত কেটে যায় আধেক ঘুমে’..

“..এ শহরে আমাদের রাত কেটে যায় আধেক ঘুমে
সবুজ পায়রার বুক চিরে আনবো বলে
নীল রক্ত; ছুটে চলা সম্মুখে
ভেজা মাটি, উষ্ণ জল ছুঁয়ে যাওয়া বাতাসে
সুরভিত কাঁপন ভুলে রাত কেটে যায় আধেক ঘুমে!

বড়ো অসুখী, অপূর্ণ ব্যক্তিগত এবং দাম্পত্য জীবন
পারিবারিক জীবনের পাপোষতলে পিষ্ট অপ্রাপ্তির সূর্যমুখী
সৌন্দর্যের খোঁজ করে পথচলা নরনারীর দেহে চোখ তুলে
স্বপ্ন দেখার পর্যাপ্ত সময় অনুপস্থিত দেয়াল ঘড়ির কাঁটায়
দৃষ্টি থেকে বৃষ্টি শুকিয়ে গেলে পরে অনেক দাম দিয়ে
কেনা হয় স্বপ্ন; স্বাপ্নিক চোখ; স্বপ্নের বসন্ত – আড়ালে
থেকে থেকে গুমরে কাঁদে স্বপ্নের প্রিয়তমা
তারা নয়; এখানে দারুণ মূল্যবান স্বপ্নদের দাইমা
বংশানুক্রমিকভাবে নিদ্রাহীনতার যথার্থ উদাহরণ
এ শহরে আমাদের রাত কেটে যায় আধেক ঘুমে
পূর্ব নির্ধারিত এখানে আমাদের পথ, পথে হাঁটা, পথের সঙ্গী
নীরব সংগীতের মতো মৃত, দুর্লভ স্বার্থহীন চোখ
নেই মূর্ছনা, নেই আছড়ে পড়া, নেই থরোথরো কাঁপা ঠোঁট
নেই নিটোল উচ্ছ্বাস, নেই আন্তর হাহাকার, নেই স্বপ্নে গর্ভবতী দুচোখ
স্বপ্নহীন রাত এ শহরে আমাদের কেটে যায় আধেক ঘুমে
স্বপ্নহীন দিন এ শহরে আমাদের শুরু হয় আধেক ঘুমে
স্বপ্নহীন জীবন ছুটে চলে অবিরাম স্বপ্নহীন সম্মুখে
স্বপ্নহীন প্রিয়ার বন্ধ্যা দু’ঠোঁট পড়ে রয় স্বপ্নহীন আমার অধরে!..’’

December 14, 2012

..‘আমার দুচোখে গাঁথা স্বপ্ন’..

..‘আমার দুচোখে গাঁথা স্বপ্ন’..

“..আমার দুচোখে গাঁথা স্বপ্ন, স্বপ্নে দুচোখ আছে ভরে
নিদ্রাহীন আমার দুচোখ শুধু স্বপ্ন জমা করে

আমি স্বপ্ন দেখছি এ শহরের অলিতে-গলিতে
গজিয়ে ওঠা অজস্র ধর্ম ব্যবসায়ীদের আশ্রম ভেঙে পড়ছে
অদৃশ্য হচ্ছে, মিশে যাচ্ছে মাটির ভেতরে
সেখানে মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে ছায়াঘেরা সাজানো বাগান
প্রবেশ পথে সাতরঙা ফুলের দোকান
প্রতিনিয়ত সেখানে সুরভিত বসন্ত, গুঞ্জরিত প্রেমপূর্ণ জুটি
স্বপ্ন দেখছি কবিতার মতো ঝরে ঝরে পড়ছে
নিটোল, অমল, স্বপ্নিল শব্দগুচ্ছ সংসদ অধিবেশনে
লক্ষ লক্ষ সূর্য মাথায় নিয়ে আলো ছড়াচ্ছে শিক্ষক
প্লাবিত হচ্ছে আঁধার; দীপ্তি স্রোতে প্রতিটি শিক্ষা ভবনে

স্বপ্ন দেখছি সুশিক্ষিত রাজনীতিক গোষ্ঠী ছুঁড়ে ফেলে নামের প্রথম
অথবা শেষাংশ যোগ্যতা হিসেবে বাছাই করছে মেধা
গড়ে তুলছে সমাজ নবজাতক শিশুর মতো নিষ্পাপ
ঝেড়ে ফেলছে অন্যের উপর দোষ চাপানোর প্রবণতা
নিজ শরীরের মতো ভালোবেসে অনুকরণীয় করছে ভবিষ্যৎ

স্বপ্ন দেখছি প্রতিটি উৎসব-পার্বণে ঘরে ঘরে বাজছে
দেশীয় গান জারি, ভাওয়াইয়া-ভাটিয়ালি
গায়ে হলুদ – বিয়ে – জন্মদিনে তরুন-তরুণীদল নাচছে
কুয়াশার মতো ঘিরে মুখরিত কাকলী
প্রাণ খুলে একে অপরের সাথে আনন্দ ভাগ করছে সবাই
ভালবাসছে নিঃস্বার্থভাবে; কেউ নয় শুধু পুরুষ অথবা নারী

স্বপ্ন দেখছি এ শহরে কেউ প্রত্যাখ্যাত নয়
আর যদিওবা থাকে –
নিকষ কালো আঁধার আনা হঠাৎ গভীর রাতে
ফুল ছুঁড়ে সে পালিয়ে যাবে তার ঐ স্নিগ্ধ মুখে!

আমার দুচোখে গাঁথা স্বপ্ন, স্বপ্নে দুচোখ যাচ্ছে ভরে
প্রিয়া,
পারো যদি দুচোখ ছেড়ে নেমে আসো কম্পিত অধরে
ধারণ করতে দাও আরও কিছু স্বপ্ন
তোমার জলে স্নাত আমার অথৈ সায়রে!..’’

..‘এলোমেলো: ১ - ৫’..

..‘এলোমেলো: ১ - ৫’..

..‘এলোমেলো-১’..

“..বারে বারে যাই ফিরে
চেনা সেই নদী তীরে
শূন্য করেছি আঁজলা ভরে
আমি যেই তটিনীরে!..’’

..‘এলোমেলো-২’..

“..ফিরিয়ে দিও,
ইচ্ছে হলে ফিরিয়ে দিও;
ফিরিয়ে দেয়া আমার গোলাপে
না হয় তোমার স্পর্শ দিও!..’’

..‘এলোমেলো-৩’..

“..’সাজলে তোমায় বেদেনীর মতো লাগে’ –
আমি বলবো লক্ষ বার;
রাগলে তোমায় কি সুন্দর যে লাগে!
আমি রাগাবো লক্ষ বার!..’’

..‘এলোমেলো-৪’..

“..প্রচারক নই কোন ধর্মের
তবু পেয়েছি প্রত্যাদেশ –
তোর ঠোঁটেই অমরত্বের আরক
তোর বুকেই স্বদেশ!..’’

..‘এলোমেলো-৫’..

“..অন্ধ করে দিও আমার দুচোখ
তোমার চুলের আঁধারে, আজ রাতে;
স্তব্ধ করে দিও আমার শ্রবণ
তোমার সিক্ত ঠোঁটের বাজনাতে!..’’

November 25, 2012

..‘আমাদের স্বেচ্ছা নির্বাসন’..

..‘আমাদের স্বেচ্ছা নির্বাসন’..

“..আমাদের স্বেচ্ছা নির্বাসন তোমাকে কি দিয়েছে জানিনা
আমাকে দিয়েছে দৃষ্টি অন্তর্ভেদী;
আমাকে দিয়েছে কালো বরফের হিম-পাঁজর
স্পর্শাহত নির্ভীক অধর
আর হয়তো তোমাকে –
অজস্র প্রশ্নোত্তর নিরবধি।

মৃত্যু ভয়ে ভীত ছিলাম না কখনোই
ভীত ছিলাম শুধু তোমাকে হারাবার ভয়ে
আমাদের স্বেচ্ছা নির্বাসনে পরাজিত হয়নি কেউ
তবু ক্রুর হাসি মহাকালের ঠোঁটে;
অপ্রত্যাশিত বিজয়ে।

যে তুমি ঘর্মাক্ত মুখে সন্তুষ্ট ছিলে আমার ঠোঁট ছোঁওয়া বাতাসে
যে তুমি ক্লান্ত শরীরে ঘুম যেতে আমার বোতাম খোলা বুকে
যে তুমি বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে চঞ্চল ঝাঁপতোলা রিকশায় আমার পাশে বসে
সেই তুমি আজ ভয়ংকর উদ্যান এক –
প্রতিশোধস্পৃহা আর হার না মানা অভিলাষ
আজ তোমার লতায়-পাতায়-ঘাসে।

যে তোমার সুনীল আকাশে গবাদিপশুর মতো
চরে বেড়াতো আমার স্বপ্নের মেঘদল
সেই তোমার সুনীল আকাশ আজ ছেয়ে আছে আঁধারে
সেখানে শুধু বজ্রপাত আর কালো কালো ঝড়-বাদল।

যে তুমি নিঃশ্বাসে-প্রশ্বাসে বয়ে আনতে বসন্ত আমার
যে তোমার দুহাত দিনভর প্রার্থনারত শুভকামনায় আমার
সেই তুমি আজ ভীষণ অনল ঝরাও
সেই তোমার দুহাত আজ ধারালো কুঠার

যে তোমার দুচোখ ছিল আদিগন্তহিমাচল
সেই তোমার দুচোখে আজ শুধুই দাবানল

আমাদের স্বেচ্ছা নির্বাসন তোমাকে কি দিয়েছে জানিনা
আমাকে দিয়েছে দৃষ্টি অন্তর্ভেদী;
অতলান্তিক প্রেমের নিঃস্বার্থ জোসনা
ধরে রাখতে পারেনি স্বাপ্নিক আমার আঁজলা,
গোধূলির আলোয় স্নাত আজ এ আমার অর্জিত উপলব্ধি!..’’

November 23, 2012

..‘এলোমেলো ১ – ২’..

..‘এলোমেলো ১ – ২’..

..‘এলোমেলো-১’..

“..চাইলেও কখনও তুমি
পারবেনা হতে ‘আমি’
অথবা কখনও আমি
পারবোনা হতে ‘তুমি’
আমাকে ডাকো তুমি ‘কাপুরুষ’ বলে
আমি ডাকি তোমায় ‘ষোড়শী’;
বাস্তবতার কি নির্মম পরিহাস -
অভিধান খুলে দেখি বাংলা ভাষায়
এই দুটি শব্দেরই রয়েছে
লিঙ্গান্তরের অনুপস্থিতি!..’’

..‘এলোমেলো-২’..

“..পেতে একটু ঘুম
চাই দুচোখে তোর চুম;
আর একটু যদি পারিস
দিস তোর বুকেরই উম!..’’

November 05, 2012

..‘এলোমেলো ১ - ২’..

..‘এলোমেলো ১ - ২’..
 ..‘এলোমেলো-১’..

“..প্রচণ্ড শীত; ঠোঁটদুটো

যাচ্ছে শুধু ফেটে –
তোমার ঐ ঠোঁটদুটো কি
আমার লিপজেল হবে ?..’’

..‘এলোমেলো-২’..

“..সূর্যটা গেছে ডুবে
দিগন্তের আঁচলে ;
মুখ লুকাতে চেয়েছি বলে
তোমার বুকের তিলে !..’’

October 28, 2012

..‘এলোমেলো ১ - ৬’..

..‘এলোমেলো-১’..

“..আমার কাছে উৎসব মানে
ঠোঁটে ছোঁওয়া তোর ঠোঁট
আমার কাছে উৎসব মানে
হাতের মুঠোয় তোর বুক
আমার কাছে উৎসবের মানে
জানে অন্তর্যামী
আমার কাছে উৎসবের মানে -
তোর ভেতরে আমি!..’’

..‘এলোমেলো-২’..

“..মাঝরাতে ভাঙ্গে ঘুম
চেয়ে দেখি আমি;
পাশে শুয়ে – সব হারিয়ে
পাওয়া আমার ‘তুমি’!..’’

..‘এলোমেলো-৩’..

“..এভাবে যেও না ছুঁয়ে
একটু একটু করে;
কায়াতে রয় না ছায়া
নীল জমে গভীরে!..’’

..‘এলোমেলো-৪’..

“..ধরো, একদিন ইচ্ছে হল
দুজনে মিলে চা খেতে,
তোমার ঠোঁট কি পেয়ালা হবে
উষ্ণ বাষ্পে – আমার চুমুকে?..’’

..‘এলোমেলো-৫’.. 

“..আসবি যেদিন ফিরে তুই
দেখবি আমি আর শূন্য নই;
তোর ঠোঁটে ঠোঁট রেখে বলবো –
চল একসাথে বুড়ো হই!..’’

..‘এলোমেলো-৬’..

“..নাইবা হলাম হাতের মুঠোয়
দুহাত দিয়ে ধরা;
হবো ঠিকই চেনা অধরে
অচেনা জলধারা !..’’

October 17, 2012

..‘এলোমেলো ১ - ৫’..

..‘এলোমেলো ১ - ৫’..

..‘এলোমেলো-১’..

“..আমার বন্ধ চোখের পাতায়
তোকে ছুঁয়ে যেতাম অহর্নিশ; নিটোল
আজকাল আমি ভীষণ নিদ্রাহীন –
তোকে ছোঁবো কিভাবে, বল?..’’

..‘এলোমেলো-২’..

“..কৃষ্ণ রাত আর রাধা জোছনা
পাইনি খুঁজে
কোনও নারীর চোখে
তাই ভালোবাসা হলো না !..’’

..‘এলোমেলো-৩’..

“..ডাক্তার কি জানে – তোমার ঘুমন্ত মুখ
আমার কতো প্রিয়?
আমি জানি আমার অনিদ্রার কারণ;
ঘুমের ঔষধ দিতে তাকে মানা করে দিও !..’’

..‘এলোমেলো-৪’..

“..একটু একটু শীত পড়েছে
রাস্তায় জমছে কুয়াশা;
চাদর কেনার টাকা তো নেই
তোমার আলিঙ্গন-ই শেষ ভরসা !..’’

..‘এলোমেলো-৫’..

“..কতদিন হয়ে গেল প্রিয়তমা
মুঠোফোনে কেউ জানতে চায় না –
আজ দুপুরে আমি
কিছু খেয়েছি কি না !..’’

October 11, 2012

..‘যেখানেই ছুঁড়ে দিই দৃষ্টি আমার পিপাসার্ত, বন্য’..

..‘যেখানেই ছুঁড়ে দিই দৃষ্টি আমার পিপাসার্ত, বন্য’..

“..যেখানেই ছুঁড়ে দিই দৃষ্টি আমার পিপাসার্ত, বন্য
আসে ফিরে পোষা পাখির মতো সাঁঝের আগেই কম্পিত, সন্ত্রস্ত!

দৃষ্টি আমার সূর্যালোকে খুঁজে পেতে আলোক ধ্রুব
ডানা মেলে দেয় দিগন্ত জুড়ে নাড়িছেঁড়া কোটর জড়সড়
অন্ধকার গলিপথ অথবা রাজপথ তার দুপাখার ছায়ায়
ডালিমের মতো পাঁজর ফাটিয়ে আন্তর দৃশ্যাবলী দেখায়

অজস্র প্রার্থনালয় অলিতে-গলিতে বিলাসবহুল তাদের সজ্জা
সবকিছুই রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে;
অপর্যাপ্ত শুধু
প্রার্থনারত দুহাতের সংখ্যা!

কেন এতো বিলাসবহুল; এতো বহুতল; এতো সংখ্যক প্রার্থনালয়?
কেন এতো শূন্যতা; এতো পদশব্দহীনতা; এতো নির্জনতার আশ্রয়?

বাংলার মানুষতো এতো ধনী নয়
দান করার মতো এতো বিপুল টাকা
কখনওই ছিলনা তাদের;
শুধু শারীরিক শ্রমই যদি দেবার মতো থাকে
কোথা থেকে আসে এতো বিপুল টাকা
রাজকীয় এসব প্রার্থনালয় স্থাপনের?

দৃষ্টি আমার খুঁজে বেড়ায়
উড়ে বেড়ায় অক্লান্ত পাখায় অবিরাম
দ্বিধান্বিত হয়ে কাঁপে থরথর, পাওয়া
উৎসে রয়েছে খুব কমই সততার শ্রম
সিংহভাগে কালোটাকার নাম!

ওদের চেনে দৃষ্টি আমার; চেনে পলকহীন
এবং পলকফেলা প্রতিটি চোখ
ওরা ছড়িয়ে আছে অসীম চোরাবালি
গ্রাস করছে ছোট্ট সবুজ পোকা,
হলুদ ফুলের গুচ্ছ; সতেজ ভাঙা ডাল
ছায়াঘেরা বাগান, কর্মব্যাস্ত শহর
সম্ভাবনাময় দেশ, আকাঙ্ক্ষিত বাংলার মহাকাল!

ওরা বর্ণান্ধ বলে ওদের কালোটাকাকে
সাদা করতে চায় প্রার্থনালয়ে ঢেলে
ওরা জন্মান্ধ বলে ওদের কালোটাকায়
নির্জীব রংধনু বসায় প্রার্থনালয়ের দেয়ালে!

অজস্র প্রার্থনালয় অলিতে-গলিতে
এ তো নয় আমাদের অপরাধবোধের প্রকাশ
অসংখ্য বিলাসবহুল প্রার্থনালয় গলিপথে-রাজপথে
এ তো শুধুই স্বার্থবাজ কালোটাকা উপার্জনকারীদের বিকাশ!

ছুঁড়ে দেয়া দৃষ্টি আমার পিপাসার্ত, বন্য
ফিরে আসা সাঁঝের আগেই কম্পিত, সন্ত্রস্ত
আড়চোখে তাকায় আমার পিতামহের হাতে গড়া
অজপাড়াগাঁয়ের জীর্ণ প্রার্থনালয়ের দিকে;
প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়, ইতস্তত এগিয়ে যায়
থমকে যায় সুললিত পবিত্র কোরাসে
চমকে যায় অগণিত প্রার্থনারত
চোখের জলে ভেজা হাতের জোড়া দেখে

আলপথে খুব কমই রয়েছে দামি জুতার ছাপ
এখানে এখনও কম – লালাঝরা লোভাতুর জিভ
এখানে এখনও কম – কালোটাকার পাপ!..’’

October 04, 2012

..‘কথোপকথন এবং’..

..‘কথোপকথন এবং’..

“..: হ্যালো
: কেমন আছেন?
: আগের মতোই।
: আগে কেমন ছিলেন?
: এখন যেমন।
: এখন কেমন?
: আগের মতোই।
: এই উত্তরগুলো কি কখনই বদলাবে না?
: বদলাচ্ছে ঠিকই, শুধু তুমি বুঝতে পারছ না।
: শুরু হয়ে গেল আধ্যাত্মিকতা!
: ঠিক আছে, থামিয়ে দিলাম।
কেমন আছে মা, বাবা আর তোমার ছোট্ট বাগান?
: ভালো।
: কেমন আছে সে, শুনেই এসেছি শুধু কখনও দেখিনি যাকে?
: ভালো।
: শুধু ভালো নাকি বেশ ভালো?
: বেশ ভালো।
: কি করছে সে এখন?
: একটি প্রাইভেট ফার্মে আছে।
: তো, কবে নিচ্ছ সামাজিক বন্ধনের চুক্তি সনদপত্র দুই জোড়া হাতে?
: শীঘ্রই।
: তুমি কি আমায় নিমন্ত্রন জানাবে, তোমার বিয়েতে?
: আমি আপনাকে অসংখ্যবার বলেছি আমি বিয়ে করবো পালিয়ে;
সুতরাং নিমন্ত্রন পাবেন না।
: আমি যতদূর জানি তুমি ভীষণ সামাজিক।
: তো?
: তো মানে তোমাকে দিয়ে ওটা কখনই হবে না।
: কেন?
: তুমি চাও ‘বিয়ে’, যা আমাদের সমাজে ‘বৈধ সামাজিক অনুমোদন –
জোড়া বেঁধে থাকার; একই ছাদের নিচে’।
: সবাই তাই চায়।
: সবাই তাই চায়? কতজনের ভেতরে প্রবেশ করেছ তুমি?
: কি আশ্চর্য! প্রবেশ করতে হবে কেন? আমি তাদের মুখে শুনেছি।
: মানুষ বলে এক; চায় আর এক।
: যেমন?
: যেমন – কখনও কি তুমি ভেবে দেখেছ, যদি সাধ্য থাকতো
কতবার আমাদের মায়েরা সংসার ছেড়ে পালাতো?
: পালিয়ে তারা কোথায় যাবে?
: এইতো বুঝতে পেরেছ! যাবার জায়গা নেই বলেইতো
বাংলার নারীদের চোখ এতোটা অশ্রুসিক্ত।
: বাদ দেন এসব। ভালো লাগছে না শুনতে।
আচ্ছা, ধরুন – আমার বিয়ে, কি পাব উপহার আপনার পক্ষ থেকে?
: ১৫০ টা দীপ্ত জোনাকি।
: মিথ্যা।
: একটা দুই পা ওয়ালা খাট।
: ডাহা মিথ্যা।
একটা অষ্টমী চাঁদের ফটোকপি।
: আবারো মিথ্যা।
: এগুলো যে মিথ্যা তা তুমি বুঝলে কিভাবে?
: বুঝি। কল্পনা নেই আপনার বাহিরের কথায়
যেমনটা থাকে ভেতরের কথাতে।
: হুমম। আচ্ছা, যেদিন তোমার বিয়ে সেদিন নিশ্চয়ই তুমি অনেক সাজুগুজু করবে?
: অবশ্যই।
: সেদিন নিশ্চয়ই অনেক মানুষ আসবে?
: অবশ্যই।
: তুমি নিশ্চয়ই অনেক সুখী থাকবে?
: অবশ্যই।
: বাবা-মা নিশ্চয়ই অনেক আনন্দিত থাকবে?
: অবশ্যই।
: তুমি কি জানো, তখন হয়তো একজন অচেনা লোক এসে তোমার নাম খোঁজ করবে?
: কেন?
: কারন – তোমাকে একটি পার্সেল নিতে হবে।
: কিসের পার্সেল?
: তোমার বাবা হয়তো লোকটিকে বিদায় করে দিতে চাইবে।
: তারপর?
: তারপর কেউ একজন তোমাকে এই পার্সেলের কথা জানাবে।
: তারপর?
: তারপর তুমি লোকটিকে কাছে ডাকবে।
: তারপর?
: তারপর লোকটি তোমাকে পার্সেল গ্রহনের রসিদে সিগনেচার করতে বলবে।
: তারপর?
: তারপর তুমি পার্সেলটি দেখতে চাইবে।
: তারপর?
: লোকটি তোমাকে অডিটোরিয়ামের বাইরে যেতে বলবে।
: (নীরবতা)
: তোমার বাবা-মা তোমাকে মানা করবে।
: (নীরবতা)
: অডিটোরিয়াম ভর্তি লোকজন অবাক হয়ে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকবে।
: (নীরবতা)
: তবুও তুমি বাইরে বের হয়ে আসবে এবং দেখবে –
: কি?
: একটি বিশাল ট্রাকের উপর শেকড়শুদ্ধ একটি বিশাল কৃষ্ণচূড়া গাছ!
উষ্ণ রক্তে ধোওয়া লাল লাল অজস্র ফুলে
ছেয়ে আছে তরুণ একটি শেকড়শুদ্ধ বিশাল কৃষ্ণচূড়া গাছ!
: (নীরবতা)
: হয়তো তখন তোমার হবু বর তোমাকে ফিরিয়ে নিতে আসবে।
: (নীরবতা)
: হয়তো অভিমানের অভিনয় করতে গিয়েও
তোমার জলভরা দু চোখ দেখে থামবে।
: (নীরবতা)
: হয়তো তুমি,
তুমি হয়তো দু হাতে মুখ ঢাকবে।
: আপনি কি চান, বাকি জীবনও কাটুক আমার শুধুই কেঁদে কেঁদে?
: নাতো!
: আমি চাই উঠুক বেড়ে
নিঃসঙ্গ একটি কৃষ্ণচূড়া –
বৃষ্টি নয়;
পান করে শুধু
তোমার অশ্রুধারা !
: (সম্পূর্ণ নীরবতা)..’’

September 11, 2012

..‘এলোমেলো ১ - ৫’..

..‘এলোমেলো ১ - ৫’..

..‘এলোমেলো-১’..

“..যতদিন তুমি গোসল শেষে
শুকাবে চুল খুলে ;
ততদিন হবো খোলা জানালা -
মানব জনম ভুলে !..’’

..‘এলোমেলো-২’..

“..ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাই বৃষ্টির ফোঁটা
যেন ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাই তারে ;
অষ্ট প্রহর অশ্রুতে ভিজে
ছুঁয়ে যায় যে আমারে !..’’

..‘এলোমেলো-৩’..

“..আসমুদ্রহিমাচল দেখে
ভীষণ তৃপ্ত আমি ;
কাঁদছে শুধু আমার দু’চোখ
তারা তোমাকে দেখেনি !..’’

..‘এলোমেলো-৪’..

“..ভালোবেসে প্রথম যার দু’ঠোঁটে
রেখেছিলাম ঠোঁট ;
আমার ছন্দে লেখা কবিতাগুলো
তার জন্যই হোক !..’’

..‘এলোমেলো-৫’..

“..বকুল ঝরায় বৃষ্টি, বৃষ্টির সুঘ্রাণে
মানুষেরা ফিরে পায় কবেকার হারানো ঠিকানা,
আমাদের গেছে নির্বিকার মেঘলাদিন, চিহ্নহীন –
তুমি তা জানো, আমারও তা জানা !..’’

August 31, 2012

..‘এলোমেলো ১ - ৫’..

..‘এলোমেলো ১ - ৫’..

..‘এলোমেলো-১’..

“..জানতে চেওনা রাতের শেষে
ঐ তারাগুলো কোথায় যায় !
আলো ছড়াতে, ভিড় করে সব
তোমারি চোখের নীলিমায় !..’’

..‘এলোমেলো-২’..

“..আমি নই, আমার স্মৃতি
এখন তোর কাছে প্রিয় ;
দু’ঠোঁট নয়, তোর দু’চোখ
তাই বুঝি এতো আদ্র !..’’

..‘এলোমেলো-৩’..

“..জল কুড়াবি সই ?
আজ আকাশের বুক চিরে জল
পড়ছে বেয়ে ঐ ;
এ জলে হবে না ?
খুলে দেবো দু’চোখের আগল ?
তোর আঁজলায় কুলাবে না !..’’

..‘এলোমেলো-৪’..

“..ওষ্ঠ রেখে অধরে, বুকে রাখো হাত
কাঁপন কি টের পাও ?
আমি অন্তর্লীন তোমাতেই – তুমি চাও বা না চাও ;
দু’বাহু আমার ছড়ানোই আছে
গেঁথে নিও বুকেতে আমায় – যদি সময় পাও !..’’

..‘এলোমেলো-৫’..

“..আজ থেকে দশ বছর পর
কে থাকবে কোথায় আর
কার সাথে বাঁধবি ঘর ?
আজ তাই এই এখন
ভালোবেসে ফেল, কিছু না ভেবেই
পাশে আছে সে যখন !..’’

August 26, 2012

“..কেন ডাকিনি তোমাকে বিশেষ কোন নামে..”

“..কেন ডাকিনি তোমাকে বিশেষ কোন নামে..”

“..কখনও ডাকিনি তোমাকে বিশেষ কোন নামে
না কখনও তোমার নামকে সংক্ষিপ্ত করে,
না কখনও প্রচলিত প্রেমময় শব্দগুচ্ছে ;

শুনেছি অগণিত ফুলের, পাখির, প্রত্যঙ্গের নাম
যেগুলো দিয়ে ডাকা হয় প্রেয়সীদের, আকাংখিতাদের
সে নাম শুনে তারা পুচ্ছ মেলে ধরে
বর্ণিল ময়ূরের মতো স্নিগ্ধতা ছড়ায়,
পালক ফুলিয়ে রাজসিকভাবে ঘুরে ঘুরে
পায়রার মতো আবেশে জড়ায়,
মুহূর্তের মধ্যে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে
চঞ্চল চড়ুইয়ের মতো হৃদস্পন্দন বাড়ায়

প্রায় সময়ই তোমার কণ্ঠে ঝরে পড়ে অপ্রাপ্তি
যখন তোমার কোন বন্ধু বিশেষ নামে ডাকে তার প্রিয়কে ;
তোমার ভেতরটা কি তখন খুব বেশি ফুঁপিয়ে উঠে ?

আমার এই ছোট্ট মাতৃভূমিতে ৩৪টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে
এখানে আরও আছে ৬১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
এগুলোর কোনটিতেই এমন কোন শব্দগুচ্ছ শেখানো হয়না
যা দিয়ে আমি তোমার সবটুকুকে ডাকতে পারি
যা দিয়ে আমি তোমার ভেতর – বাহিরকে সাজাতে পারি
যা দিয়ে আমি আমাতে অন্তর্লীন তোমাকে
নিখুঁতভাবে প্রকাশ করতে পারি
ভালোবাসার শব্দগুচ্ছ শেখানো হয়না বলেই
এখানে আমরা প্রকৃত প্রেমিক হয়ে উঠতে পারিনা
আর প্রকৃত প্রেম নেই বলেই এখানে
মানুষ এবং পশুতে এতো বেশি পার্থক্যহীনতা !

মিথ্যে বলা হবে যদি তোমায় একটি পাখির নামে ডাকি ;
তোমার কণ্ঠের মতো কোন পাখির গান আমি আজও শুনিনি
অন্যায় করা হবে যদি তোমায় একটি ফুলের নামে ডাকি ;
তোমার স্পর্শের মতো পবিত্রতা কোন ফুলে আমি এখনও পাইনি
প্রবঞ্চনা করা হবে যদি তোমায় একটি প্রত্যঙ্গের নামে ডাকি ;
তোমার অস্তিত্বের মতো এতোটা প্রয়োজনীয়তা –
কোন প্রত্যঙ্গের প্রতি খুব কমই অনুভব করেছি আমি !

একটু খেয়াল করলেই দেখতে পারবে – স্বার্থপর মিথ্যাচারীতা
প্রচলিত প্রেমময় শব্দগুচ্ছে
একটু চাইলেই বুঝতে পারবে – নিরন্তর সীমাবদ্ধতা
লোক দেখানো এসব সম্বোধনে

আমার প্রেম দুর্বোধ্য
কিন্তু কপট নয় ;
আমার আকাঙ্ক্ষা অতলান্তিক
কিন্তু মুখোশে জড়ানো নয় ;

আমাদের এই ছোট্ট শহরে
সবাই ডুবে আছে প্রতিযোগিতায়
ভালোবেসে ভালোবাসার মানুষটিকে
ডাকার মতো নাম অনুপস্থিত
এখানকার বইয়ের পাতায় –
অর্জিত জ্ঞানে বিপুল অর্থহীনতা
এখানকার প্রিয়-প্রিয়াদের
শব্দ-ছন্দ-উপমায় !

তবু যদি কখনও জানতে চাও হয়ে অভিমানী
কেন ডাকিনি তোমাকে বিশেষ কোন নামে ;
বলবো শুধু – ডেকেছি আমি ঠিকই
বোঝনিতো তুমি এবং এভাবেই যাবো ডেকে
সম্বোধনহীন সম্বোধনে !..”

August 10, 2012

..‘তোমাকে চুমু খেতে আমার দারুণ অনীহা আজকাল’..

..‘তোমাকে চুমু খেতে আমার দারুণ অনীহা আজকাল’..

“..তোমাকে চুমু খেতে আমার দারুণ অনীহা আজকাল
দারুণ অনীহা আজকাল তোমাকে চুমু খেতে
তোমাকে চুমু খাওয়ার পর পরই আমার কণ্ঠনালীতে
জন্ম নেয় এক বিমূর্ত ছাঁকনি, যেখানে আটকে যায়
মিথ্যে স্তাবকতা, তৈলাক্ত তোষামোদ, দ্যার্থকতা
বের হয়ে আসা আমার আন্তর নিটোল গোলাপ শব্দগুচ্ছ
ধারালো ছুরির মতো বিকট শব্দে ফোটাতে থাকে
চারপাশে খুব উঁচুতে উড়তে থাকা রঙিন বেলুন অগণিত
বিদ্ধ করতে থাকে, টুকরো টুকরো করতে থাকে
বিষাক্ত লালায় সিক্ত, ক্ষুধার্ত কালচে হৃদপিণ্ড অজস্র
আমার স্নিগ্ধ, কোমল, সুবাসিত শব্দগুচ্ছ ভেঙ্গে দেয়
তাদের অহমিকার ইমারত সুদৃশ্য;
ওদের চোখে ঝরা ফুল হই আমি
আমার উচ্চারিত শব্দেরা হয় খুনি !

দারুণ অনীহা আমার আজকাল তোমার চোখে চোখ রাখতে
তোমার চোখে চোখ রাখার পর পরই আমার দৃষ্টিতে
জন্ম নেয় এক অদ্ভুত ফ্রেম, যেখানে স্থান পায় শুধু
শিল্পিত শুভ্র, স্বাধীন সুন্দর, আধুনিকতা
প্রসারিত আমার পিপাসার্ত চোখের ফ্রেম যখনই
মেলে ধরি চারপাশে, একে একে অদৃশ্য হতে থাকে
সমাজের এবং জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ
অজস্র প্রার্থনালয়, শিক্ষালয়ের শরীরে বিশাল শূন্যতা
ঘুরে বেড়ানো অসংখ্য তরুণ-তরুণীর প্রত্যঙ্গহীনতা
সিংহাসনগুলোতে বসে থাকা দেবতাদের স্কন্ধের উপর ফাঁপা
পুরো ফ্রেম জুড়ে শূন্যতা, নৈব্যক্তিকতা
আমার দু’চোখে গেঁথে থাকে ভয়ংকর বস্তুহীনতা !

দারুণ অনীহা আমার আজকাল তোমায় জড়িয়ে ধরতে
তোমাকে জড়িয়ে ধরার পর পরই আমার শরীরে, মননে
জন্ম নেয় এক বৈপ্লবিক ধর্ম, যা ধারণ করতে বলে
সূক্ষ্ম মানবতা, কাঙ্ক্ষিত সাম্যতা, ভালোবাসা
বোধের দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হয়ে শ্রবণে আমার
আছড়ে পড়ে চিৎকার শোষিতের, অত্যাচারিতের
হোঁচট খেয়ে উল্টানো নখ নিয়ে থমকে দাঁড়ায়
রক্তাক্ত আমার দু’পা সাজানো সাইনবোর্ডে – ভুল পথের
আমার হাত থেকে হঠাৎ পড়ে যায়, ছিঁড়ে যায়
সুদৃশ্য মলাটে বাঁধা বানানো ইতিহাসের বই
রক্তবমি করে উগড়ে দেয় পাকস্থলী আমার
লোভের মশলায় মাখানো বিষাক্ত খাবার
ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠে শরীর আমার হারিয়ে উষ্ণতা
আগুন-চুলার মাঝে থেকেও শীতার্ত
ফিরে ফিরে করে আবৃত্তি – ‘ভালোবাসা, মানবতা’ !

আপাদমস্তক প্রেমিক আমি তাই মিথ্যে বলবো না
এ সমাজেই আমার বসবাস, ছেড়ে যেতে পারবো না
জলে ভরা মেঘ না-ও যদি পাই
ভালোবেসে জন্ম দেবো শীতল দখিন হাওয়া ;

তাই তোমাকে ভালবাসতে আজকাল, সত্যি বলছি –
আমার দারুণ অনীহা !..’’

August 03, 2012

..‘এলোমেলো ১ - ৫’..

..‘এলোমেলো ১ - ৫’..

..‘এলোমেলো-১’..

“.. এই যে দেখো আজ তোমায় ভুলে
সারাটা দিন কাটিয়েছি ;
না বলা কথা তারা বানিয়ে
আকাশের গায়ে ছড়িয়েছি !..’’

..‘এলোমেলো-২’..

“..আমার কাছে কেউ এসো না
এলে কেবল দুঃখ পাবে ;
দু’চোখ ভরা স্বপ্ন বেচে
বিনিময়ে শুধু অশ্রু পাবে !..’’

..‘এলোমেলো-৩’..

“..সেহরিতে আমার ঘুম ভাঙ্গাতে
করছো কেন কষ্ট ?
চোখের পাতায় তোমার ঠোঁটের ছোঁয়া –
এটুকুই তো যথেষ্ট !..’’

..‘এলোমেলো-৪’..

“..হঠাৎ কখনও মাঝরাতে
ঘুম ভেঙ্গে গেলে ;
বুঝে নিও তুমি, পালিয়েছি আমি
চুমু দিয়ে তোমার গালে !..’’

..‘এলোমেলো-৫’..

“..আমার হাতের আংটি দু’টি
শুধুই আংটি নয় ;
ধরে রাখা তোমার অনামিকা তারা –
শুধুই আংটি নয় !..’’

July 31, 2012

“..বেশ তো যাচ্ছিলো কেটে সময় আমার..”

“..বেশ তো যাচ্ছিলো কেটে সময় আমার..”

“..বেশ তো যাচ্ছিলো কেটে সময় আমার
মাছরাঙার মতো টুপ করে তুলে নিয়ে
শিশির তোমার ঠোঁটের উড়ে উড়ে
চুরি করা বাতাসের মতো হঠাৎ পর্দা সরিয়ে
ছুঁয়ে আসা তোমার টোল পড়া গাল খুব ভোরে
অন্তর্বাসের মতো দু’হাত আমার সর্বস্ব হয়ে
নির্লজ্জ তবু আকাঙ্ক্ষিত তোমার বুক জড়িয়ে
এলানো শরীরের মতো পরিশ্রমের শেষে
তোমার ভেতরে প্রবেশ গভীর আবেশে

বেশ তো যাচ্ছিলো কেটে সময় আমার
কেন তুমি রাখলে তোমার দু’ঠোঁট
সেদিন আমার ঘুম ভাঙা চোখে
কেন দিলে অজস্র স্বপ্ন এ দু’চোখে গেঁথে ?

এখন আমার দু’চোখে শুধু স্বপ্ন
দু’চোখে শুধু স্বপ্ন এখন আমার

ভীষণ এলোমেলো, দারুণ থরোথরো
দু’চোখ নিয়ে আমি কাঁপছি
সেদিন থেকে নিয়ে আজ অবধি
আমি শুধু স্বপ্ন দেখছি

আর ভাবছি –

যে-ই আমি ঢেলে দেই তোমার চোখে
অশ্রুসিক্ত, বিনিদ্র রাত অনন্য
সে-ই আমার চোখে কি করে পারলে
গেঁথে দিতে গুচ্ছ গুচ্ছ অবারিত স্বপ্ন ?..”

July 27, 2012

“..উত্তর..”


“..উত্তর..

“..বলতে পেরেছি যা, হয়েছে সেগুলো কথা
বলতে যা পারিনি হয়েছে তা কবিতা ;
আর যা চেয়েছি রাখতে মনে
সযতনে তুলে
সংগোপনে গান হয়েছে কবিতার শরীর ছুঁয়ে
চাপা গুনগুনে !
আর তো কিছু নেই, কি দেবো তোমায় ?
আছে শুধু পিপাসা, অন্তহীন নিনীষা
দৃষ্টি, বোধ, শ্রবণের আলো-ছায়া জুড়ে
একটা ছোট্ট তুমি-র আসা ঘুরে - ফিরে !..

July 17, 2012

“..আমি খুব সম্ভবত মারা যাবো..”

“..আমি খুব সম্ভবত মারা যাবো..”

“..আমি সম্ভবত নির্বাসিত হবো সমাজ থেকে খুব দ্রুত
আমি সম্ভবত বিদায় নেবো হবার আগে জীবন্মৃত !

বন্ধুরা মিলে যখন আড্ডা দিই বিশ্ববিদ্যালয়ে অবসরে
সামনে দিয়ে যাওয়া অপ্সরীদের ঢেউ খেলানো বুক হয়তো
পড়ে কারও চোখে অথবা হয়তো নিটোল কোমর ক্রমহ্রাসমান
মুহূর্তের মধ্যে তারা জন্ম দেয় আবেগি উপমা, অতুলনীয় শব্দগুচ্ছ
কিন্তু আমি তাকিয়ে থাকি নিস্পলক তার জুতোজোড়ার
ভেতরে থাকা স্নিগ্ধ পদ্মফুলের দিকে, তার নাকের ডগায়
সূর্যালোকে দীপ্ত এক বিন্দু মুক্তোর দিকে, তার এলো চুলে
চমকানো অবিন্যাস্ত চন্দ্র সিঁড়ির দিকে,
আমি দু’চোখ ভরে দেখি তৃপ্ত পথের ধুলিকনা
দেখি রুক্ষ সূর্যালোক আদ্র
দেখি এলোমেলো বাতাস ভীষণ ভাবে মুগ্ধ
আমি দু’চোখ ভরে দেখি সৌন্দর্য – সৃষ্টি ও স্রষ্টায় !

আমি খুব সম্ভবত অন্ধ হবো –
অমল কোন সৌন্দর্য দেখতে না পারার ব্যর্থতায় !

সবাই যখন খুব প্রশংসা করে কোন গানের
উচ্ছ্বসিত হয়ে বার বার বলে তার সঙ্গীতায়োজনের কথা,
তার গায়ক অথবা গায়িকার কথা, তার দৃশ্যায়নের কথা
আমি কান পেতে শুনি একেকটি বাদ্যযন্ত্রের কথা
শুনি গীতিকারের প্লাবিত বুকের ব্যথা, শুনি প্রতিধ্বনি,
হাহাকার – তৃপ্তি সুরকারের, খুঁজি কতোটা বিরহী কোকিলের মতো
কতোটা আশাবাদি চাতকের মতো - গায়ক অথবা গায়িকা
আমি কান পেতে শুনি মূর্ছনা – আকাঙ্ক্ষিত চঞ্চলতায় !

আমি খুব সম্ভবত বধির হবো –
নৈব্যক্তিক কোন কবিতা শুনতে না পারার অস্থিরতায় !

পরিচিতরা যখন খুব গর্ব বোধ করে অনর্গল
বলতে পেরে অর্থহীন কথা, মিথ্যে স্তাবকতা
স্বল্প জ্ঞান আর হাতে গোনা কিছু শব্দ-বাক্য
সম্বল যাদের আজকাল, গলার রগ ফুলিয়ে
তারা যখন ছায়া খেয়ে বেঁচে রয় হলুদ চারার মতো
এবং নিজেদের ভাবে অদ্বিতীয়, দুর্লভ বাগ্মি
আমি উইপোকার মতো নিঃশেষ করি ইতিহাস
কেঁচোর মতো খুঁড়ে যাই নবাগত শব্দ-বাক্যের ভূমি
কাকের মতো ঠুকরে বের করি মুখোশের ভেতরে যার বসবাস
আমি কেঁপে উঠা কণ্ঠে নির্লিপ্তভাবে বলি
বক্তার সফলতা আলোকিত – নির্মোহতায় !

আমি খুব সম্ভবত বোবা হবো –
ধ্রব কোন সত্য বলতে না পারার অক্ষমতায় !

আমার ব্যর্থতা, অস্থিরতা, অক্ষমতা
আজকাল আমাকে খুব ভাবায়;

আমি মনে হয় না মারা যাবো
অন্যেরা যেভাবে মারা যায়

আমি খুব সম্ভবত মারা যাবো
প্রিয় তোমাদের অবহেলায় !..”

July 02, 2012

“..অপেক্ষায় আছি এবং থাকবো..”

“..অপেক্ষায় আছি এবং থাকবো..”

“..শেষ কবে তোমার কলেজের সামনে
রিকশা পাবার অপেক্ষাতে হেঁটে যাবার সময়
ব্যস্ত বিকেলকেও মনে হয়েছে সেই স্নিগ্ধ সন্ধ্যা
যেদিন তুমি আর আমি পাশাপাশি হেঁটেছিলাম
কিছুটা দূরত্ব রেখে এবং বার বার অবাক হচ্ছিলাম
যখন কিছুক্ষন পর পর আমাদের মাঝখানে
উপর থেকে ঝরে পড়ছিল কাঠগোলাপ থোকায় থোকায় ?

বৃষ্টির শব্দ শুনেই শেষ কবে ছুটে গিয়েছ
মুঠোফোনের কাছে; অস্থির আঙুলে লিখেছ ক্ষুদেবার্তা –
‘বৃষ্টির এক ফোঁটাও যেন শরীরে না পড়ে, জ্বর আসতে পারে!’
এবং পরক্ষনেই মুছে ফেলে ছুঁড়ে দিয়েছ বিছানায়
সেই ফোন, যার মাউথ স্পিকারে অজস্রবার
ঐ নরম দু’ঠোঁট রেখে পাঠিয়েছ আমায়
আকাঙ্ক্ষিত চুম্বন ইথারে ইথারে ?

শেষ কবে মনে করে আমাদের প্রথম
পাশাপাশি বসার কথা তোমার গানের অনুষ্ঠানে
শিক্ষিকা, বড়ো আপু, বান্ধবীদের দুই সাড়ি ডিঙিয়ে
বাবা-মায়ের পাহারাদার দুই জোড়া চোখ এড়িয়ে
ঠিক আটচল্লিশ মিনিট সাহস সঞ্চয় করে
ছুঁয়ে দিয়েছিলাম বলে আমার তর্জনী
এখনও বিবসনা তোমার অনামিকা;
এবং সেখানে থাকা অদৃশ্য প্রথম স্পর্শের কথা
মনে করে উঠেছ কেঁপে গোপনে গোপনে ?

শেষ কবে আনমনে গাইতে গিয়ে নজরুলের গান
প্রথম দু’লাইন শেষ করে অপেক্ষায় ছিলে
পরের দু’লাইন গাইবো আমি হাল্কা চাপাস্বরে ?

শেষ কবে আমার দেয়া কাজল চোখে দিয়ে
নিঃশ্বাসের সাথে অভিমানকে শুধু সঙ্গী করে
কালো জলে ধুয়ে, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে
যখনই আমার স্মৃতিরা অনুরোধ করেছে
তোমার মনের জানালা খুলে দিতে
নিজেকে দিয়েছ উত্তর বিশতম ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে
দ্বিতীয় স্বরবর্ণ একসাথে বসিয়ে;
অনুচ্চ স্বরে, দৃষ্টি সরিয়ে ?

আমি অপেক্ষায় আছি গুনগুন – তোমার ‘শেষ’ শুনবো বলে;
আমি অপেক্ষায় থাকবো গুনগুন – আবার ‘শুরু’ দেখবো বলে !..”

June 30, 2012

“..ফিরে এসো গুনগুন..”

“..ফিরে এসো গুনগুন..”

“..আগে ভাবতাম –
পারি, আমি অনেক কিছুই পারি

চোখ বন্ধ করে নিমেষেই কল্পনা করতে পারি
বাংলার মুখায়ব, নৈসর্গিক গ্রামীণ দৃশ্য
ফসল কেটে বাড়ি ফেরার পথে গোধূলির রুপালি
আলোয় উদ্ভাসিত কৃষকের মাংসল পেশী
কৃষাণীর কোমরে গোঁজা শত কুঞ্চিত শাড়ির আঁচল
মাটির চুলার কালো ধোঁয়া ছাপিয়ে মুখে লাজ-চাপা হাসি
ঘাড় বাঁকিয়ে বাক-বাকুম ডেকে ওঠা কবুতরের ফুলে ওঠা পালক
সবাই ঘুমিয়ে পড়া মাঝ রাতের স্তব্ধ পুকুরে আন্দোলিত চাঁদের আলোক !

অনায়াসে কণ্ঠে তুলে নিতে পারি
রবীন্দ্রনাথের আড়াই হাজার এবং নজরুলের
চার হাজার তিন শত ছাব্বিশটি গান
আর একটু কুহু – বিবাগী কোকিলের,
একটু কর্কশতা – ধূর্ত কাকের,
একটু চঞ্চলতা – অস্থির চড়ুইয়ের,
আর একটু মাদকতা – ঝরে পড়া শুকনো পাতার !

মুঠোফোনে তার একটু ভারী প্রশ্বাস শুনেই
পারি ঝুম বৃষ্টির মতো কথার বর্ষা নামিয়ে
স্বপ্নের বড়ো বড়ো ফোঁটায় তাকে আমূল ভিজিয়ে
বুকের ঠিক মাঝখানটায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে
স্পন্দিত উষ্ণতায় শুষ্ক করতে তার ভেজা শরীর
স্পর্শিত অনুভবে ডুবে যেতে তার ভেতর – বাহির
ছন্দিত চুম্বনে সিঁদুর – রাঙা করে তুলতে তার ওষ্ঠ এবং অধর !

কিন্তু এখন দেখি
আমার সদ্য ফোঁটা হাসনাহেনায় নেই পৌরাণিক মৌতান
তার ছোটো-বড়ো-মাঝারি পাপড়িগুলোতে
লেগে আছে শুধু জোসনা
পারিনা, এখন আমি অনেক কিছুই পারিনা !

বন্ধ চোখ নিমেষেই অন্ধ হয়ে যেতে চায়
পিপাসার্ত কণ্ঠ অনায়াসে স্তব্ধ হয়ে যেতে চায়

ইচ্ছে করে – শহরের সবচেয়ে উঁচু দালানটার ছাদে
দাঁড়িয়ে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলি –
তার বুকের বাম দিকে খানিকটা নিচে
যেখানে রয়েছে ছোট্ট একটা তিল
ওখানেই-তো আমার আজন্ম বসবাস,
আমার স্নানঘর,
আমার নিদ্রা-বিলাস !

ইচ্ছে করে – গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলি -
আমি পারবোনা মেটাতে চারপাশে আমার
জমে আছে যে সকল ঋণ;

একবার, ইচ্ছে করে, একবার তার কানের কাছে
মুখ রেখে আস্তে করে বলি –

‘ফিরে এসো গুনগুন, আমি ফিরিয়ে দেবো
তোমার বিনিদ্র, অশ্রুসিক্ত
এক বছর-দুই মাস এবং চৌদ্দ দিন’ !..”

June 28, 2012

..‘এলোমেলো ১ - ৫’..

..‘এলোমেলো ১ - ৫’..

..‘এলোমেলো-১’..

“..আমার স্বপ্নে আমি ভিজি
তোমার স্বপ্নে তুমি;
এক-ই আকাশ মাথার উপর
ভিন্ন শুধু ভুমি !..’’

..‘এলোমেলো-২’..

“.. ‘আর কিছু থাকুক না থাকুক
কেন সারাক্ষণ ঐ মিউজিক প্লেয়ার-টা
থাকে তোমার গলার কাছে?’

‘মিউজিক প্লেয়ার কোথায়?
আমি তো দেখি ওটা তোমার দু’হাত –
আমার গলায় জড়িয়ে আছে’ !..’’

..‘এলোমেলো-৩’..

“..যেদিন নেবো বিদায়
পৃথিবী ছেড়ে, প্রিয় –
ঐ চোখ চুমে আসা জল দিয়ে
লাশ আমার ধুয়ে দিও !..’’

..‘এলোমেলো-৪’..

“..অতৃপ্ত এ হৃদয়টাকে ছুঁড়ে দিও
কোন এক ক্ষুধার্ত কুকুরের মুখে –
আমার মৃত্যুর পরে;
ভালোবাসায় পূর্ণ ছিল এটা
শুধু ছিল না সাহস – ভেতরে !..’’

..‘এলোমেলো-৫’..

“..শেষ বলতে কিছু নেই
বিশ্বাস হবে সেদিন;
আমার মৃতদেহের সামনে
তোমার ভেজা দু’চোখ মুছাতে
নিথর দু’ঠোঁট হঠাৎ করে
উঠবে কেঁপে যেদিন !..’’

June 22, 2012

“..অনাদ্রিতার কাছে চাওয়া..”

“..অনাদ্রিতার কাছে চাওয়া..”

“..অনাদ্রিতা,
চাচ্ছি না আমার হৃদপিণ্ডের রিক্টার স্কেলে
নয় মাত্রার কম্পন ঘটিয়ে মুঠোফোনের পর্দায়
জ্বলে উঠুক তোমার নাম;
ভেজা গোলাপের গন্ধ ছড়িয়ে বৃষ্টির মতো
নামুক আমাদের কথোপকথনঃ

‘আজ সবুজ শাড়ি পড়বো’
‘অরণ্যের মতো?’
‘না, সবুজ – তোমার কবিতার মতো!
আজ শিশু একাডেমীতে গাইবো, তুমি আসছো তো?’
‘না, সময় হবে না,’

শ্রবণেন্দ্রিয় দিয়েই দেখতে পেতাম খানিকটা সরে যাওয়া
তোমার মুখ, অনেকটা জলে ভেজা তোমার চোখ;

‘তুমি কি কাঁদছো?’
‘নাতো! চোখে কি যেন একটা পড়লো!’

চাচ্ছি না আমার সারা শরীরের লোমকূপগুলোকে
শিহরিত করে কাজলে রাঙানো প্রসারিত চোখে
অলঙ্ঘনীয় আহবান; আলতো করে ধরে রেখে আমার অনামিকা
ভাসুক আমাদের কথোপকথনঃ

‘কাল একসাথে ঘুরবো’
‘গৃহহীনদের মতো?’
‘না, একসাথে – তোমার দু’ঠোঁটের মতো!
কাল পহেলা ফাল্গুন, একসাথে রিকশায় ঘুরবো, তুমি যাবে তো?’
‘না, সময় হবে না,’

কি নির্দ্বিধায় তোমার মোমের মতো তনু
বেয়ে নামতো কাজলের গাঢ় কালো;

‘তুমি কি কাঁদছো?’
‘নাতো! চোখে কি যেন একটা পড়লো!’

চাচ্ছি না ঝড়ের মতো লণ্ডভণ্ড করে দাও শরীর আমার
অতঃপর একটু নিঃশ্বাসের খোঁজে তোমার ঠোঁটে রাখা
আমার শ্রান্ত দু’ঠোঁট কম্পিত হোক
তোমার প্রশ্বাসের ভৈরবীতে;
গুঞ্জরিত হোক আমাদের কথোপকথনঃ

‘আর একটু ধরে রাখো’
‘লতার মতো?’
‘না, ধরে রাখো – গান শেষে তোমার গুনগুনের মতো!
আর একটু ধরে রাখো নিবিড় করে, রাখবে তো?’
‘না, সময় হবে না,’

কি দ্যার্থক তোমার থরোথরো কায়া
প্রচণ্ড বাতাসে উড়ে যাওয়া টিনের চালের মতো
দ্রুত মুখ লুকাতে, টেনে নেয়া দু’হাতে;

‘তুমি কি কাঁদছো?’
‘নাতো! চোখে কি যেন একটা পড়লো!’

চাচ্ছি না মুগ্ধতা, অনুরাগ, ক্ষণিক স্পর্শ, হিমায়িত সুখ
চাচ্ছি না স্তব্ধতা, আয়োজন, উত্তাল কামনা, পরিতৃপ্ত বুক

চাচ্ছি জানাতে – আমার এখন প্রচুর সময়
চাচ্ছি জানতে – এখনও তুমি আছো পাশে আগেরই মতো

চাচ্ছি তুমি দেখো চশমার কাঁচের ওপাশে
আমার দু’চোখ আজ ঝাপসা অনেক

অনাদ্রিতা, চাচ্ছি তুমি বলো –

‘তুমি কি কাঁদছো?’

চাচ্ছি, ভীষণ চাচ্ছি, আমি শুধু বলি –

‘নাতো! চোখে কি যেন একটা পড়লো!’..”

June 15, 2012

..‘এলোমেলো ১ - ৫’..

..‘এলোমেলো ১ - ৫’..

..‘এলোমেলো-১’..

“..বাংলার মাটি ভরে গেছে
‘অমর’দের কবরে;
বাংলার চ্যানেল ভরে আছে
মগজহীনদের খবরে !..’’

..‘এলোমেলো-২’..

“..মেয়েদের ‘ছিঁচকাঁদুনে’ বলে
অপমান করে যারা;
স্বাধীন বাংলায় ভণ্ড হুজুরদের ওয়াজ
শোনেনি কখনও তারা !..’’

..‘এলোমেলো-৩’..

“..তোর পছন্দ ‘হিন্দি’,
তোর বাবার পছন্দ ‘আরবি’
তোর কাছে একটা-ই অনুরোধ
যদি কখনও বলতে চাস – ‘ভালোবাসি’
‘বাংলা’তেই তা বলবি !..’’

..‘এলোমেলো-৪’..

“..রাস্তায় উলঙ্গ পাগলী দেখে
তুমিও কি হও ততোটাই বিব্রত,
ঠিক যতোটা রাজনীতিবিদদের
দেখে আমি হই লজ্জিত ?..’’

..‘এলোমেলো-৫’..

“..অন্য পুরুষ যাতে না দেখে তোমায়
তাই বোরকায় ঢেকেছো নিজেকে;
তুমি যে দেখছো অন্য পুরুষকে
বলো, এর সমাধান কি হবে ?..’’

June 10, 2012

..‘এলোমেলো ১ - ৬’..

..‘এলোমেলো ১ - ৬’..

..‘এলোমেলো-১’..

“..ঘুমিয়ে যদি যাই কখনও
তুই ঘুমাবার আগে;
আর কিছু নয়, তোর একটি হাত
যেন আমায় জড়িয়ে রাখে !..’’

..‘এলোমেলো-২’..

“..যেই আমি ঝুম বাদলের মতো
কথার বৃষ্টি নামাই;
সেই আমি তোর ঠোঁটে রেখে ঠোঁট
সকল শব্দ হারাই !..’’

..‘এলোমেলো-৩’..

“..ছুঁয়ে যদি যাই সারাদিনও
তোর চোখ, ঠোঁট, বুক, গলা;
জানি তবু, তোকে চাই কতোটা
হবে না কখনও বলা !..’’

..‘এলোমেলো-৪’..

“..মন-ই শুধু জানে
কে আছে হৃদয়ের খুব কাছে;
তুমি ছাড়া গান শোনাবো কাকে
আমি ছাড়া ভালবাসবে কাকে !..’’

..‘এলোমেলো-৫’..

“..এ পৃথিবীর যতো প্রেমিক-প্রেমিকা
যখন ছোঁয় একে অপরের ঠোঁট
সকলের ঠোঁটে আমি ছুঁয়ে যাই তোকে
তাদের ঠোঁট-ই আমাদের ঠোঁট !..’’

..‘এলোমেলো-৬’..

“..প্রচণ্ড গরম ঘামছি ভীষণ
মুখ মুছবো কিসে ?
না পাই যদি ওড়না তোমার
বলো, তার প্রয়োজন কিসে ?..’’

May 30, 2012

..‘এলোমেলো ১ - ৬’..

..‘এলোমেলো ১ - ৬’..

..‘এলোমেলো-১’..

“..ঘুম জড়ানো কণ্ঠে কখনও
ফোন করিস না তুই;
ইচ্ছে করে সব ছুঁড়ে ফেলে
ঐ ঠোঁটেই ডুবে রই !..’’

..‘এলোমেলো-২’..

“..তোর ঐ বুকে বসত আমার
স্থায়ী নয়, জানি প্রিয়া;
বাড়িওয়ালা এলেই ছেড়ে যেতে হবে –
আমি যে ভাড়াটিয়া !..’’

..‘এলোমেলো-৩’..

“..তুমি যদি বলো তোমার জন্য
এভারেস্ট জয় করতে;
ছুটে যাবো না অন্যান্য প্রেমিকের মতো
বলবো – পারবো না,
পারবো না তোমায় ছেড়ে
এক মুহূর্ত দূরে থাকতে !..’’

..‘এলোমেলো-৪’..

“..ঐ টোল পড়া গালে
জোনাকির আলো ফেলে
তোমায় আরেকটু দেখতে চাই;
কিছুক্ষন পরেই নামবে সন্ধ্যা
তুমি এখনি বোলনা - ‘যাই’!..’’

..‘এলোমেলো-৫’..

“..যেদিন প্রথম রাখলে তুমি
আমার হাতে হাত;
সেদিন-ই প্রথম বুঝলাম
কেন আঙুলের মাঝে ফাঁক !..’’

..‘এলোমেলো-৬’..

“..তোর ঠোঁটে ঠোঁট রেখে যদি
আমার মৃত্যু হয়;
এপিটাফে লিখিস –
‘কবি সে ঠোঁটের, শব্দ – ছন্দের নয়’ !..’’

May 28, 2012

..‘এলোমেলো ১ - ৬’..

..‘এলোমেলো ১ - ৬’..

..‘এলোমেলো-১’..

“..ঘুমিয়ে গেলেও ঘুম ভাঙ্গিয়ে
ঘুম পাড়াতে যাকে;
তুমি কি জানো, তুমি নেই বলে
ঘুম নেই তার চোখে !..’’

..‘এলোমেলো-২’..

“..ভালোই যদি বাসো এ দুচোখ
কেন তাদের ঝরাও এতো?
দেখতে কি চাও এই দুচোখে
তোমার জায়গা কতো ?..’’

..‘এলোমেলো-৩’..

“..রাগ করে অভিমানী
দিন কাটালি কথা-হীন;
রাত কাটাবি কিভাবে
বুক থাকলে আমি-হীন !..’’

..‘এলোমেলো-৪’..

“..আর কখনও বোলনা তুমি
আমার বাসায় যাবে;
ঘুম হবেনা আমার,
শুধুই স্বপ্ন দেখা হবে !..’’

..‘এলোমেলো-৫’..

“..হঠাৎ করেই তপ্ত রোদে
বইলো বাতাস শীতল;
ভুল করে কি চুল থেকে তুমি
সরিয়ে ছিলে আঁচল ?..’’

..‘এলোমেলো-৬’..

“..অবশ করতে আমাকে তুই
খুঁজছিস কি প্রিয়া?
তোর কণ্ঠই তো আমার জন্য
ভোকাল এনেস্থেশিয়া !..’’

May 26, 2012

..'তিন ‘অ’ – এর সমষ্টি আমি এখন'..

..'তিন ‘অ’ – এর সমষ্টি আমি এখন'..

“..ওষ্ঠরঞ্জনীর মতো বদলে যাচ্ছে
ক্যালেন্ডারের পাতা, একটি একটি করে
চির চেনা আমার এই আমাকে
চিনছি আবার নতুন শব্দের ভিড়ে

হেঁটে গিয়েছি, ছুটে গিয়েছি
পুড়ে গিয়েছি – কেঁদে ফিরেছি
শিল্প, সত্য, সুন্দরকে একটু ছোঁব বলে
হারিয়েছি অনেক, বিলিয়েছি অনেক
অনেকবার আহত এবং নিহত হয়েছি
একটু শিল্পী, একটু ধ্রুব, একটু সুন্দর হব বলে!

সময় আজ আমার মুখে প্রদীপ তুলে ধরে;
চির চেনা আমার এই আমিকে
চিনছি আবার নতুন আলোর ভিড়ে

কোনও উৎসব, অনুষ্ঠান, একত্রীকরণ ভালো লাগে না
ভালো লাগে না সৌহার্দের রঙে আঁকা মুখোশের মাঝে থাকা
অর্থহীন, ভঙ্গুর, প্রাচীন, দ্যার্থক নিয়মগুলো মেনে চলা
এরচেয়ে বরং ভালো লাগে আমার বারান্দায় বসা
চঞ্চল, স্পন্দিত চড়ুইয়ের সাথে একা একা কথা বলা

আমি এখন খুঁজি না বুড়ো, একগুঁয়ে নীতি
খুঁজে ফিরি সমাজ – সহজ, মহাকালিক
তাদের ভাষায় তাই – আমি অসামাজিক!

ভালো লাগে না কৃত্রিম শ্রদ্ধা, শারীরিক কম্পন, নির্বাচিত শব্দ
আমার চোখে অনেক বেশি শ্রদ্ধেয় – মেথর, কুলি, শ্রমিকের দল
মিথ্যে শ্রদ্ধা, প্রশংসা, স্তাবকতার শব্দগুচ্ছ আমার ভেতরে
মরে যায়, শুকনো পাতার মতো শুধু ঝরে পড়ে
ওঁরা জানে, ওঁরা বোঝে ‘সভ্যতা’ কি
বুঝতে চেয়েছি অনেক তবু আমি বুঝিনি
সভ্যতার মিথ্যা সংজ্ঞা, মিথ্যা রুপ আমার কাছে দুর্বোধ্য
ওঁদের ভাষায় তাই – আমি অসভ্য!

তুমি সুন্দর, আর আমি পছন্দ করি সৌন্দর্য
তোমার জন্য তাই অনেক দেখে-শুনে
অনেক দাম দিয়ে একটি দুর্লভ
পরিশ্রমের সুতোয় বোনা,
দুচোখের স্বপ্নের রশিতে টানিয়ে শুকানো,
বুকের উষ্ণতায় ভাঁজ করা মসলিনের শাড়ি
হাতে তুলে দিয়ে বললাম –

‘একদিন না পড়ে এসো, দেখবো;
তুমি হবে ফোটা পদ্ম যখন আমার দুচোখ
হবে বিস্মিত ঝিল!’

তিনটি শব্দের বদলে দুটি শব্দ একত্রিত করে
তুমি বললে – আমি অশ্লীল!

এখন আমি আর খুঁজি না
জলের তলে জলের তোড়ে জলজ স্রোতে – ঢেউ
এখন আমি আমার কাছে
একটা নতুন কেউ
এখন আমি খুঁজে বেড়াই
মাছের লেজের দোলার সাথে ভাঙ্গা রুপার ঝিলিক;
তিন ‘অ’ – এর সমষ্টি আমি এখন
তাদের, ওঁদের, তোমার ভাষায় –
‘অশ্লীল’, ‘অসভ্য’ এবং ‘অসামাজিক’!..”

May 23, 2012

..‘এলোমেলো ১ - ৭’..

..‘এলোমেলো ১ - ৭’..
..‘এলোমেলো-১’..

“..
মুটিয়ে যাস আর শুকিয়ে যাস
তোকেই আমি চাই;
তোর বুকের মতো নিরাপদ আশ্রয়
আর যে কোথাও নাই !..’’

..‘
এলোমেলো-২’..

“..
ওঁরা তো শুধু তোর নাম বলে কথা করে শেষ
আমার ভেতরে তবু রয়ে যায় রেশ
ওঁদের জন্য তুই শুধু বান্ধবী
আমার জন্য তুই সারা পৃথিবী !..’’

..‘
এলোমেলো-৩’..

“..
পান করো শুধু আমাকেই তোমার দুচোখ দিয়ে
আমিও করছি একই প্রতিজ্ঞা ঐ চোখে চোখ রেখে;
তাও যদি না পারো
রাখো অধর আমার অধরে আর কিছু না ভেবে,
প্রতিজ্ঞা করছি ছোঁয়াবো না সিগারেট
কখনও আমার ঠোঁটে !..’’

..‘
এলোমেলো-৪’..

“..
বোরকায় সারা শরীর
রেখেছিস ঢেকে;
তাই বুঝি এতো কথা
খোলা দুই চোখে !..’’

..‘
এলোমেলো-৫’..

“..
বেড়াতে যাচ্ছিস দুই দিনের জন্য
সমস্যা নেই তাতে;
ভাবছি শুধু ঘুম ভাঙ্গা চোখ
খুলবো কার চুমুতে !..’’

..‘
এলোমেলো-৬’..

“..
প্রিয়া, চুপি চুপি আজকে তোমায়
একটি অপ্রিয় সত্য বলি
তুমি শিখেছ শুধু ভালোবাসা পেতে
ভালবাসতে শেখো নি !’..’’
 
..‘এলোমেলো-৭’..

“..
'ভালোই যদি বাসো এ দুচোখ
কেন তাদের ঝরাও এতো?'
 
'দেখবো বলে ঐ দুচোখে
আমার জায়গা কতো !'..’’
 

May 19, 2012

..‘এলোমেলো ১ - ৬’..

..‘এলোমেলো ১ - ৬’..

..‘এলোমেলো-১’..

“..রাত্রি এসে ঝুঁকে
নারীর মতো বুকে;
তখন আমার ঠোঁটে
না বলা কথা ফোটে !..’’

..‘এলোমেলো-২’..

“..নীরবতা ছাড়া আমার
বান্ধবী নেই কোনও;
ওঁর বুকেই লুকাবো মুখ
তুমি চলে গেলে কখনও !..’’

..‘এলোমেলো-৩’..

“..তোমার মাঝে আর নেই আমি
বুঝে গেছি তখনই;
কাজল-ছাড়া দুচোখ নিয়ে
এসে দাঁড়ালে যখনই !..’’

..‘এলোমেলো-৪’..

“..মিষ্টি খাই না আমি
শুনে কষ্ট পেয়েছো তুমি;
বোকা মেয়ে,
কিভাবে বোঝাই তোমাকে
এ পৃথিবীর যত তীব্রতম মিষ্টি
আমি পেয়েছি তোমার ঠোঁটে !..’’

..‘এলোমেলো-৫’..

“..অরণ্য, পাহাড়, সমুদ্র-সৈকত
দেখে এসে বুঝলাম – সৌন্দর্য কি;
এলোমেলো হলো সব, চশমা খুলে
তুমি চোখ তুলে তাকালে যখনই !..’’

..‘এলোমেলো-৬’..

“..আমার একটি অনুরোধ শোন –
বৃষ্টিতে ভিজো না তুমি আর কোনদিনও;
না যেন ছোঁয়, তোমার সারা শরীর
আমার মতো করে কেউ, কখনও !..’’

May 16, 2012

..'তোমার আঠারোতম জন্মদিন চলে গেল গতমাসে'..

..'তোমার আঠারোতম জন্মদিন চলে গেল গতমাসে'..

“..তোমার আঠারোতম জন্মদিন চলে গেল গতমাসে
তোমার পছন্দমতন একটি উপহার দেবো বলে
ঘুরে বেড়িয়েছি আমি অনেকটা পথ
খুঁজে পাইনি কিছু, আমাদের এ শহরে
অনেক কিছুই বদলে গেছে !

তুমি ‘নিশ্চয়তা’ পছন্দ করো –
তাই তোমার জন্য ‘নিশ্চয়তা’ খুঁজতে গিয়ে
দেখলাম, চাঁদমামার মতো পরিচিত
ঐ দুই মহিলার লালরঙা পেটিকোট থেকে
সোনালীরঙা তাদের নেমপ্লেট ঠিকই আছে
বাদ-বাকি অন্য সবকিছুর নিশ্চয়তা বদলে গেছে !

তুমি ‘প্রজ্ঞা’ পছন্দ করো –
তাই তোমার জন্য ‘প্রজ্ঞা’ খুঁজতে গিয়ে
দেখলাম, দুর্বল ব্রেকওয়ালা গাড়িতে যেমন
হর্নের আওয়াজ বেশি থাকে; ঠিক তেমনি
শূন্য মস্তিষ্ক কাঁধে নিয়ে মুখে হাইড্রলিক হর্ন
বাজানোদের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বেড়ে গেছে;
নামের আগে-পরে ডিগ্রীর ধারাবাহিকতা ঠিকই আছে
কিন্তু ‘প্রজ্ঞা’র সংজ্ঞা বদলে গেছে !

তুমি ‘সৌন্দর্য’ পছন্দ করো –
তাই তোমার জন্য ‘সৌন্দর্য’ খুঁজতে গিয়ে
আমি ছুটে গিয়েছি উন্মুক্ত দুচোখ নিয়ে
সৌন্দর্যের সর্বকালীন ধারক তরুণ প্রজন্মের কাছে
দুচোখে গেঁথে নিয়ে আসতে চেয়েছি
স্নাত, স্বতন্ত্র, স্বতঃস্ফূর্ত, স্বোপার্জিত সৌন্দর্য;
আমার দুচোখে প্রতিফলিত হয়েছে
তাদের ঋণগ্রস্ত সুন্দর, ঋণাত্মক সৌন্দর্যবোধ
এবং পরশ্রীকাতর, অন্তঃসারহীন মুগ্ধতা
সৌন্দর্যের প্রতি পিপাসা ঠিকই আছে
কিন্তু সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ বদলে গেছে !

তুমি ‘সত্য’ পছন্দ করো –
তাই তোমার জন্য ‘সত্য’ খুঁজতে গিয়ে
দেখলাম, সত্যের নামে জায়গায় জায়গায় বিক্রি হচ্ছে
ওড়না-বিহীন প্রায় উন্মুক্ত বেঢপ বক্ষযুগল,
চর্বিসর্বস্ব থলথলে উরু, কোমর;
কারুকার্যমণ্ডিত বিশাল জাঁকালো টুপি, সুরমা, দাড়ি
পুঁজে ভরা, বমিতে মোড়া অজস্র মিথ্যে আশ্বাস
অণ্ডকোষে প্রচণ্ড লাথি খেয়ে
‘সত্য’ এখানে ঠিকই রাস্তায় পড়ে আছে
কিন্তু সত্যের সত্ত্বা বদলে গেছে !

তোমার ‘নিশ্চয়তা’ খুঁজে না পেয়ে
আমার বোধ আজ নির্জীব, পক্ষাঘাতগ্রস্থ;
তোমার ‘প্রজ্ঞা’ খুঁজে না পেয়ে
আমার মননে আজ দারুণ রক্তক্ষরণ;
তোমার ‘সৌন্দর্য’ খুঁজে না পেয়ে
আমার দুচোখ আজ জমাট দৃষ্টিহীন;
তোমার ‘সত্য’ খুঁজে না পেয়ে
আমার কণ্ঠ আজ ভয়ানক শব্দহীন !

তোমার আঠারোতম জন্মদিন চলে গেল গতমাসে
তোমার পছন্দমতন একটি উপহার দেবো বলেই বলছি –

‘ছুঁয়ে ছুঁয়ে যেও অজস্র মেঘদল
পাঁজরে জমা করে উড়ে বেড়াবার ক্ষমতা,
যত্ন করে পাঠালাম তোমার আন্তর ভালোবাসা –
আমার ছোট্ট আকাশ - স্বাধীনতা !’..”

May 10, 2012

..'যদি ফিরিয়ে নিই দৃষ্টি'..

..'যদি ফিরিয়ে নিই দৃষ্টি'..

“..যদি ফিরিয়ে নিই দৃষ্টি
তোমার চুল – চোখ – নাক – ঠোঁট
বুক – পেট – কোমর – আঙুল থেকে
বলো – ফিরিয়ে দেবে লাউয়ের মাচায়
হঠাৎ বাতাসে তির তির করে কাঁপা
সবুজ ডগার মতো নিটোল
আমার প্রথম ভালো লাগা !

যদি ফিরিয়ে নিই দৃষ্টি
তোমার মেঘ – দিগন্ত – বেহালা – বকুল
পর্বত – বাগান – সমুদ্রতট – নক্ষত্রবীথি থেকে
বলো – ফিরিয়ে দেবে শুধু অধরের কাছে
সতীত্ব হারানো নিষ্কলঙ্ক আমার ওষ্ঠের
সেদিন শ্রাবণস্নাত সন্ধ্যায় তোমার দু’ঠোঁটে
প্রথম আত্মসমর্পণ এবং প্রথম কেঁপে ওঠা !

যদি ফিরিয়ে নিই দৃষ্টি
তোমার অরণ্য – মেঠোপথ – কৃষিজমি – ধানক্ষেত
অন্ধগলি – রাজপথ – টানা বারান্দা – খোলা ছাদ থেকে
বলো – ফিরিয়ে দেবে শূন্যে ছুঁড়ে দেয়া ছোট্ট শিশুর
কোলে এসে পড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে দেয়া
প্রাণোচ্ছল হাসির মতো সহজাত
তোমার ভেতরে প্রথম প্রবেশ এবং
আমার প্রথম হারিয়ে যাওয়া !

যদি ফিরিয়ে নিই দৃষ্টি
তোমার ঘোমটা-টানা রহস্যময়
মোমের আলোয় স্নিগ্ধ,
ক্ষয়িষ্ণু বাহ্যিকতা থেকে
বলো – ফিরিয়ে দেবে;

বলো – ফিরিয়ে দেবে তোমার প্রথম আশ্বাস
আমি প্রতিজ্ঞা করছি – ফিরিয়ে নেবো দৃষ্টি
শুধু একবার বলো – আমাদের চুম্বনে
ঝরবে শুধু নিঃস্বার্থ আহ্বান;
সেখানে থাকবে না কোন দীর্ঘশ্বাস !..”

May 02, 2012

..‘এলোমেলো ১ - ৫’..

..‘এলোমেলো ১ - ৫’..

..‘এলোমেলো-১’..

“..শুনলাম তুমি নাকি তারা হয়েছো
নষ্ট মেঘেদের আকাশে;
অতৃপ্ত ছিল আমার ছোট্ট আকাশের চাঁদ
আমি বুঝলাম অবশেষে!..’’

..‘এলোমেলো-২’..

“..বুকে ব্যাথা হলেই
আমার কথা মনে পড়ে তোর,
ফুচকাতে ঝাল; নাকি শুন্যতা আমার?
বুঝিনা কার বেশি জোর!..’’

..‘এলোমেলো-৩’..

“..আমার ঠোঁটেই হয় যেন শুধু
তোমার অশ্রু বর্ষণ;
বিজ্ঞান বুঝি না, শুধু বুঝি –
এটাই মাধ্যাকর্ষণ!..’’

..‘এলোমেলো-৪’..

“..‘চাই তোমাকে সিগারেটের মতো’
শুনে গিয়েছ রেগে;
বোঝনিতো তুমি, বলতে চেয়েছি –
‘চাই তোমাকে ঠোঁটে’!..’’

..‘এলোমেলো-৫’..

“..বুঝিনি প্রথমে – তোর চোখের কাজল
কেন লাগালি আমার ঠোঁটে?
বুঝলাম পরে, বললি যখন –
‘যাতে নজর না দেয় লোকে’!..’’

May 01, 2012

..'আমার ভেতরে কাঁদে অন্ধ সুন্দর এক'..

..'আমার ভেতরে কাঁদে অন্ধ সুন্দর এক'..

".. আমার ভেতরে কাঁদে অন্ধ সুন্দর এক
কাঁদে নিরবে, কাঁদে নিভৃতে
আমার বাহির কেঁপে ওঠে থরোথরো
তাদের কান্নায়, জড়োসড়ো
আমার আন্তর অনুভূতি জেগে ওঠে
ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরিত
লাভা হয়ে ছড়ায় স্তবকে স্তবকে!

আকাশ আমার
বেদনায় নীল আকাশে-মননে
দৃষ্টি আমার
আদ্রতায় ঝাপসা দহনে-কম্পনে

তোমাদের সুন্দর রক্তাক্ত করে
প্রতিনিয়ত আমার ভেতরে;
প্রতিনিয়ত আমার ভেতরে
তোমাদের সুন্দর রক্তাক্ত করে

মেঘেদের গ্রিনরুমের পেছনে
যখন সাজগোছে ব্যাস্ত আমার স্নিগ্ধ চাঁদ
অজস্র চোখ ধাঁধানো আলোক তোমাদের
তাকে বিবস্ত্র করে ফাঁসিতে ঝোলায়;

সবুজ প্রান্তরের আঁচলে
যখন একটি একটি ফুল, পাতা ঝরে
অমল এক পুষ্পার্ঘ্য তৈরি করে
দুর্বিনীত তোমাদের কাঁটাওয়ালা লতা
তাদের কণ্ঠনালী চেপে ধরে;

আমার চাঁদ ফ্যাকাসে, নিথর – ঝুলে আছে বিবস্ত্র
চোখে নিয়ে অসমাপ্ত কাজল
আমার ফুল স্তম্ভিত, নিষ্প্রাণ – পড়ে আছে এলোমেলো
অধরে নিয়ে আঁচড়ের শতদল!

তোমাদের সুন্দর উদ্ধত, হিংস্র প্রতিফলনে সর্বগ্রাসীতা
সুন্দর আমার সত্য, আরাধ্য নিনীষায় বিমূর্ততা!

তোমাদের সুন্দর রক্তাক্ত করে –

কাঁদে নিরবে, কাঁদে নিভৃতে
কাঁদে অন্ধ সুন্দর এক আমার ভেতরে;
সুন্দর আমার রক্তাক্ত হয়ে কাঁদে -
যখন কুৎসিতকে ডাকো ‘সুন্দর’ নাম ধরে!.."

April 25, 2012

..'স্তোত্র'..

প্রসঙ্গঃ সংগীত


“.. বর্তমান বাংলা সংস্কৃতির একটি দ্রুত বর্ধনশীল এবং পচনশীল পণ্যের নাম সঙ্গীত.. প্রতি মুহূর্তে ঘড়ির কাঁটার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সঙ্গীত, সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার, গীতিকার এবং প্রযোজনাসংস্থা.. ঐশ্বরিক ক্ষমতাবলে আমাদের প্রায় অধিকাংশ জনসংখ্যাই মন করেন তারা অসাধারণ গান করতে পারেন.. এদের মধ্যে বেশ কিছু সংখ্যক গায়ক/গায়িকা আবার ভয়ংকর মেধাবী কেননা তারা নাকি আধাঘণ্টায় ৬-৭ টি নতুন গান কণ্ঠে তুলে recording ও করছেন প্রতিনিয়ত (উস্তাদ বড় গুলাম আলীর একটা concert এ শুনেছিলাম চুপকে চুপকে রাত দিনগানটি কণ্ঠে তুলতে তার নাকি কয়েক মাস লেগেছিলো আর আমাদের শিল্পীদের মাত্র এক ঘণ্টাই যথেষ্ট একটি আস্ত অ্যালবাম বের করে ফেলার জন্য)! কারো কারো নামের সাথে উপস্থাপক/উপস্থাপিকা যখন তাদের যোগ্য(!) বিশেষণ সমূহ মিনিটব্যাপী বলে অবশেষে তার নাম বলে-খুব অবাক হই; এতো গুনী একজন শিল্পী অথচ তার নাম আগে কখনো শুনলাম না, এটা কি করে হয়!

দুর্ভাগ্যবশত, আমার গলায় সুর নেই কিন্তু শ্রবনে সুর আছে.. তাই বেসুরো কোনো গান শোনামাত্রই আমার প্রচণ্ড কষ্ট হয়, দম বন্ধ হয়ে আসে চারপাশ ঝাপসা দেখতে থাকি এবং তলপেটে প্রচণ্ড চাপ অনুভব করতে থাকি, পাগলের মতো এদিক ওদিক খুঁজে বেড়াই BATHROOM: জলবিয়োগের জন্য (সঠিক জায়গায় সঠিক জিনিসটি ফেলার ইচ্ছে আমাদের অনেকের থাকলেও সামর্থ্য আমাদের অনেকেরই থাকেনা)..

আমি বাজি ধরে বলতে পারি এদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক জন বলতে পারবে সা, রে, গা, মা, পা, ধা, নি- শব্দগুলোর Elaboration কী? এবং খুব কম সংখ্যক জন বলতে পারবে শুদ্ধ শ্রুতি এবং বিকৃত শ্রুতি কয়টি? এবং খুব কম সংখ্যক জন বলতে পারবে যেসব জনপ্রিয় গানগুলো মঞ্চে গেয়ে তারা আজ ভুলবশত জনপ্রিয় সেসব গানের গীতিকার এবং সুরকার কারা?

অসংখ্য সঙ্গীতানুষ্ঠানে আমি গাইতে শুনেছি – ‘ও আমার দরদী আগে জানলে’, ‘আমার হাড় কালা করলামরে’, ‘প্রাণ সখীরে ওই শোন ওই কদম্বতলে’, ‘আমায় ভাসাইলিরে, আমায় ডুবাইলিরে’, ‘আমায় এতো রাতে কেনে ডাক দিলিইত্যাদি অসাধারন গানগুলো যেগুলো লিখেছেন কবি জসিম উদ্দীন এবং সুর করেছেন আব্বাসউদ্দিন কিন্তু গায়ক/গায়িকা এমনকি প্রযোজনাসংস্থাগুলো cassette/cd- এর গায়ে কথা ও সুর-সংগ্রহবলে চালিয়ে দিচ্ছে!
..ফলাফল হিসেবে আমাদের next generation এমন অজস্র অসাধারণ মোহময় গানের গীতিকার এবং সুরকার সম্পর্কে কিছুই জানতে পারছেনা এবং অনেকেই মনে করছে এগুলো এইসব ব্যাঙকণ্ঠা/ব্যাঙকণ্ঠী গায়ক/গায়িকাদেরই সৃষ্টি..

যথাযথ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক এইসব গায়ক/গায়িকা এবং প্রযোজনাসংস্থাগুলোর জন্য আমরা এখন শুধু একটা কাজই করতে পারি আর তা হচ্ছে –‘সংগৃহীতবিভিন্ন ডালপালা দিয়ে তাদের শরীরের বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন নকশা সংগ্রহকরে দেওয়া যাতে করে ভবিষ্যতে তারা সত্যি সত্যি আসল নামগুলো সংগ্রহকরে ঠিকমতো প্রকাশ করতে পারে..

প্রসঙ্গঃ লিঙ্গ বৈষম্য

..লিঙ্গ বৈষম্য (Gender Discrimination) আমাদের সমাজে ঐ সকল ব্যাধিগুলোর মধ্যে অন্যতম যেগুলো আমরা উত্তরাধিকারসূত্রে আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছে থেকে পেয়েছি, লালন করছি এবং ধারণ করছি..পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই এ ব্যাধি কম-বেশী রয়েছে তবে আমাদের মতো যেসকল দেশ ধর্মের অপব্যাখ্যায় এবং Certificate শিক্ষায় বিশ্বাসী, এ ব্যাধি সেসকল দেশে সূর্যের মতোই ধ্রুব!

অনেকেই মনে করেন লিঙ্গ বৈষম্য কেবলমাত্র গ্রামাঞ্চলে রয়েছে, শহরে নেই..ধারণাটি সম্পূর্ণ সঠিক নয়..নিরক্ষর লোকেরা তাদের উচ্ছ্বাস, আবেগ, দুঃখ, ঘৃণা ইত্যাদি উন্মুক্ত এবং প্রকট ভাবে প্রকাশ করে অভ্যস্ত কিন্তু শিক্ষিতরা এসব বিষয়ে শৈল্পিক ভাবে মুখোশধারী..তাই আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে শহরে এ ব্যাধিটি অনুপস্থিত কিন্তু বাস্তবে তা নয়..এ ব্যাধিটির প্রাথমিক কারণগুলো হচ্ছে ধর্মীয় অপব্যাখ্যা, প্রথাগত সামাজিক বিধিনিষেধ, অশিক্ষা এবং মানসিকতা..

একটু ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে যে, এই কারণগুলো একটি অপরটির সাথে সম্পর্কিত এবং এগুলোর মধ্যেই এ ব্যাধি থেকে মুক্তির পথ রয়েছে..যেমন ধর্মীয় বিধিগুলোর অপব্যাখ্যাই কালক্রমে সামাজিক বিধিনিষেধে রূপান্তরিত হয় যার ফলে শিক্ষিত লোকেরা অশিক্ষিত মানুষের মতো মানসিকতা নিয়ে এ ব্যাধিটিকে চারাগাছ থেকে বট বৃক্ষে রূপান্তরিত করছে.. ফলাফল হিসেবে সাম্প্রতিক Dhaka University এর International Relations department এর madam রুমানা মঞ্জুরের BUET engineer স্বামী সাইদ হাসানের দ্বারা পাশবিক ভাবে নির্যাতিত হবার ঘটনাটি উল্লেখযোগ্য..

একজন BUET engineer স্বামী যেকোনো বঙ্গীয় ললনারই আরাধ্য কিন্তু একজন সাইদ হাসান কি আরাধ্য? Answerটি অবশ্যই negative হবে..তার মানে হচ্ছে শিক্ষিত মানুষ নয়, প্রয়োজন হচ্ছে শিক্ষিত মানসিকতা কেননা Certificateধারী মুক্তিযোদ্ধায় যেমন দেশ ছেয়ে গেছে ঠিক তেমনি দেশ ভরে গেছে Certificateধারী শিক্ষিত মানুষে যাদের মানসিকতা এখনো Amazon এর গহীন অরন্যের থেকেও অনেক বেশী অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং নানা রকমের বন্য পশুর পায়ের ছাপে পরিপূর্ণ!..

২০১১ সালে বসবাস করেও এখনো আমরা কোনো মহিলাকে গাড়ি চালাতে দেখে চোখ কপালে তুলে ফেলি আর যদি কোনো মহিলা motor cycle চালিয়ে সামনে দিয়ে যায় তবে তো কথাই নেই! আমাদের ভাবটা তখন এমন হয় যে- এইমাত্র ঐ মহিলা মঙ্গল গ্রহ থেকে land করলো!

যে দেশের প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী সবাই মহিলা, সেই দেশে লিঙ্গ বৈষম্য অকল্পনীয় কিন্তু যে যে দেশের public bus এ মহিলাদের জন্য সুনির্দিষ্ট আসনের ব্যবস্থা রয়েছে সে দেশে লিঙ্গ বৈষম্য থাকবে এটাই কি স্বাভাবিক নয়? এখনো কি আমাদের সমাজে অনেক পুরুষেরা মনে করেন না যে সমাজটা তাদের, তাদের অর্ধাঙ্গীরা তাদের ভোগ্যপণ্য, তাদের মেয়েদের একটি ভালো জায়গায় বিয়ে দিতে পারাই তাদের জীবনের অন্যতম পরম লক্ষ্য?

লিঙ্গ বৈষম্য থেকে মুক্তির একটিই পথ আর তা হচ্ছে মানসিকতার পরিবর্তন যেটি কেবলমাত্র আসতে পারে সুশিক্ষার দ্বারা..তবে মনে রাখতে হবে শিক্ষার উদ্দেশ্য হতে হবে নিজের মধ্যে একটি ছাঁকনি তৈরি করা যা গ্রহণ করবে শুধুই বিশুদ্ধকে এবং বর্জন করবে সকল দূষিতকে..কারণ এটি সকলেরই জানা আছে যে, Certificateধারী শিক্ষিতরা শুধু গলা উঁচু করে বলতে পারে কিন্তু মানতে পারেনা- নারী-পুরুষ সবাই সমানকিন্তু ছাঁকনিধারী শিক্ষিতরা এটি শুধু জানে তাই নয়; মানে এবং ধারণও করে; আর এই ধারণ করাই হওয়া উচিৎ আলোকিত সমাজের একমাত্র ধর্ম!..

 প্রসঙ্গঃ বৃষ্টি

“..আমার দেশের যেসকল জিনিস আমার অত্যন্ত পছন্দের, এগুলোর মধ্যে বৃষ্টি অন্যতম..একটা সময় ছিলো যখন বৃষ্টি হলেই আমি বৃষ্টিতে ভিজতাম; সেটা হোক দিন কিংবা রাত!

বৃষ্টির একটা ভয়ঙ্কর সুন্দর ছন্দ আছে যা আমার মনোযোগ কেড়ে নিতে পারে চোখের পলকে, বৃষ্টি একটা অদ্ভুত সুন্দর গন্ধ আছে যা আমি অজস্রবার বোতলে ভরে রেখে দিতে চেয়েছি, বৃষ্টির একটা তীব্র কোমল স্পর্শ রয়েছে যা আমি খুঁজে ফিরেছি অসংখ্য আদর্শ আঙ্গুলে; কিন্তু ব্যর্থ হয়েছি প্রতিবার!..

বৃষ্টির একটা তীক্ষ্ণ সম্মোহনী ক্ষমতা রয়েছে- যে অপেক্ষা করতে চায়, তাকে অপেক্ষায় রাখার এবং যে চলে যেতে চায় তাকে চলতে দেবার..বৃষ্টিতে চারপাশ বাগান হয়ে যায়বিশ্বাস জন্মে যায় পৌরাণিকতায়..শুনেছি, স্বাধীনতার পর অনেক পাকিস্তানী বাদক এবং উস্তাদরা আমাদের দেশ ছেড়ে যেতে চাননি পাকিস্তানে বৃষ্টি হয় না বলে!..

বৃষ্টি আমাদের ভেতরে একটা চঞ্চল শূন্যতা তৈরি করে, ফোঁটায় ফোঁটায় খনন করে গভীর কুয়া যেখানে অসংখ্য স্মৃতি স্থবির জলের মতো পড়ে থাকা অবস্থায় বৃষ্টির ফোঁটায় আবার প্রাণ ফিরে পায়, প্রতিধ্বনিত হয়..হঠাৎ করে স্কুল এ বেজে উঠা ছুটির ঘণ্টার মত বৃষ্টির শব্দ ছুটি দেয় আমাদের- পরাধীন ভাবনাগুলো থেকে, দায়িত্বগুলো থেকে..বৃষ্টি মনে করিয়ে দেয় কচি বাঁশপাতার মতো বড় অগোছালো অপরিচিতার চোখগুলোকে, হুড টেনে রিকশায় খুব কাছাকাছি বসা একজোড়া কদমফুলকে, আভিজাত্য আর নিরাপত্তার অভাবে বারান্দায় আধভেজা Money-plant এর দ্বিধা থরথর পাতা..বৃষ্টি চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় রিকশাওয়ালার পিঠে পিস্টনের শক্তি, নোংরা টোকাই ছেলেটার ফোকলা দাঁতের ভয়ঙ্কর মিষ্টি হাসি, নির্দয় এবং রাগী মানুষটার চোখেও স্মৃতির diaryর পাতা উল্টানোর কাঁপন!

বৃষ্টি আমাকে সবসময় আন্দোলিত করেছে, উৎসাহ দিয়েছে এবং কাছে টেনেছে কিন্তু আজকাল বৃষ্টি দেখলে আমার খুব দুশ্চিন্তা হয়, ভয় হয়, পলকহীন চোখেও আমি একটা দৃশ্য কল্পনা করতে পারি.. আমার এ কল্পনার জন্য আমি এখন আর বৃষ্টিতে ভিজতে পারিনা বৃষ্টিতে ভিজছে এমন কারো দিকেও তাকাতে পারিনা..

তাই বৃষ্টি শুরু হলেই আমি দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাই এবং গভীরভাবে কঠিন কোনো কিছু নিয়ে ভাবতে শুরু করি আর তা না হলে আমি কল্পনায় দেখতে পাই - 

অসম্ভব সুন্দর বৃষ্টিধারায় প্রান খুলে চেনা-অচেনা হাজার হাজার মানুষ ভিজছে, ভিজছি আমি, তাদের আনন্দধ্বনির সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বৃষ্টির বেগ..স্নাত করছে, ধুয়ে দিচ্ছে আমাদের ভালোবাসায় মাখা, পাপ দিয়ে ঢাকা শরীর.. বৃষ্টির ধারা একটু একটু করে মুছে দিচ্ছে পাপের আস্তরণ..নিষ্পাপ আমরা আরো শুভ্র, আরো সুন্দর.. বৃষ্টির ধারা একটু একটু করে খুলে ফেলছে ভালোবাসার পরত.. একটু একটু করে উঁকি দিচ্ছে বুকের মধ্যে রেখে দেওয়া আমাদের চিন্তা- ভাবনার আয়না!..

কী জঘন্য, কী পাশবিক, কী হিংস্র, কী অন্ধকারাচ্ছন্ন আমাদের চিন্তা- ভাবনাগুলো! আমরা একে অপরের আয়নার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠছি, ছুটে পালিয়ে যেতে চাইছি আমাদের ভাবনার প্রতিফলন দেখে!

আয়নাতে দেখা এই কুৎসিত, অমানবিক সব কিছুই দেখিয়ে দিচ্ছে আমাদের ভেতরটাকে, আমাদেরকে!...

আমি আবার আগের মতো ভিজতে চাই

বৃষ্টি, তুমি শুধু ধুয়ে দাও ঐ পাপের আস্তরণ আর একবার শুধু চোখ ভরে দেখতে দাও ঐ ভালোবাসার পরত, সত্যি বলছি-প্রতিটি মানুষের ভেতরটা হয়ে যাবে তোমার মত-ই পবিত্র, সূর্যালোকের মতো উদ্ভাসিত, যেখানে স্থান হবেনা কোনো আঁধারের, কোনো কুৎসিতের!..

প্রসঙ্গঃ তরুন প্রজন্মের খাদ্যাভ্যাস 

"..ঢাকা শহরের অধিকাংশ ছেলে মেয়েদের পছন্দের খাবার তালিকা শুরু এবং শেষ হয় বিভিন্ন ধরনের Fast Food Items দিয়ে..এগুলোর মধ্যে কিছু নাম থাকে দেশীয় খাবারের যেগুলো তালিকাটিকে কিছুটা exceptional করে তোলার জন্য যদিও সেগুলো খেতে তারা মোটেও প্রকৃত অর্থে আগ্রহী নয়..এই পছন্দের খাবারগুলোর বেশীরভাগই chicken related.. এবং তাই রাস্তাঘাট, অলিগলি, স্কুল কলেজ এর সামনে একটুখানি খোলা জায়গাও রূপান্তরিত হচ্ছে Fast Food Shop এ.. 

এই Fast Food প্রিয়তার কারন অনেকের কাছেই সময় বাঁচানো’..

এইভাবে প্রচুর পরিমানের Poultry Chicken খাওয়ার result হিসেবে এইসব ছেলেমেয়েগুলোও অর্জন করছে Poultry Chicken এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য..একটু জ্বর হলেই টানা ৬-৭ দিন অসুস্থ থাকছে, একটু পরিশ্রম করলেই তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ছে এবং দিন দিন তারা নিজেদের ভয়ঙ্কর ভাবে অল্প কিছু জায়গাতে সীমাবদ্ধ করে ফেলছে..

সরিষার তেল দিয়ে মাখা পোড়া মরিচ দিয়ে আলুভর্তা, মাসকলাই এর ঘন ডাল, লাউ ডগার সাথে আলু, ঝোল ঝোল করা পুইঁশাক, তেলে ভাজা পাটশাক, কাঁঠালের বিচি দিয়ে পালংশাক, গরম ভাতের সাথে ঘিয়ে ভাজা কুমড়া ফুল, বরবটির সাথে শিং মাছের ঝোল কখনোই তারা খেয়ে দেখেনি তারা জানেনা এইসব খাবারের স্বাদ চোখ বন্ধ করে দিতে পারে তৃপ্তিতে অনায়াসে; মুহূর্তের মধ্যে উপলব্ধি করাতে পারে বাংলার ভেঁজা মাটির গন্ধ, মৃদু বাতাসে তিরতির করে কাঁপা কচি বাঁশপাতার গজল, সুদূর থেকে ভেসে আসা চঞ্চল বাছুরের বিরামহীন ডাক আর আমাদের সংস্কৃতির সবুজ শেকড়-কে..

স্বাস্থ্য-সম্মতশব্দটির ভুল প্রয়োগে তারা অবহেলা করে যাচ্ছে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য গুলোকে..তাদের কাছে দুধ খেতে ভাল লাগেনা কিন্তু Coke ভালো লাগে, শুঁটকির ভর্তা ভালো লাগেনা কিন্তু Coleslaw ভালো লাগে..Pizza, Burger, Hotdog, Sandwich, Pastry, Roll তাদের খুব ভালো লাগে কিন্তু ভালো লাগেনা পাটিসাপটা, চিতই, নকশীকাঁটা পিঠা; ভালো লাগেনা মুড়ির মোয়া, নিমকি, খেজুরের রস..

এসকল দেশীয় খাবারের নাম অনেকের কাছেই জঘন্য, বিরক্তিকর, খ্যাঁত এবং Unsmart লাগতে পারে.. পশ্চিমা দেশগুলোর আবিষ্কার এইসব Fast Food Item গুলোকে যে একেবারেই খাওয়া যাবেনা তা কিন্তু নয়; মাঝে মাঝে অবশ্যই খাওয়া যেতে পারে..কিন্তু যে হারে এসব খাওয়ার প্রবণতা এবং দেশীয় খাবার ঘৃণা করার প্রবণতা বাড়ছে- এতে করে একটি কথাই সবাইকে মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে, এসব দেশীয় খাবার আমাদের সংস্কৃতির-ই অংশ..Fast Food Item গুলো নয় এবং আমার মা দেখতে যতই খারাপ হোক না কেন; আমার কাছে সে-ই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর এবং মমতাময়ী!..

প্রসঙ্গঃ হরতাল

“..আজ ০৫.০৬.১১ সারাদেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ছিলো.. শক্তিশালী বিরোধীদলগুলো তাদের রাজনৈতিক অধিকার আদায় এবং শক্তি প্রদর্শন উপলক্ষে হরতাল ডেকেছিল সারাদেশ জুড়ে.. বাংলা সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে এই হরতাল এর কারণে বন্ধ ছিলো দেশের প্রায় সকল school, college, university. বন্ধ ছিলো multinational company গুলোর urgent meetings .. কোটি কোটি টাকার লেনদেন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সিংহভাগের উৎস- অসংখ্য পোশাক শিল্প, বন্ধ ছিলো অভিজাত হোটেলগুলো, রঙিন পানশালা, ধনকুবেরদের দামী গাড়িগুলোর চাকা, উন্নত দেশগুলোর সাথে আমাদের দরিদ্র দেশের দুপক্ষীয় চুক্তি, চাবি দেওয়া বুদ্ধিজীবীগুলোর মতবিনিময় সভা, রাজধানী ঢাকা থেকে অন্যান্য বিভাগে যাতায়াত করা highway গুলোতে সদাব্যস্ত Bus, Truck গুলোও বন্ধ ছিলো..

কিন্ত বন্ধ ছিলোনা ছোট ছোট স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে জ্ঞান আহরণের ইচ্ছে, বন্ধ ছিলোনা তাদের মনের ভিতর জ্ঞানালোক প্রবেশের জানালা, বন্ধ ছিলোনা আস্তাকুঁড় থেকে টোকাই ছেলেমেয়েগুলোর খাবার খোঁজার প্রয়াস, বন্ধ ছিলোনা রাস্তার ধারে বসবাস করা ভিখারি রোগা শিশুটির ক্ষুধার্ত কান্না, বন্ধ ছিলোনা সন্তানের ঘরে ফেরার পথ চেয়ে উৎকণ্ঠায় থাকা মায়ের প্রতীক্ষা, বন্ধ ছিলোনা সরকারী অফিসের ছাপোষা বৃদ্ধ পিয়নটির ভাঙা সাইকেলটির দুটি চাকা, বন্ধ ছিলোনা সদ্য প্রেমে পড়া তরুণীটির স্বপ্ন দেখা- তার স্বপ্নের মানুষটিকে সাথে নিয়ে রিকশায় ঘুরে বেড়ানোর নরম, স্নিগ্ধ স্বপ্ন, বন্ধ ছিলোনা কলেজ পড়ুয়া মেয়েটির Close Up-1 তারকা হবার স্বপ্নে আবিষ্ট, হারমোনিয়ামে ছুটে বেড়ানো তার শুভ্র আঙ্গুলগুলো, বন্ধ ছিলোনা সদ্য শেষ হওয়া H.S.C. পরীক্ষার্থীদের ভর্তিযুদ্ধ নিয়ে দুশ্চিন্তা, বন্ধ ছিলোনা photographer হবার কল্পনায় বিভোর কিশোর ছেলেটির mobile phone এর camera এর shutter,বন্ধ ছিলোনা ৮ সদস্য বিশিষ্ট নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারটির কর্তার মাথায় সারামাস পরিবার কিভাবে চলবে তার দুশ্চিন্তা, বন্ধ ছিল না কাক, চড়ুই, দোয়েল, কোকিল, শ্যামা, মোরগ-মুরগির ডাক, গাছ থেকে পাতাদের ঝরে পড়া, রাস্তায় বাতাসের সাথে ধুলোর উড়ে আসা, প্রচণ্ড রোদের দাবদাহের ফাঁকে হঠাৎ একটু শীতল হাওয়া বওয়া, বন্ধু হতে চেয়ে ভীত, সলজ্জ SMS পাঠানো; বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেওয়া সহপাঠিনীর mobile এ..

বন্ধ ছিলোনা অজস্র ছোট ছোট হাতের মুঠোতে বিশাল, সুবিশালকে ধরে রাখার আমৃত্যু অভিলাষ..

বন্ধ ছিলোনা বছরের অধিকাংশ দিন জলে ডুবে থাকা চোখগুলোতে সম্ভাবনাপূর্ণ ভবিষ্যতের কথা ভেবে জেগে উঠা হঠাৎ আলোর ঝলকানি..

..তাহলে এসব হরতাল কি বন্ধ করছে?..

.. এসব হরতাল আসলে একটু একটু করে বন্ধ করে দিচ্ছে রাজনীতিবিদদের প্রতি তরুণ প্রজন্মের আস্থা অর্জনের পথ, অন্ধ বিশ্বাসে তাদের প্রতি খুলে রাখা- অপেক্ষারত আমাদের কাজল-কালো চোখ, চক্রাকারে সেই চির-পরিচিত দলগুলোর সিংহাসনে আরোহণের সম্ভাবনা এবং একই মুখোশ পরে বারবার যেমন খুশী তেমন সাজোপ্রতিযোগিতায় বিজয়ী হবার নিশ্চয়তা!..

প্রসঙ্গঃ নামকরণ 

“.. গর্ব করার মতো বাঙ্গালীর কোনো কিছুই নেই শুধুমাত্র বাংলা ভাষা ছাড়া। ভাষা আন্দোলনের ৬০ বছর পার হয়ে গেলেও কোনো এক অদৃশ্য কারনে নবজাতকদের নাম এখনো আরবিতে রাখা হচ্ছে (৪০% মেয়ের নাম ‘জান্নাতুল ফেরদৌস’)। শিশুটি যখন বড় হচ্ছে, তার নামের অর্থ জিজ্ঞাসা করা হলে সে কিন্তু তখন নামটির বাংলা অর্থই বলছে!

কেনো তাহলে এই আরবি নাম রাখা? - হয়তোবা সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের জন্য যা প্রমাণ করে আমরা কতোটা লোভী (আরবি নামের উছিলায় সওয়াব কামাব এই আশায়) এবং অলস (ইবাদাত না করেও সওয়াব কামাব এই আশায়)!

গত কয়েক বছর ধরে আবার কারও কারও নাম রাখা হচ্ছে হিন্দি সিরিয়াল, মুভি, গান থেকে আগত কিছু হিন্দি শব্দে। যা প্রমান করে সৃজনশীলতা বলতে আমাদের কিছু নেই এবং আমরা শুধু অন্যের প্রেমেই পড়তে জানি।

২১শে ফেব্রুয়ারী এলেই গলার রগ ফুলিয়ে, বুকের রক্ত ঢেলে দেবার সুযোগ পাচ্ছি না তাই মুখের লালা ঝরিয়ে, উচ্চ মাধ্যমিক ভাষণ দিয়ে আমরা একেকজন ভাষা শহিদদের বংশধর হয়ে যাই; অতঃপর ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে ধর্মের সানগ্লাস চোখে দিয়ে আড়চোখে পান করি হিন্দি সংস্কৃতি, মাংসের দোকান, আকাঙ্ক্ষিত অশ্লীলতা ।

আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম-ও কি বয়ে বেড়াবে আমাদের অজানিত শ্রদ্ধা – আরবি নাম? আমাদের পরশ্রীকাতর ভাল লাগা – হিন্দি নাম? আর অবহেলায় শুধু অভিধানে পড়ে থাকবে আমাদের ভালবাসা – বাংলা নাম?

জাতি হিসেবে আসলেই কী আমরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছি নাকি আধুনিকতার আলো পেছনে রেখে শুধুই দীর্ঘতর হচ্ছে আমাদের দুর্বল, অপুষ্ট, ভীত, বেখাপ্পা জাতির কম্পমান ছায়া?

বাংলা ভাষায় অজস্র সুন্দর শব্দ রয়েছে যেগুলো পৃথিবীর যেকোনো ভাষার শব্দ থেকে কোটিগুণ সুন্দর, অর্থপূর্ণ এবং ছন্দময়। আমরা কি পারিনা আমাদের লোভ এবং পরশ্রীকাতরতাকে ছুড়ে ফেলে পরবর্তী প্রজন্মের নামের মধ্য দিয়ে আমাদের বাংলার রুপ, রস, গন্ধ, সৌন্দর্যকে ছড়িয়ে দিয়ে আমাদের নোংরা মানসিকতাকে স্নাত করাতে? ..”

প্রসঙ্গঃ বই পড়া

‘’..আমার পছন্দের মানুষের তালিকাটি বেশ দীর্ঘ কিন্তু তাদেরকে দেবার মতো উপহারের তালিকাটি বেশ ক্ষুদ্র ..

আমার বাবা যদি শুধু আমার ‘বাবা’ হতেন, তাহলে হয়তো আমি তাকে শুভ্র পাঞ্জাবী বা জায়নামাজ বা Body spray বা Wrist watch দিতাম।

আমার মা যদি শুধু আমার ‘মা’ হতেন, তাহলে হয়তো আমি তাকে মৃদু রঙের শাড়ি বা স্কার্ফ বা জায়নামাজ বা আকর্ষণীয় পান রাখার পাত্র দিতাম।

আমার ভাই-বোন যদি শুধু আমার ‘ভাই-বোন’ হতো, তাহলে হয়তো আমি তাদের Latest model এর Mobile Phone বা Music Player দিতাম।

আমার Student রা যদি শুধু আমার ‘Students’হতো, তাহলে হয়তো আমি তাদের tasty Chocolates বা Showpiece দিতাম।

আমার Colleague রা যদি শুধু আমার ‘Colleagues’ হতো, তাহলে হয়তো আমি তাদের Body spray বা Chocolates বা Lighter দিতাম।

বাকি রইলে তুমি। তুমি যদি শুধু ‘তুমি’ হতে, তাহলে হয়তো তোমাকে স্তব্ধ রাতের মতো কাজল বা রঙধনুর মতো বিভিন্ন বর্ণের চুড়ি বাঁ বিস্তীর্ণ প্রান্তরের মতো, আমার দেশের তাঁতিদের সহজ-সরল মানসিকতার মতো স্নিগ্ধ শাড়ি দিতাম।

কিন্তু এরা কেউই তাদের চারপাশের মানুষের কাছে শুধুমাত্র এই পরিচয়গুলোতে সীমাবদ্ধ নয়, তাই তারা আমার কাছে এই এই পরিচয়গুলো থেকেও অনেক বেশি কিছু। আমার অনেক ইচ্ছে এরা এই পরিচয়ের সীমাবদ্ধতা থেকে বের হয়ে আসুক এবং তাদের চারপাশের কাছে এরা পরিচিত হোক শুধুমাত্র একটি মানুষ হিসেবে নয়; একটি পৃথিবী হিসেবে।

আমি তাদেরকে গুচ্ছ গুচ্ছ তারকারাজির মতো, অসংখ্য আদিগন্ত ঝাউবনের মতো প্রচুর বই দিতে চাই। কারন একমাত্র বই-ই পারে একজন মানুষকে একটি পৃথিবীতে রূপান্তরিত করতে। একমাত্র বই-ই আমাদের শেখাতে পারে বাদল ধারার মতো কাঁদতে, পাখির মত প্রকৃত গান গাইতে , আগ্নেয়গিরির মতো ফেটে পড়তে, ভোরের আকাশের মতো অজ্ঞতার আঁধারে ডুবে থাকা মানসিকতায় দ্যুতি ছড়াতে, পাহাড়ের মতো দৃঢ় হতে, ঢেউ এর মতো ছান্দসিক হতে, আকাশের মতো বিশাল হতে, মহাকাশের মতো ক্ষুধার্ত হতে এবং সৃষ্টির মতো সুন্দর হতে।

আমি চাই আমার প্রিয় মানুষগুলোর ভেতর হয়ে উঠুক উদ্ভাসিত, আমি চাই তারা এক একটি সম্পূর্ণ পৃথিবী হয়ে উঠুক, তারা জানুক- আমাদের দারিদ্র্য হচ্ছে আমাদের বাহ্যিকতা আর প্রাচুর্য হচ্ছে আমাদের আহরিত সুন্দর।

আমি চাই আমরা একসঙ্গে বলে উঠি – মিথ্যা বাহ্যিকতা আর নয়; এসো পূঁজি সুন্দরে’ আসুক চোখে জল!

বই পড়া হোক আমাদের অন্যতম অবসর – এই প্রত্যাশায়!..’’